Header Ads Widget

▶️ কাশ্মীরি মেয়ে ফরিদা। পর্ব-৬

                                     


                           পর্ব-৬ 

▶️ কাশ্মীরি মেয়ে ফরিদা। পর্ব-২

▶️ কাশ্মীরি মেয়ে ফরিদা। পর্ব-৩

▶️ কাশ্মীরি মেয়ে ফরিদা। পর্ব-৪

▶️ কাশ্মীরি মেয়ে ফরিদা। পর্ব-৫


এগিয়ে চলছে মিশন

১৯৯১ সালের আগস্ট পর্যন্ত বামনার আন্ডারগ্রাউন্ড সম্পর্কে এখওয়ানের আমীর এবং আমার পরিবারের সদস্যদের ব্যতীত না কারো জানা ছিল, না শাব্বীর আহমাদ বাট ছাড়া অন্য কারো ভেতরে ঢোকার অনুমতি ছিল। কিন্ত তার পর থেকে ধীরে-ধীরে বাছা-বাছা মুজাহিদদের এই আন্ডারগ্রাউন্ড সম্পর্কে অবহিত করাও শুরু হয় এবং ভেতরে প্রবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়। তবে সেখানকার অস্ত্রগুলো সম্পর্কে তাদেরও কিছু জানতে দেওয়া হয়নি। এই আন্ডারগ্রাউন্ডে অস্ত্র রাখার জন্য কিছু জায়গা আলাদা করে রাখা হয়েছিল। বাইরে থেকে অস্ত্র এনে সেখানে লুকিয়ে রাখা হতো এবং সেখান থেকে সরবরাহ করা হতো। অস্ত্রের এই আমদানি ও সরবরাহে নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল শাব্বির আহমাদ বাট-এর উপর।

জাভেদ শালাহ, আলতাফ খান ও মোহাম্মদ সিদ্দিক প্রমুখ এখন নিয়মিত এখানে আসা-যাওয়া করছে এবং এই আন্ডারগ্রাউন্ডে বসে জরুরী মিটিং করছে। আমার দায়িত্ব আপ-গ্রাউন্ডে। আন্ডারগ্রাউন্ডের কাজে আমার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড সম্পর্কে সম্যক অবগত এমন কোনো বিশিষ্ট মুজাহিদ গ্রেফতার হলে তার অধিকাংশ দায়-দায়িত্ব আমারই উপর বর্তায়। কেননা, অল্প সময়ের মধ্যে সবগুলো হাইড আউটে সংবাদ পৌছানো এবং সেসবের সামানপত্র স্থানান্তর করানো আমারই দায়িত্ব ছিল। যতক্ষণ না আমি নিশ্চিত হতাম, সব গোছগাছ হয়ে গেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অস্থির থাকতে হতো। এমন পরিস্থতিতে মুজাহিদদের প্রয়োজনাদি পূরণ করা, তাদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা এসব আমাকেই আঞ্জাম দিতে হতো। এসব করে আবার আঞ্জাম দিতে হতো নিজের পারিবারিক সব কাজকর্মও।

এতকিছু করা আমি একজন মহিলার পক্ষে দুরূহ হলেও না করে উপায় ছিল না। কখনও-কখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত বটে; কিন্তু তারপরও সব সহ্য করে নিতে হতো। আমাকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলত কিছু-কিছু মুজাহিদের খুঁটিনাটি বিষয়ে পারস্পরিক দ্বন্দু।

কেউ-কেউ মুজাহিদদের ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করত। মুজাহিদদের পারস্পরিক দ্বন্দের জন্য মূলত তারাই দায়ী। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দু, শাশুড়ি-বধূর ঝগড়া, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য ইত্যাদি ব্যাপারে প্রভাব খাটিয়ে কতিপয় মুজাহিদকে জড়িত করিয়ে তারা আযাদি আন্দোলনের যে-ক্ষতি করেছে, তার হিসাব নেই। কোনো-কোনো বন্দুকধারী অর্থের লোভে অস্ত্রের অপব্যবহার করেও আন্দোলনের অনেক ক্ষতি করেছে।

