নেমে এল বিভীষিকা
বেলাল আহমাদ বেগকে গ্রেফতার করে পুলিশ বিজয়োৎসবে মেতে ওঠে। তারা বেলালকে হেলাল আহমাদ বেগের ভাই মনে করেছিল। সেজন্য হেলালের সন্ধানে তারা আমাদের ওপর চাঁপ প্রয়োগ করতে শুরু করে। শুরু করে নির্যাতন। বেলাল আহমাদ বেগের গ্রেফতারিতে বেগ পরিবারের ওপর বিভীষিকা নেমে আসে। কি পুরুষ, কি নারী, কি শিশু, কি বৃদ্ধ এই পরিবারের যে কাউকে নির্দয়ভাবে মারপিট করতে শুরু করে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন আমার আলসার রোগী স্বামী। আব্বাজানের পুলিশি নির্যাতন সহ্য করার মতো শক্তি ছিল না। তাই তিনি আত্মগোপন করে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তারপরও তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে পড়তেন।
লাগাতার পুলিশি হানা ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমি আমার স্বামী এবং দুই পুত্র মুদ্দাস্সির ও মাসারররাতকে সন্ধ্যা হলেই প্রতিবেশী কোনো বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। ছোট মেয়েটিকে নিয়ে আমি ঘরে থাকতাম। কখনও মা এসে আমার সঙ্গে থাকতেন, কখনও শাশুড়ি।
পুলিশি হানা, তল্লাশি ও নির্যাতনের ধারা যখন ব্যাপক রূপ লাভ করে, তখন আমার এক প্রতিবেশী মহিলা আমাকে বাড়ি ছেড়ে তার বাড়িতে রাত কাটানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আমি ঘরদোর খালি রেখে অন্য জায়গায় থাকার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারলাম না। আমার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে ভেবে আমি বাড়ি ত্যাগ করা সমীচীন মনে করলাম না। তবে কদিনের মধ্যে যখন পরিস্থিতি আরো খারাপ ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, পুলিশ রাতেও আমার বাড়িতে হানা দিতে শুরু করল, তখন আমিও বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। আমি উল্লেখিত সেই প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে গিয়ে থাকতে শুরু করলাম। তবে আমি স্থান পরিবর্তন করলাম বটে; কিন্তু আমার নজর চব্বিশ ঘণ্টা আমার বাড়ির উপরই নিবদ্ধ থাকল।
বেলালের গ্রেফতারিতে মুজাহিদদের হেডকোয়ার্টার (আমার বাড়ি) লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। আমি পার্শ্ববর্তী বাড়িতে অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা দিতে থাকি। আমার সঙ্গে কারও সাক্ষাতের প্রয়োজন হলে কিংবা কারও প্রতি আমার কোনো বার্তা পৌঁছানোর প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করে রাখি।
সে সময়ের ঘটনা। ১৯৯০ সালের মার্চ মাস। হেলাল একদিন আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। বরফপাতের মওসুম। টহল পুলিশ হেলালকে দেখে ফেলে। পুলিশ তাকে থামতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু হেলাল দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে। পুলিশ গুলি ছোড়ে। গুলি হেলালের পায়ে বিদ্ধ হয়। হেলাল বেগ বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় দেওয়াল টপকে একটা বাড়িতে ঢুকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলির শব্দে সমগ্র এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক-ওদিক পালাতে শুরু করে। যারা ঘরের বাইরে ছিল, তারা ঘরে ঢুকে লুকাতে শুরু করে আর যারা ঘরের ভেতরে ছিল, তারা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতে শুরু করে দেয়। দেখতে-না-দেখতে পুলিশ গোটা এলাকায় ছেয়ে যায় এবং এলাকাটা ঘিরে ফেলে। তারা আহত হেলালকে খুঁজতে শুরু করে।