মানুষ যখন আমার নিকট অভিযোগ নিয়ে আসতে শুরু করে, অমুক 'মুজাহিদ' এটা করেছে, ওটা করেছে, ওদিকে গেছে, এদিকে এসেছে, অমুককে হুমকি দিয়েছে, অমুককে ভয় দেখিয়েছে; তো প্রত্যহ এ ধরনের অভিযোগ শুনে শুনে আমি পাগলের মতো হয়ে যেতে শুরু করি। আমাকে শুধু ইখওয়ানের সঙ্গে সম্পৃক্ত অস্ত্রের অপব্যবহারকারীদের ব্যাপারেই অভিযোগ শুনতে হতো না, অন্যান্য জিহাদি সংগঠনের অস্ত্রধারীদের অভিযোগেরও বিচার করতে হতো।

এক সংগঠনের মুজাহিদ আরেক সংগঠনের মুজাহিদদের সাইকেল নিয়ে গেছে। এ নালিশ আমার কাছে আসত। মুজাহিদদের পারস্পরিক দ্বন্দু-বিবাদ, মনোমালিন্য, বাদানুবাদ ও ভুল বোঝাবুঝি ইত্যাদির সমাধানও আমাকেই দিতে হতো। এ জাতীয় ঘটনা আমাকে সীমাহীন অস্থির করে তুলত। এসব কাজে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট হতে শুরু করে। এসব অভিযোগ-অনুযোগে আর কান দেব না বারবার সিদ্ধান্ত নিয়েও রেহাই পেলাম না। উল্লেখ্য, ব্যক্তি ও জাগতিক স্বার্থে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অস্ত্রের অপপ্রয়োগকারীদের তারা যে-সংগঠনেরই হোক আমি তাদের 'মুজাহিদ' বলি না, বলি 'বন্দুকধারী'। ওদের আমি 'মুজাহিদ' বলে বিশ্বাসই করি না। আমার মতে ওরা জিহাদ ও মুজাহিদদের জন্য কলংক।

কারণ, একজন মুজাহিদের সামনে একটি লক্ষ্য থাকে। যে-ব্যক্তি সেই লক্ষ্য থেকে সরে গেল, সে আর মুজাহিদ রইল না। এরূপ বন্দুকধারীদের আমি আমার বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দিলাম। আমি তাদের পরিষ্কার বলে দিলাম, তোমরা 'মুজাহিদ' পরিচয় ধারণ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছ। এখন আর তোমাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-১



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪


🌹 ধন্যবাদ 🌹

ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কেন্দ্রীয় আমীর হেলাল আহমাদ বেগ বিশেষ এক মিশনে সীমান্তের ওপারে রওনা হয়ে যান। তার রওনা হওয়ার পর আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। সীমান্তের ওপার থেকে কোনো খবর না আসা পর্যন্ত আমি অত্যন্ত অস্থিরতার মধ্যে কাটাই। হেলাল বেগ সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। আল্লাহ না করুন, যদি তারা পথে ধরা পড়ে যান! হেলালের পক্ষ থেকে কোনো খবর না আসা পর্যন্ত অস্থিরতা আমাকে অক্টোপাশের মতো জড়িয়ে রাখে।

হেলাল আহমাদ বেগ-এর পনেরো দিন পর আমার ছোট ভাই ফিরোজ গ্রেফতার হয়। ফিরোজ বামনার আন্ডারগ্রাউন্ডের সব জানে। তাই সাবধানতার খাতিরে সমস্ত অস্ত্র সাময়িকের জন্য অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হয়। কাজটা করা হয় রাতে অতি সতর্কতার সাথে। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় একশ' ভাগ। এতগুলো অস্ত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কাজের তত্ত্বাবধান পুরোপুরি আমাকেই করতে হয়, যাতে কোথাও কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। অস্ত্রের এ বিশাল ভাণ্ডার যাতে শত্রুর হাতে চলে না যায়, সেদিকে আমাকে পূর্ণ খেয়াল রাখতে হয়।

 ইন্টারোগেশন সেন্টারে ফিরোজ সত্যিকার অর্থেই আমার ভাই বলে প্রমাণিত হয়। পুলিশ তার থেকে কোনো তথ্যই উদ্ধার করতে পারেনি। সংগঠনের অস্ত্রের গুদাম তো দূরের কথা, তার নিজের রাইফেলটার ব্যাপারেও কোনো তথ্য সে দেয়নি। কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন আমার বাড়িতে কোনো হানা হলো না, তখন আমি নিশ্চিত হলাম, ফিরোজ টর্চারের পালা অতিক্রম করে গেছে। ঘটনার এক মাস পর অস্ত্রগুলো ধীরে-ধীরে আপন ঠিকানায় ফিরিয়ে আনলাম।

অস্ত্রের ডিপো - যার মধ্যে আছে গোলা-বারুদ, মাইন ও হ্যান্ডগ্রেনেড একস্থান থেকে অন্যস্থানে অপসারণ করা, তারপর পুনরায় পূর্বের স্থানে - নিয়ে আসা এক কঠিন কাজই বটে। কত কঠিন, তা সে-ই অনুমান করতে পারে, এর সঙ্গে যার সংশ্লিষ্টতা আছে। অবশেষে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের মীর লাসজানের পুত্র নাসরুল্লাহকে অপহরণ করে তার বিনিময়ে ফিরোজকে মুক্ত করে আনা হয়।

শেষ হয়ে গেল সব অর্জন

নটিপুরা থেকে বামনা হিজরত করার এক বছর পর ১৯৯২ সালের ২৪ ও ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে আমার বাড়িতে হানা হয়। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা থেকেই বামনার পুরো এলাকা চারদিক থেকে ঘিরে রাখা হয়। আমরা ধারণা করেছিলাম, বরাবরের মতো ক্র্যাকডাউনের প্রস্তুতি চলছে। বিগত এক বছরে এ এলাকায় অসংখ্যবার ক্র্যাকডাউন হয়েছে। অন্যান্য ঘরের মতো আমাদের ঘরও একাধিকবার তল্লাশি নেওয়া হয়েছে। কয়েকবার শুধু আমাদের ঘরে হানা-তল্লাশি হয়েছে। ঘরের প্রতি ইঞ্চি জায়গা তন্ন-তন্ন করে খুঁজে দেখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। ফলে আমরা সবাই সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত ছিলাম।

জাবেদ আহমাদ শালাহ অনেক দিন পর এই আজই এখানে এসেছে। তার সঙ্গে মোহাম্মাদ সিদ্দিক সুফী এবং মোহাম্মাদ হোসাইনও এসেছে। আলতাফ খান, শাব্বীর আহমাদ ও ফিরোজ পূর্ব থেকেই এখানে আছেন। তাদের ব্যতীত ঘটনাক্রমে আজ আমার পিতা ইউসুফ বেগ ও বড় ভাই শাকিল আহমাদ বেগ আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। আমরা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আছি আমি নিজে, আমার স্বামী মকবুল জান, পুত্র মুদ্দাস্সির, মাসাব্রাত ও কন্যা সায়েমা।

মধ্যরাতে যখন দরজায় করাঘাত পড়ল, আমি বুঝে ফেললাম, হানা পড়ে গেছে। আমি আওয়াজ দিলাম, দাঁড়াও, কাপড় পরে নেই। ধড়মড় করে শোওয়া থেকে উঠে কাপড় পড়ার নাম করে তড়িঘড়ি করে আমি মুজাহিদদের কাপড়-চোপড়গুলো সরিয়ে ফেললাম। ঘরে মুজাহিদদের বিভিন্ন জিনসপত্র এদিক-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। সেগুলো সামলালাম। বাইরে সৈন্যরা দরজায় শব্দ করছে, 'জলদি দরজা খোল্'।

এ মুহূর্তে আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে জাবেদ আহমাদ শালাহ, মোহাম্মদ সিদ্দীক সুফী, শাব্বির আহমাদ বাট, আলতাফ খান, মোহাম্মদ হোসাইন ও ফিরোজ বেগ। আমার ছোট ভাই ফিরোজ বেগ আগের দিন দিনভর সমস্ত ক্লাশিনকভ ও একে-৪৭ রাইফেলগুলো খুলে পরিষ্কার করেছিল। এখনও সেগুলো পুনঃস্থাপন করা হয়নি।

আমি দরজা খুলে দিলাম। সঙ্গে-সঙ্গে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর জওয়ানরা হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ভেতরে ঢুকে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে দিল। আমার বৃদ্ধ পিতা মোহাম্মাদ ইউসুফ বেগ, মকবুল জান, শাকিল আহমাদ বেগ, মুদ্দাস্সির ও মাসাররাত সবাইকে দোতলায় নিয়ে তাদের উপর টর্চার শুরু করে দিল। নীচতলায় আছি আমি ও কন্যা সায়েমা। উপরের পুরুষদের চিৎকারের শব্দে আমি চৈতন্য হারাবার উপক্রম হই। কিন্তু দ্রুত নিজেকে সামাল নিই। আমার পিতা কোমর ও হাঁটুর ব্যথার রোগী। 

মকবুল জানের শরীর তো বরাবরই অসুস্থ। একের পর এক টর্চার ও নির্যাতনে লোকটা এক প্রকার পঙ্গুই হয়ে গেছে। এদের মারপিট করায় আমার পাষাণ হৃদয় খাঁ-খাঁ করে উঠল। আমি বিএসএফ-এর এক অফিসারকে বললাম-

'আপনারা আসলে চান কী?'