প্রতিবেশীর ঘরের জানালা দিয়ে আমি এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। হেলালকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আমি তার দিকে ছুটে যাই। জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমি হেলালকে কাঁধে তুলে লুকিয়ে-লুকিয়ে আমার ঘরে নিয়ে যাই এবং ওপর তলার একটা বিছানায় শুইয়ে দিই। তার বুলেটবিদ্ধ পা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি তার পায়ে এক খণ্ড কাপড় বেঁধে দিই।
ব্যাপক পুলিশি তৎপরতার কারণে কেউ ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছিল না। দরজা-জানালা বন্ধ করে সবাই চুপচাপ বসে আছে। অথচ হেলাল আহমাদ বেগের ত্বরিৎ চিকিৎসার প্রয়োজন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ঘরে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ডাক্তার আনার জন্য যেতে পারি, কিন্তু হেলালকে একা রেখে যাই কী করে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। কী করব কিছুই আমার বুঝে আসছে না। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। একটা সেকেন্ড ঘণ্টার মতো মনে হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তেই আশংকা জাগছে, এই বুঝি হেলাল দুনিয়া থেকে চলে গেল।
বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪
🌹 ধন্যবাদ 🌹
অগত্যা হেলাল বেগকে কিছু না বলেই আমি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ডাক্তার আনার জন্য বেরিয়ে পড়ি। আমি বের হয়ে ডাক্তারের খোঁজে যাচ্ছি ঠিক, কিন্তু প্রবল এক আশংকা আমাকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছে যে, এই ফাঁকে আমার ঘরে পুলিশ অনুপ্রবেশ করে আহত হেলালকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ডাক্তার নিয়ে বাড়ি ফিরে কক্ষে প্রবেশ না করা পর্যন্ত এই শংকা আমাকে তাড়া করে ফিরে।
ফিরে এসে হেলালকে কক্ষে পেয়ে আমি শান্ত হই। প্রবল ভয় ও শংকা থাকা সত্ত্বেও আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। ডাক্তার হেলাল আহমাদ বেগের পা থেকে বুলেট খুলছেন। এ সময় আমি হেলালের ধৈর্যশক্তি ও সহনশক্তি প্রত্যক্ষ করলাম। হেলাল বেগ নিজেই মুখে কাপড় ঢুকিয়ে নিয়েছে, যাতে মুখ থেকে শব্দ বেরুতে না পারে। একদিকে আমার ঘরে যখন হেলাল আহমাদ বেগের অপারেশন চলছে, অপরদিকে পুলিশ তার সন্ধানে ঘরে-ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে।
বিষয়টা দৈব নাকি আল্লাহর ইচ্ছা যে, আশপাশের সব বাড়ির সকল ঘরে তল্লাশি হলো; কিন্তু পুলিশ আমার বাড়িতে ঢুকল না। অপারেশনের পর এখন হেলাল চলাফেলা করতে সক্ষম। আমি আমার বাড়ির তৃতীয় তলায় তার থাকার ব্যবস্থা করে দিই। স্নেহপরায়ণ বড় বোনের মতো আমি তাকে ধরে উঠাতাম-বসাতাম ও বাথরুমে নিয়ে যেতাম। সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমিই তার সেবায় নিয়োজিত থাকি।
শ্রীনগরে কয়েকজন বড় ডাক্তার তাকে দেখতে এলেন। বেশ কজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিও এসে তাকে দেখে যান ও অবস্থার খোঁজখবর নেন।
চলাফেরা করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর হেলাল আহমাদ বেগ প্রয়োজন দেখা দিলে মাঝে-মধ্যে গোপন ঠিকানায় চলে যেত, পরিস্থিতি ভালো হলে আবার ফিরে আসত। কয়েক মাস পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকল। এ সময় মুজাহিদরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আমার ঘরে আসা- যাওয়া শুরু করল। আমি ও আমার ছেলেমেয়েদের সেবা-শুশ্রূষায় হেলার আহমাদ বেগ অত্যন্ত প্রভাবিত হয়। সে আমাকে 'বহেনজী' (আপা) বলে সম্বোধন করতে শুরু করে। দেখতে-না-দেখতে আমি শুধু মুজাহিদ ও স্বাধীনতাপ্রিয় কাশ্মিরিদেরই 'বহেনজী'তে পরিণত হইনি, বহেনজী যেন আমার নাম হয়ে যায়। মানুষ আমাকে এ নামেই চিনতে শুরু করে। ফোর্স ও ফৌজের তিন শাখা, প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকার সকলের তালিকায়ই আমি 'বহেনজী' বলে পরিচিত হয়ে যাই।
হেলাল আহমাদ বেগের সুস্থতা লাভের পর মুজাহিদগণ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনীতিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যারিস্টার ও অন্যান্য সুহৃদগণ আমার বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে। আমি সাবধানতার সাথে আমার স্বামী মকবুল জান ও দুই পুত্রকে রাতে শোওয়ার জন্য অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে শুরু করি।
কিন্তু আমার এই সাবধানতাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। পুত্র মুদ্দাসসির হঠাৎ একদিন এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়ে যায়। তখন তার বয়স ছিল ১৫ কি ১৬ বছর। সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আসুন, মুদ্দাসসির-এর গ্রেফতারি ও পরবর্তী কাহিনী তারই মুখে শুনি।
মুদ্দাস্সীরের আত্নকাহিনী
মুদ্দাসসির জানায়, একদিন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ইউসুফ জমজমের এক পুত্রের সাথে আমার দেখা হয়। সে বলল, আমি যে ঠিকানায় থাকতাম, সেটি এখন পুলিশের টার্গেটে পড়ে গেছে। তুমি আমাকে তোমার সঙ্গে রাখো। আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে শুরু করি। হাঁটতে- হাঁটতে আমরা দেশের চলমান পরিস্থিতির উপর মতবিনিময় শুরু করি এবং বিষ্যৎ ভাবনায় নিজেদের হারিয়ে ফেলি। পরিচিত শহীদদের নিয়েবআলোচনা করি। ভাবি, তারা কত ভাগ্যবান, আল্লাহপাকের কত মকবুল বান্দা। আমার বয়সী যারা জেলে আটক আছে, তাদের কথাও মনে পড়ে।
আমার মনটা ছ্যাৎ করে ওঠে। ভারতীয় বাহিনী ও সিকিউরিটি ফোর্সের নির্যাতনের কথা স্মরণ করে ভাবছিলাম, এই নির্যাতনের ধারা কবে শেষ হবে। কোন দিন আমরা এই জালিমদের অক্টোপাস থেকে মুক্তি পাব?
আমরা একথাও ভাবছিলাম, আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করব, তখন দেশের পরিস্থিতি কেমন হবে? স্বাধীন জীবনের ধরন কীরূপ হবে ইত্যাদি। দেশের কথিত নেতাদের প্রতি আমাদের রাগ এসে যায়। এই মুহূর্তে যদি ঐ নেতাদের কাউকে রাস্তায় পেয়ে যেতাম, যারা শেখ আবদুল্লাহর মতো গাদ্দারের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিপন্ন করে তুলেছে! আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, শেখ আবদুল্লাহ হিন্দুস্তানের অনুগত হয়ে গেল কেন? আমাদের নেতারা শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগ দিল কেন? আবার নিজেরাই জবাব ঠিক করি, আসলে এরা বিশ্বাসঘাতক। এরা আপন ভাই ও নিজ জাতিকে দাস বানিয়ে দিল। শেখ আবদুল্লাহরই গাদ্দারির ফলে এখানে হত্যা ও লুটতরাজের বাজার সরগরম। আজ আমাদের ভারতের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই করতে হচ্ছে। আপন ঘরবাড়ি ত্যাগ করে আমাদের গোপন ঠিকানা তালাশ করতে হচ্ছে।