তিনি বললেন, 'আমরা চাই মিলিট্যান্ট আর অস্ত্র।'

আমি বললাম, 'এখানে মিলিট্যান্ট-অস্ত্র পাবেন কোথায়?'

তিনি বললেন, 'এখনই দেখছি, কোথায় আছে।'

আমি বললাম, 'দেখুন ভালো কথা, কিন্তু এটা দেখবার কোন্ পদ্ধতি?'

তিনি বললেন, 'তুমি আমাকে দেখার পদ্ধতি শিখিও না। আমরা সবই জানি। এখানে আমাদের কী করতে হবে, তা আমাদের জানা আছে। ভালোয়-ভালোয় তুমি নিজেই সব বলে দাও।'

আমি বললাম, 'আমার বলার চেয়ে বরং ভালো হবে আপনারা ঘরে তালাশ করে দেখুন।'

তিনি বললেন, 'তা তো দেখবই; সেজন্যই তো এসেছি।'

একথা বলেই তিনি সৈন্যদের নিয়ে ঘরে তল্লাশি নিতে শুরু করেন।

আমাদের বললেন, জায়গা থেকে কেউ এক চুলও নড়বে না। অন্যথায় গুলি করে উড়িয়ে দেব।

উপর থেকে বড়দের আর্ত-চিৎকার আর বাচ্চাদের কান্নার শব্দে আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছিল।

সে-সময় আমার ঘরে একস্থানে রেকের উপর পাঁচ-ছয় জোড়া বুট ছিল। সৈন্যরা বুটগুলো দেখে জিজ্ঞেস করল, এত বুট কেন? এগুলো যাদের, তারা কোথায়? আমি বললাম, এগুলো আমার পরিবারের সদস্যদের। শীতের সময় আমরা নারী-পুরুষ সবাই বুট ব্যবহার করি।

সর্বত্র তল্লাশি চলছে। এক সিপাহী জাবেদ আহমাদ শালাহ-এর পরিচয়পত্রটা হাতে নিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, এই লোকটা কে?

আমি বললাম, এটা বেলাল আহমাদ বেগ-এর পরিচয়পত্র। সে এখন হেরানগর জেলে বন্দী।

সিপাহী বলল, কিন্তু এর মধ্যে তো বেলাল বেগ-এর নাম লেখা নেই। আমি বললাম, এটা বোধ হয় তার কোডনাম।

সিপাহী জিজ্ঞেস করল, তার কোডনাম কী?

বললাম, আমার জানা নেই; এতে যা লেখা আছে তা-ই।

জাবেদ আহমাদ-এর আইডি কার্ডটা পকেটে পুরে নিয়ে সিপাহী একটা জিজ্ঞেস করল, এই লোক কে?

পাসপোর্ট বের করল। এটা রফীক খানের পাসপোর্ট। আমাকে দেখিয়ে

আমি বললাম, আমার দেবর।

সিপাহী বলল, তা তার পাসপোর্ট তোমার ঘরে কেন?

আমি বললাম, এটা তার ভাইয়ের ঘর; রাখতে পারে।

জিজ্ঞেস করল, সে কোথায় থাকে?

বললাম, নওয়াব বাজারে।

কী কাজ করে?

বললাম, গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করে।

সিপাহী বলল, আমরা তদন্ত করে দেখব। যদি মিথ্যা হয়...!

ঠিক তখন দলের অফিসার উপর থেকে নেমে এল। তার হাতে একটা পিস্তল। অফিসারকে পিস্তল হাতে নামতে দেখে আমার কলিজা শুকিয়ে গেল। পিস্তলটা শাব্বীর আহমাদ বাট-এর। সম্ভবত লোকটা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার সময় পিস্তলটা নিতে ভুলে গেছে!

অফিসার আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, 'তোমার ঘরে পিস্তল কেন?'