এসব ভাবনা ও কল্পনার মধ্য দিয়ে আমরা হাঁটতে-হাঁটতে নটিপুরায় পৌছে যাই। আমি কোথায় এবং কার কাছে থাকি, তা আমি তাকে আগেই বলে দিয়েছিলাম। ঠিক এমন সময়ে আমরা টহল বাহিনীর নজরে পড়ে যাই। সৈন্যরা আমার সঙ্গীকে থামতে বলে। সঙ্গে-সঙ্গে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। দেখতে-না-দেখতে পুলিশ পুরো এলাকাটা ঘিরে ফেলে। ছেলেটি দৌড়ে আমার আস্তানায় গিয়ে পৌঁছে এবং দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করে ঘরের লোকদের সঙ্গে মিশে যায়। পালাবার সময় তার পরনে ছিল সাদা পোশাক।
পুলিশ খুঁজতে-খুঁজতে সেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং জিজ্ঞেস করে, একটু আগে সাদা পোশাক পরা যে-ছেলেটা ঢুকেছিল, তাকে হাজির করো; অন্যথায় তোমাদের সবাইকে গুলি করে হত্যা করব। বাড়ির মালিক বললেন, কে ঢুকেছে, কার কথা বলছেন বুঝছি না। আপনারা খুঁজে দেখুন।
তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সাদা পোশাকপরা ছেলেকে না পেয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। ইন্টারোগেশন সেন্টারে নিয়ে গিয়ে পুলিশ আমার পাজামা খুলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সাদা পোশাকপরা ছেলেকে না পেয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যায়।
ইন্টারোগেশন সেন্টারে নিয়ে গিয়ে পুলিশ আমার পাজামা খুলে ফেলে। পাজামার ফিতা খুলে তা দিয়ে আমার হাতদুটো পিঠমোড়া করে বাঁধে। চোখদুটো কাপড় দ্বারা ঢেকে দিয়ে আমাকে নিয়ে ফুটবলের মতো খেলে। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুধু অনুভব করছিলাম, আমি এখন একটা ফুটবল ছাড়া আর কিছু নই। এ সময় আমার মাথাটা একাধিকবার দেওয়ালের সঙ্গে গিয়ে আঘাত খায়। আমার মুখ থেকে আর্তচিৎকার বেরিয়ে এলে ভারতীয় হায়েনারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত।
তারপর আমাকে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়। তারা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছিল, যেন আমি তাদের একজন প্রতিপক্ষ সৈনিক। অথচ আমি তাদের বারবারই বলছিলাম, আমি ছাত্র, দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করি। 'ছাত্র' কথাটা শুনে তারা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং আমার গায়ে এমন লাথি মারে যে, আঘাত খেয়ে আমি বেহুঁশ হয়ে যাই।
কিছুক্ষণ পর আমি যখন জ্ঞান ফিরে পাই, তখন দেখলাম, আমার মাথায় বন্দুকের নল তাক করে একজন বলছে, শালা ঢং করছে। এক্ষুনি গুলি করে তোর জীবন শেষ করে ফেলব। আমি নিরুপায়ের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। আমার ভীষণ পিপাসা লাগে। আমি চাপা কণ্ঠে পানি চাইলাম। আমার মুখের কাপড় সরিয়ে একটা লোটা এগিয়ে ধরে একজন বলল, এই নে পানি। অন্য একজন আমার মুখের সঙ্গে লোটাটা লাগিয়ে দেয়।
আমি গলগল করে পানি পান করতে শুরু করলাম। কিন্তু পানিগুলো গরম ও নোনা। তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমি বুঝলাম, এ তো পানি নয়- মানুষের প্রশ্রাব। আমি থু-থু করে মুখ সরিয়ে নিলাম। তারা আমাকে মেঝেতে শুইয়ে দিয়ে আমার গায়ে এক ধরনের পাউডার ছিটিয়ে দেয়। তাতে সঙ্গে-সঙ্গে আমার সমস্ত শরীর ঝলসে যায় এবং ফোসকা পড়ে যায়। তখন আমার হাতদুটো বাঁধা। সেই পাউডারের এ্যাকশনে আমি চিরদিনের জন্য এ্যালার্জির রোগী হয়ে যাই।
সেই হিংস্র হায়েনারা আমাকে শারীরিকভাবে কষ্ট দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, আমার আত্মমর্যাদার উপরও তীব্র আঘাত করেছে। তারা আমার সামনে মুজাহিদদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং ইসলাম নিয়ে আপত্তিকর ভাষায় কটাক্ষ করে। পরদিন তারেক নামক অপর এক যুবকও বন্দী হয়ে আমার সেলে আসে। তার সঙ্গেও একই আচরণ করা হয়। পুলিশ যখন জানতে পারে, আমি বেগ পরিবারের সদস্য, তখন আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা আমাকে পাপাটু পাঠিয়ে দেয়।
পাপাটু নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা আমাকে পা ধরে টেনে-হেঁচড়ে বাইরে বের করে রাস্তায় নিয়ে যায়। রাস্তার বিক্ষিপ্ত কংকরের ঘষায় আমার কোমর-পিঠ চালনির মতো ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পাপাটুতে আমার ওপর আরও নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়।
হেলাল বেগের সন্ধান দেওয়ার জন্য আমাকে প্রথমে লকাবে আবদ্ধ করে রাখে। তারপর লকাব থেকে বের করে মাথাটা নিচের দিকে ঝুলিয়ে পাদুটো উপরে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। এ অবস্থায় আমার শরীরে সুঁই ফুটানো হয়। মুখে গরম ভাপ দেওয়া হয়। এ শাস্তি থেকে অব্যাহিত দিয়ে পাওয়ারটাচ দেওয়ার জন্য অন্য এক কক্ষে নিয়ে যায়। পাপাটুতে আমি যে-ধরনের টর্চার ও নির্যাতনের শিকার হই, তাতে আমার বিশ্বাস জন্ম নেয়, আমি আর বাঁচব না। কিন্তু তৃতীয় দিন হঠাৎ করে আমাকে মুক্তির বার্তা শোনানো হলো। বাড়ি এসে আমি জানতে পারি, নাজীর সিদ্দিকী পনেরো হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে মুক্ত করে এনেছেন।
২৪ ও ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে আমার পিতা, ছোট ভাই, দাদা ও দুই মামা শাকীল বেগ ও ফিরোজ বেগের সঙ্গে পুনরায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে আমাদের সঙ্গে মোহাম্মাদ হুসাইন, আলতাফ খান, মোহাম্মদ সিদ্দিক সুফী, শাব্বীর আহমাদ বাট ও জাবেদ আহমাদকেও গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর প্রথমে আমাদের টোটো গ্রাউন্ড বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাগাতার আট দিন যাবত আমাদের উপর চর্চার করা হয়। চোখে পট্টি ও দুহাত পিঠমোড়া করে বেঁধে আমাদের ওপর এত অত্যাচার করা হয় যে, তা ভাষায় ব্যক্ত করে বোঝানো সম্ভব নয়। কয়েক দিন পর্যন্ত আমার পাদুটো চৌকির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় এবং বলে দেওয়া হয়, যদি একটুও নড়াচড়া কর, তাহলে পিঠে ডান্ডা পড়বে। তারপর পাপাটু নিয়ে গিয়ে আমার ওপর আরো অকথ্য ও নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।
আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ধানে
ফরীদা জানান-
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মুদ্দাসসির দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত চিকিৎসাধীন থাকে। তথাপি চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এখনও তার শরীরের সুস্থতা ফিরে আসেনি। একটু কিছু হলেই তার এলার্জি দেখা দেয়। বস্তুত ভারতীয় বাহিনী তাকে পঙ্গু বানিয়ে ছেড়েছে।