'কেন?' প্রশ্নের জবাবে কিছু বলার আগেই অফিসার আমার মুখে সজোরে চড় মারল। মাথার চুলগুলো মুঠি করে ধরে টানা-হেঁচড়া শুরু করল। আমাকে দুহাতে ধরে উচ্চে তুলে মেঝেতে ছুড়ে মারল। গালাগাল করতে করতে আমার গায়ে এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকল। আমি সব অত্যাচার নীরবে সহ্য করলাম। উহ্ পর্যন্ত করলাম না। তারপর অফিসার চুল ধরে টেনে আমাকে দাঁড়া করাল এবং দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে দুহাতে সর্বশক্তি ব্যয় করে আমার বুকের উপর চাপ দেয়। আমার এই করুণ অবস্থা দেখে কন্যা সায়েমা আহত বাঘিনীর মতো ছুটে এসে অফিসারের দুহাত খামচে দেয় এবং রাগের স্বরে বলে, 'তুমি আমার আম্মুর সঙ্গে এমন আচরণ করছ কেন? আমাদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করার অধিকার তোমাদের নেই। তোমরা অন্যায় করছ। তোমরা সীমালংঘন না করে তল্লাশি করে চলে যাও।'

অফিসার সায়েমার মুখের উপর কষে একটা চড় মেরে বলল, 'খামোশ হারামজাদী! মুখরো কোথাকার। আমি জানি, তুই দোখতারানে মিল্লাত-এর সঙ্গে কাজ করিস্।'

আমি বললাম, এই একটুখানি মেয়ে দোখতারানে মিল্লাতের সাথে কাজ করে এ আপনি কী বলছেন! ঐ সংগঠনে তো প্রাপ্তবয়স্করা কাজ করে। তাও শিক্ষিতা ও বুদ্ধিমতী মেয়েরা।

অফিসার বলল, তুমি বড় মুখরা মেয়ে। আমি তোমার জিহ্বাটা...। দাঁত কড়মড় করে সে তার বাঁ হাতে আমার মুখমণ্ডল চেপে ধরে আমাকে জিহ্বা বের করতে বলে। জবাবে আমি তার শার্টের কলার ধরে এমন ঝটকা এক টান দেই যে, লোকটা পড়িমড়ি করে দাঁড়িয়ে যায়।

আমি রাগে-ক্ষোভে দাঁত খিঁচে তাকে উদ্দেশ করে বললাম, তুমি যদি আমার সঙ্গে আর বাড়াবাড়ি কর, তাহলে তোমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাব। আমাকে তুমি দুর্বল মনে করো না।

আমার কঠোর প্রতিক্রিয়া ও মারমুখী অবস্থান দেখে লোকটা হাত গুটিয়ে নিল ঠিক; কিন্তু মুখে যা তা ভাষায় অসহনীয় গালিগালাজ করতে থাকে। আমার মন চায়, ঝাপটে ধরে লোকটার গণ্ডযুগল খামচে দিই। কিন্তু আমাকে ধৈর্যধারণ করতে হল। পিস্তলটাই আমাকে অনেকখানি দুর্বল করে ফেলেছে। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে আত্মসংবরণ করতে হয়। আমার মুখে ফেনা এসে যায়। আমি থুতু ফেলার জন্য বাইরে যেতে উদ্যত হই। এমন সময় সায়মা দ্রুত আমার কাছে ঘেঁষে নির্লিপ্তের মতো আমাকে ফিসফিস করে বলল, 'আম্মী! আমি তোমার কাছে থাকলে তুমি ওদের কোন প্রশ্নের কী জবাব দাও, তা আমার জানা হয়ে যায়; আমাকে আলাদা করে নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে যেন আমিও একই জবাব দিতে পারি।'

মেয়ের পরামর্শটা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হলো। সে সময় থেকে আমি মেয়েটাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার থেকে আলাদা করিনি। আমার এই ছোট্ট মেয়েটা সৈন্যদের প্রশ্ন ও আমার উত্তরগুলো মুখস্থ করে রাখে।

অফিসার আবার বলল, তোমার ঘরে একটা পিস্তল যখন পেলাম, তখন আরো অস্ত্র নিশ্চয় আছে।

আমি বললাম, দেখুন, পিস্তলটার ব্যাপারে যদি আমার কিছু জানা থাকত, তাহলে ওটা আপনি খুঁজে পেতেন না, আমি ওটাকে এভাবে চোখের সামনে ফেলে রাখতাম না।

অফিসার বলল, অস্ত্রটা তোমার ঘরে পাওয়া গেল আর তুমি এ ব্যাপারে কিছুই জান না?

আমি বললাম, দেখুন, আসল ঘটনা হলো, কয়েক দিন আগে বিএসএফ-এর ধাওয়া খেয়ে এক মুজাহিদ পালিয়ে এসে আমার ঘরে ঢুকে পড়েছিল। বিএসএফ জওয়ানদের চলে যাওয়া পর্যন্ত সে ঘরের উপর তলায় লুকিয়ে ছিল। এই পিস্তল হয়ত তার। সজ্ঞানে হোক ভুলে হোক সে-ই এটা রেখে গেছে।

অফিসার বললেন, তা-ই যদি হয়, তুমি সেই সন্ত্রাসীর ব্যাপারে বিএসএফ-এর জওয়ানদের সংবাদ দিলে না কেন?

আমি বললাম, তার কাছে অস্ত্র, আমি কিভাবে তার বিপক্ষে অবস্থান নিই? সে আমাকে মারতে পারত, যেমন তোমরা মারছ। কারণ, তোমাদের কাছেও অস্ত্র আছে।

কী জানি লোকটা আমার কথায় বিশ্বাস করল কি করল না। কিন্তু টানা তিন ঘন্টা পর্যন্ত আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যায়। গোটা ঘর তন্ন- তন্ন করে খুঁজে ফেরে। স্থানে-স্থানে ঘরের ভিটা খুঁড়ে অস্ত্র খোঁজে। আলমারি, টেবিল, চেয়ার, যেখানে যা পায় ভেঙ্গে চুরমার করে। কিন্তু তারপরও যখন কিছু পেল না, এবার তারা ক্ষান্ত হয় এবং ফিরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে গাড়ির নিকট চলে যায়।

চলে যাওয়ার জন্য বিএসএফ জওয়ানরা গাড়িতে উঠছে। সবাই গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এক সিপাহী প্রস্রাব করার জন্য টয়লেটে ঢোকে। টয়লেট থেকে সামান্য দূরে একস্থানে মাটি ঘেঁষে আন্ডারগ্রাউন্ডের সামান্য একটু ফাঁক। বাইরের হাওয়া-বাতাসের জন্য এই ফাঁকটুকু রাখা হয়েছিল। জনালার মতো করে পাল্লা সাঁটানো আছে তাতে। পাল্লাটা ভেতর থেকে সিটকিনি লাগিয়ে দিলে ফাঁকটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। সে সময়ে এই জানালাটা খোলা ছিল।

টয়লেটের ভেতর থেকে এই ফাঁকটা সিপাহীর নজরে পড়ে। সে ভেতরে মানুষ দেখতে পায়। সঙ্গে-সঙ্গে টয়লেট থেকে বের হয়ে চিৎকার করে ওঠে- 'পাইছি রে পাইছি!'

সিপাহীর 'পাইছি রে পাইছি' চিৎকার শুনে গাড়িতে চড়ার জন্য অপেক্ষমাণ জওয়ানরা হুড়মুড় করে ছুটে আসে। সিপাহী কী পেয়েছে সবাইকে জানায় ও দেখায়। আর যায় কোথায়। বিএসএফ-এর জোয়ানরা ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে পড়ে। তারা তাদের সব পেয়ে যায় আর আমরা আমাদের এতদিনের সব অর্জন হারিয়ে ফেলি। তারা

মুজাহিদদের প্রত্যেককে ধরে বাইরে এনে দাঁড় করিয়ে রাখে। তাদের চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে মারধর শুরু করে দেয়। গুদাম থেকে অস্ত্রগুলো সব বের করে নিয়ে আসে। সঙ্গে আমাদের ঘরের সবাইকেও আটক করে ফেলে।

ধৃত মুজাহিদ আহমাদ শালাহ তাদের উদ্দেশ করে বলল, 'আমি জাবেদ আহমাদ শালাহ। আমার সাথে মোহাম্মদ সিদ্দিক সুফী, শাব্বির আহমাদ বাট, মোহাম্মদ হোসাইন ও আলতাফ খান এ কজন মিলিট্যান্ট। আমাদের সঙ্গে তোমাদের যা করার করো। কিন্তু ঘরের লোকদের ছেড়ে দাও। জওয়ানরা তার কথায় কর্ণপাত করল না। তারা বন্দুকের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে-পিটিয়ে প্রত্যেককে রক্তাক্ত করে ফেলল। এবার জাবেদ বলল- তোমরাও সৈনিক, আমরাও সৈনিক। আমরা একে অপরের শত্রু। তবে এ মুহূর্তে আমরা তোমাদের বন্দী। জয় আজ তোমাদের; কিন্তু আমাদের সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধবন্দীর মতো আচরণ করা উচিত।