একা মুদ্দাসসির-ই নয়, আমরা আমাদের অসংখ্য যুবক কর্মীকে ভারতের জেল ও ইন্টারোেগশন সেন্টার থেকে মুক্ত করে এনেছি। শুধু তা- ই নয়, বন্দী থাকা অবস্থায় তাদের চিকিৎসাও করিয়েছি। এ কাজের জন্য শ্রীনগরের ছোট-বড় অনেক ডাক্তারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। 'বহেনজী'র সংবাদ পাওয়ামাত্র তারা ছুটে আসতেন এবং ইন্টারোগেশন সেন্টারে গিয়ে আমাদের জখমী যুবকদের চিকিৎসা শুরু করতেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি লোকদের আমি আগেই ম্যানেজ করে রাখতাম।
অধিকাংশ যুবককে যাদের সরকার নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর কিংবা 'মাল' খেয়ে ছেড়ে দিত, তাদের কেন্দ্রীয় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে হতো। পুলিশি নির্যাতনে যাদের গুপ্তাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবং প্রশ্রাবের সমস্যা দেখা দিত, তাদেরকে ভর্তি করতে হতো এইচএস হাসপাতালে। জিজ্ঞাসাবাদে সময় অধিকাংশ যুবকের হৃদপিণ্ডে আঘাত লাগত। তাদের জন্য চিকিৎসা নেওয়া হতো সুরা মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে।
আমার বাড়ি মুজাহদিদের গোপন আস্তানা-ই নয়, একটি নার্সিং হোমও ছিল বটে। সংগঠনের কোনো কর্মী অসুস্থ্য হলে কিংবা কোনো ঘটনায় আঘাত পেলে তাদের জন্য ডাক্তার-ঔষধের ব্যবস্থা করা, তাদের দেখাশোনার জন্য অন্য কাউকে নিয়োগ করার সব দায়-দায়িত্ব আমাকেই বহন করতে হতো।
কেউ শহীদ হলে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া যে, তার পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারছে কিনা, না পারলে সংগঠনের ফাণ্ড থেকে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা, কোনো নেতা বা কর্মী দূরে কোনো জেলে বন্দী আছে, তার বাপ-ভাই বা আত্মীয়-স্বজনের তার সঙ্গে গিয়ে সাক্ষাৎ করার আর্থিক সঙ্গতি নেই, তাহলে এমন লোকদের পথখরচের ব্যবস্থা করা, কোনো শহীদের ঘরে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকলে শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা চালু করে প্রতি মাসে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে টাকা পৌছিয়ে দেওয়ার সব দায়িত্ব এই একটি প্রাণীকেই বহন করতে হতো।
আমাকে অধিকাংশ সময় নাম পরিবর্তন করে প্রদেশ ও প্রদেশের বাইরের বিভিন্ন জেলে বন্দী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যেতে হতো। বিচারাধীন নেতা-কর্মীদের আইনী লড়াইয়ের জন্য উকিল নিয়োগ করার প্রয়োজন হতো। এ ক্ষেত্রে আমি বার এসোসিয়েশনের কথা উল্লেখ না করে পারছি না। বার এসোসিয়েশন নিঃসন্দেহে কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য বার এসোসিয়েশন নিজেকে ওয়াক্ত করে দিয়েছিল।
মুজাহিদদের হেড অফিস ছিল আমার বাড়ি। ছিল মুজাহিদদের গোপন আস্তানা। কিন্তু কালক্রমে ঠিকানাটা আর গোপন রইল না। একসময়ে বাড়িটা সরকারের নজরে পড়ে গেল। আমি আমার স্বামী মকবুল জানের সঙ্গে পরামর্শ করি। বললাম, আমাদের বাড়িটা এখন সরকারের হিটলিস্টে এসে গেছে। এই ঠিকানা এখন আমাদের জন্যও নিরাপদ নয়। আমাদের আরেকটা ঠিকানা খুঁজে নেওয়া দরকার।
স্বামী আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, তার মানে তুমি কি আমাদের এই সখের বাড়িটা বিক্রি করে ফেলতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহর ফজলে এবং আপনার পরিশ্রমের ফলে আমাদের কোনো কিছুর অভাব নেই। আমরা এই বাড়িটা বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে অন্যখানে আরেকটা বাড়ি নির্মাণ করতে পারি।
মকবুল জান বললেন, আমাদের তো দুটি ছেলে আছে। তাদের জন্য এ বাড়িটা প্রয়োজন। আমি বললাম, আমাদের ছেলে দুটি নয় অনেক। তাদের জন্যও সরকারের দৃষ্টির আড়ালে একটি গোপন ঠিকানা প্রয়োজন। মকবুল জান কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, সংগঠনের জন্য যদি তোমার একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ঠিকানার একান্তই আবশ্যক হয়, তার জন্য নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে হবে কেন? আমরা একটি তৈরি বাড়ি কিনেই তো নিতে পারি। আমি বললাম, না রেডিমেড বাড়ি আমাদের গোপন ঠিকানা হতে পারে না। 'বাড়ি' অপেক্ষা আমার 'আন্ডারগ্রাউন্ড' বেশি প্রয়োজন। আপনি তো জানেন, সংগঠনের একজন নেতা বা কর্মী গ্রেফতার হলে সবকিছু লন্ডভণ্ড ও এলোমেলো হয়ে যায়।
মকবুল জান বললেন, তোমার বুঝ সঠিক এবং আমি তোমার মতামতকে সমর্থন করি। তুমি হেলাল আহমাদ বেগের সঙ্গে পরামর্শ করো, কোন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড প্রয়োজন। ওখানে গিয়ে আগে আমরা জমি ক্রয় করব। মকবুল জানের অনুমতি পাওয়ার পর আমি হেলাল আহমাদ বেগকে পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করি। শুনে হেলাল বেগ বেশ আনন্দিত হলো। হেলাল আমার পরিকল্পনার ভূয়সী প্রশংসা করল এবং তখনই আমাকে বামনায় জমি ক্রয় করার পরামর্শ দিল।
স্থান নির্ধারিত হওয়ার পর আমরা বামনায় জমি ক্রয় করলাম এবং বাড়ির নকশা তৈরি করলাম। বাড়ি তৈরির উপাদান ইট-বালি-সিমেন্ট ইত্যাদি পাঠিয়ে দিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ি তৈরি হয়ে গেল। এখন বাকি শুধু যে উদ্দেশ্যে বাড়িটা তৈরি করা, সেই আন্ডারগ্রাউন্ড আস্তানা। একাজে আমার পরিবারের বাইরের কাউকে কিছু জানতে দেওয়া সম্ভব নয়। আমার পরিবারের সব সদস্যের উপর আমার পূর্ণ আস্থা ছিল; এমনকি অবুঝ সায়েমা ও মাসাক্রাতের উপরও।
বাড়ি নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন সকল শ্রমিক বিদায় নিয়ে যায়, তখন আমি আমার আসল কাজ শুরু করি। এবার আমার এই বাড়িতে আন্ডারগ্রাউন্ড আস্তানা তৈরি করার পালা। তবে কাজ করতে হবে সম্পূর্ণ নিজেরা বাইরের কাউকে জানতে না দিয়ে। প্রতি রাতে বারোটার পর গ্রাউন্ড ফ্লোর তৈরি করার কাজ শুরু করি। চলে ভোর তিন-চারটা পর্যন্ত। জমি কেটে মাটি উঠানো এবং মাটি নিরাপদ স্থানে গোপনে সরিয়ে ফেলা ছিল অত্যন্ত দুরুহ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। আবার সারা রাতের হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও দিনের স্বাভাবিক কাজ আঞ্জাম দিতাম। আমার স্বামী যথারীতি কারখানায় যেতেন, সন্তানরা স্কুলে যেত আর আমি রান্নাঘর সামলাবার কাজে আত্মনিয়োগ করতাম।
হেলাল আহমাদ বেগ ছাড়া আর কেউ আমাদের এই আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতার খবর জানত না। হেলাল এসে মাঝে-মধ্যে কাজের অগ্রগতির খোঁজ নিত। চার কক্ষবিশিষ্ট গ্রাউন্ড ফ্লোরের খননকাজ শেষ হওয়ার পর মেঝে ও দেওয়ালের ঢালাইয়ের কাজের জন্য আমার পিতা ইউসুফ বেগের সহযোগিতা নিলাম। সিমেন্ট ও লোহার কাজ পর্যন্ত আব্বাজান আমাদের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে অনবহিত ছিলেন না।