অফিসার জাবেদকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তারপর পায়ের বুট দ্বারা তাকে পিষ্ট করে, মাথায় আঘাত করে। বলে, শালা, তোরা যুদ্ধবন্দী নস্ - তোরা সন্ত্রাসী। জাবেদ বলল, 'বুঝেছি, তোমরা আমার কথা বুঝবে না, অশোক পেটিয়লকে ডেকে আন।'

'তুই আমাকে অশোক পেটিয়লকে ডেকে আনার নির্দেশ দিচ্ছিস!' বলেই অফিসার রাইফেলের বাঁট দিয়ে জাবেদের দুপায়ে আঘাত করে। জাবেদের পা দুটো ভেঙ্গে যায়।

অন্যদিকে সিপাহীরা আমার পিতা জনাব ইউসুফ বেগ, স্বামী মকবুল জান, ভাই ফিরোজ আহমাদ ও শাকিল আহমাদ এবং পুত্র মুদ্দাসসির ও মাসাররাতকে বেদম প্রহার করছে। কাপড় দ্বারা তাদের চোখ ও বুটের ফিতা দ্বারা পেছন দিক থেকে দুবাহু একত্র করে বেঁধে রাখা হয়েছে। চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থ ও খানিক আগে অত্যাচার ভোগকরা স্বামী মকবুল জানের রক্তবমি শুরু হয়ে যায়। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। চিৎকার করে বলে উঠলাম-

'থাম! তোমরা কি এদের প্রাণে মেরে ফেলতে চাও? আমার বাবা অসুস্থ বৃদ্ধ। স্বামী রক্তবমি করছে। অন্যদের তোমরা রক্তাক্ত করে ফেললে...।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মুখ থেকে এতটুকু কথা বের হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে এক সিপাহী ছুটে এসে আমার চুলগুলো মুঠি করে ধরে ঝটকা এক টান দেয়। ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে পিঠ ও কোমরে লাথি মারে। সে আমাকে আধমরা করে ফেলে রাখে।

আমি হাঁফাচ্ছিলাম। এক অফিসার সিপাহীকে বলল, 'এই ঘরের কর্তাটাকে আমার কাছে নিয়ে আয়।'

মকবুল জানকে তার কাছে নিয়ে আসা হলো। আমি পাশেই দাঁড়ানো। অফিসার সিপাহীকে বলল, 'এর পরনের কাপড়গুলো সব খুলে উলঙ্গ কর এবং স্ত্রী-কন্যাদের চোখের সামনে হত্যা করে ফেল।'

সিপাহী মকবুল জানের কাপড় খুলতে শুরু করে। অসহায় মকবুল জান লজ্জায় অবনত হয়ে যায়। কন্যা সায়েমা ও নারগিস পাশে দাঁড়ানো। কন্যার সামনে পিতার এই অপমান কে সইতে পারে বলুন? অন্যদের চোখ তো বাঁধা। তারা কেউ দেখতে পাচ্ছে না। দেখছি শুধু আমি ও আমার কন্যারা। আর ওরা তো হায়েনা। আমি স্বামীকে উদ্দেশ করে বললাম, কোনো পরোয়া নেই। শাহাদাতের মর্যাদা পেতে লজ্জা কিসের?

আমার মুখ থেকে 'শাহাদাত' শব্দ শুনে অফিসার অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে। জবাবে সে কিছু বলার আগেই মকবুল জানের সমস্ত কাপড় খুলে ফেলা হয়। সঙ্গে-সঙ্গে পুনরায় তার রক্তবমি শুরু হয়ে যায়। মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে অফিসার তাকে কাপড় পরে নিতে বলে।

স্বামীকে কাপড় পরতে দেখে আমার দেহে প্রাণ ফিরে আসে। আমি সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে কাপড় পরতে সাহায্য করি। নির্যাতনে তার হাত-পা অবশ হয়ে গিয়েছিল। তখন অন্য এক অফিসার আমাকে লক্ষ্য করে বলে-