এক মাস পর্যন্ত রাতের ঘুম আর দিনের আরাম হারাম করার বিনিময়ে যখন আন্ডারগ্রাউন্ড প্রস্তুত হয়ে গেল, তখন ভিতরে যাওয়া আসার রাস্তা তৈরির কাজে আমার স্বামী মকবুল জান ও হেলাল বেগ কারিগরির এমন পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলেন যে, পরবর্তী কালে চার চারটিবার এই বাড়িতে পুলিশি হানা হলো, একাধিকবার বাড়ি ঘেরাও করেও তল্লাশি চালানো হলো; কিন্তু পুলিশ আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ধান বের করতে পারেনি।
কিন্তু আমাদের অবহেলা ও দুর্ভাগ্যবশত একদিন যখন আমার এই সখের আন্ডারগ্রাউন্ড পুলিশের কাছে ফাঁস হয়ে গেল, তখন সেখান থেকে তারা বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। তারপর ভারতের বড়-বড় আর্মি ইঞ্জিনিয়ার, সিবিআই ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর অফিসারদের ছাড়াও মিলিটারি, বর্ডার সিকুরিটি ফোর্স, সেন্ট্রাল পুলিশ ফোর্সের বড়-বড় কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এল। দেখে তারা বিস্ময় প্রকাশ করতে বাধ্য হলো। রাতের পর রাত আরামের ঘুম হারাম করে পরিবারের লোকদের নিয়ে যে আন্ডারগ্রাউন্ড তৈরি করেছিলাম, বেশ কিছু দিন পর্যন্ত সেটি দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ আমার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে থাকল। আমার সব পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেল। অথচ কত আগ্রহ ও উদ্দীপনার সাথে আমি এটি তৈরি করেছিলাম।
আমার উদ্দীপনার অবস্থা এমন ছিল যে, যেন আমি মুজাহিদদের অস্ত্র রাখার জন্য গোপন ঠিকানা তৈরি করছি না, ইবাদত করার জন্য আমি মসজিদ নির্মাণ করছি। আন্ডারগ্রাউন্ড তৈরির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর যখন মুজাহিদদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অস্ত্রপাতি এনে সেখানে রাখা হলো, তখন আমার মনে হয়েছিল, আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এইমাত্র সফলতা অর্জন করে বিজয়ের ঝাণ্ডা উড্ডীন করেছি।
অস্ত্র তো আমি তার আগেও দেখেছি। কিন্তু আমার তৈরি আস্তানায় যখন অস্ত্র এসে গেল, তখন আমি পাগলের মতো এক একটি গান, এক একটি পিস্তল ও হ্যান্ডগ্রেনেড হাতে নিয়ে চুমো খেতে শুরু করি। সেসব অস্ত্রে দেখাশোনা করার ভার একজন মুজাহিদের উপর অর্পণ করি। আমার ফ্যামিলির লোকজন ব্যতীত এই একজন মুজাহিদই আমার এই গোপন আস্তানায় যেতে পারত। অস্ত্র সরবরাহ করা, হিসাব রাখা ইত্যাদি দায়িত্ব শাব্বীর আহমাদ ভাট নামক এই মুজাহিদই পালন করত। যাবতীয় কাজ অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথেই পরিচালিত হচ্ছিল।
সাধের গোপন ঠিকানার ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর আমার মনে স্বস্তি এল। পুলিশি হানা ও তল্লাশি চালনার সময় এই ঠিকানার ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকতাম। কারণ, ফ্লোরটি সূক্ষ্ম কারিগরির এমন একটি নমুনা ছিল, দেখানো না হলে নিজে দেখে তার অস্তিত্ব আবিষ্কার করার সাধ্য ছিল না। এই কারিগরির জন্য হেলাল আহমাদ বেগ আমাকে একজন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার অভিধায় ভূষিত করল। কিন্তু সত্য হলো, এই পরিকল্পনার নায়ক ছিল হেলাল নিজে আর আমরা ছিলাম শ্রমিক।
0 Comments