'আমরা তোমার ব্যাপারে অনেক কিছুই কানে শুনেছিলাম। এবার চোখে দেখলাম, তুমি কত ভয়ংকর নারী। সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী তো তুমিই। তুমিই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছ। অস্ত্রের এত বিশাল ভাণ্ডার উদ্ধার হলো তোমার ঘর থেকে। তোমার আর রক্ষা নেই। তোমাকে আমরা জীবন্ত ছাড়ব না।'

অফিসারের বক্তব্যের প্রতি আমার কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না। এতজন মুজাহিদ ধরা পড়ে গেল। সঙ্গে অস্ত্রের এত বিশাল সংগ্রহ সরকারের হাতে চলে গেল, সেই দুঃখেই আমি মূহ্যমান। হৃদয়টা আমার ফেটে যাচ্ছিল। মস্তিষ্ক কাজ করছিল না। মাথার উপর বেদনার প্রচণ্ড একটা পাহাড় চেপে বসে ছিল যেন।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ গাড়িতে বোঝাই করার পর ধৃত চোখবাঁধা পুরুষদের প্রত্যেককে গাড়িতে তুলে নেওয়া হলো। সবাই রক্তাক্ত। প্রত্যেকের দুবাহু পেছন দিক করে বুটের ফিতায় বাঁধা। হাড়গোড় চূর্ণবিচূর্ণ সবার।

এবার ওয়ারলেসের মাধ্যমে বিএসএফ-এর অন্য কোম্পানীকে তলব করা হলো। নতুন কোম্পানীকে কেন তলব করা হলো, বুঝতে পারলাম না। অর্ডার পেয়ে এক কোম্পানী রওনা হয়। এই ফাঁকে লনে বসে কয়েকজন অফিসার আলাপ জুড়ে দেয়। একজন বলল-

মিলিট্যান্টদের দিক থেকে আক্রমণ হওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়ে আমরা অধিবাসী ও মিলিট্যান্টদেরসহ বাড়িটা উড়িয়ে দিচ্ছি না কেন?

জবাবে অন্যজন বলল, তাতে লাভ কী হবে?

একজন বলল, ঘরে যা কিছু ছিল সব তো নিয়েই নিলাম। এখন আর লোকগুলোকে মেরে লাভ কী?

প্রথমজন বলল, অস্ত্র ছাড়া সোনা-রূপাসহ বিপুল ধন-সম্পদও উদ্ধার করেছি। এখন যদি আমরা লোকগুলোকে মেরে ফেলি, তাহলে এগুলোর কোনো দাবিদার থাকবে না। সব আমরা ভাগ করে নিয়ে যাব।

না, আমি এর অনুমতি দিতে পারি না। বললেন আরেকজন।

তৃতীয় একজন বলল, এ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রকে ঘটনা অবহিত করার আগে নেওয়া উচিত ছিল। এখন তো অন্য ব্যাটলিয়ন এসে পড়ছে।

আরেকজন বলল, আমরা কেন্দ্রকে মিলিট্যান্ট গ্রেফতার হওয়া এবং অস্ত্র উদ্ধারের সংবাদ পাঠিয়েছি। এখন ফায়ারিং করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রস্তাবকারী বললেন, আমরা বলতে পারব রওনা হওয়ার আগে আমাদের উপর হামলা হয়েছিল।

একজন বলল, কিন্তু এ্যাকশনে যাওয়ার আগে আমরা কজন মরলাম, কজন আহত হলাম, তা তো দেখতে হবে। এর জন্য কে প্রস্তুত আছে?

প্রথমজন বলল, দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত করে ফেলুন। এদের প্রত্যেককে হত্যা করলে আমরা সম্পদে লাল হয়ে যাব।

তাদের হত্যা না করেও আমি তোমাদের প্রত্যেককে লাল করে দিতে পারি। ঘর থেকে যা কিছু উদ্ধার করলাম, তার কিছুই ওরা ফেরত পাবে না। কাজেই অন্য কোনো চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। বলল একজন। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের এই কথোপকথন আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা উদ্ধার করা সোনাদানা, মূল্যবান সম্পদ পোটলায় বেঁধে নিয়েছিল। কিছু জিনিস বাঁধার জন্য কোনো কাপড় পাচ্ছিল না। এক সিপাহী এসে কিছুই না বলে আমার মাথা থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে নেয়। খানিক পর নতুন কোম্পানী এসে হাজির হয় আর এই কোম্পানী হেডকোয়ার্টার অভিমুখে রওনা হয়ে যায়।



পর্ব-৭ এখানে.........





Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp