Header Ads Widget

▶️ যে কারণে ধর্মকে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নেয়া হারাম


  যে কারণে ধর্মকে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নেয়া হারাম

আমরা পবিত্র কোর'আন ও রসুলুল্লাহর পবিত্র জীবনাদর্শ থেকে ধর্মকে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নেয়া যে নিষিদ্ধ বা (হারাম) তার প্রমাণগুলো দেখাতে চেষ্টা করব। মুসলমানদের সমাজ কাঠামোয় ধর্মব্যবসা ও ধর্মব্যবসায়ী আলেম শ্রেণির অনুপ্রবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত যারা ধর্মীয় কার্যাবলীর দ্বারা স্বার্থসিদ্ধি করেছেন, যারা ইসলামের ভাষ্যকার বলে জনারণ্যে গৃহীত তারা স্বভাবতই আল্লাহ-রসুলের এতদসংক্রান্ত কঠোর সাবধানবাণীগুলো মানুষের কাছে প্রচার করেন না। এর কারণ এগুলো যদি ধর্মবিশ্বাসী জনমণ্ডলী জানতে পারে তাহলে তাদের ধর্মব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন জনগণ যেন ধর্মের বিষয়ে অজ্ঞ-মূর্খ থাকে, কেননা এ অজ্ঞতা-মূর্খতাই হচ্ছে তাদের ব্যবসায়ের পুঁজি।

এই যে তারা আল্লাহর থেকে আগত বিধানগুলোকে, শিক্ষাগুলোকে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ বজায় রাখার নিমিত্তে গোপন করে থাকেন, এই সত্য গোপন করাটা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। সত্য গোপন করা আর মিথ্যাচার করা একই কথা। সত্য মানুষকে শান্তির পথ দেখায়, জান্নাতের পথ দেখায়। যারা সেই সত্যকে গোপন করে তারা মানব সমাজের শান্তির অন্তরায়, তাদের পরকালীন জান্নাতের অন্তরায় অর্থাৎ জাহান্নামের কারণ। সামান্য কিছু টাকার জন্য যারা মানবজাতির এত বড় ক্ষতি সাধন করে তারা কত বড় অপরাধে অপরাধী এবং পরকালে তাদের কী কঠিন দুর্দশা হবে তা পবিত্র কোর'আনের বহু স্থানে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। এই কথাগুলোকেও তারা গোপন করে থাকে। যাদের মাতৃভাষা আরবি নয় তাদের কাছে কোর'আনের শিক্ষা গোপন রাখা সহজ। এমন কি যারা আরবি বোঝেন বা কোর'আনের অনুবাদ পড়েন তাদেরকেও ঐ আয়াতগুলোর ভুল ও মনগড়া তাফসির দাঁড় করিয়ে সেগুলোর প্রকৃত শিক্ষাকে আড়াল করেন ধর্মব্যবসায়ী মোফাসসের, মুফতি ও আলেমগণ।

পবিত্র কোর'আনে আল্লাহর বাণীকে, সত্যকে গোপন (conceal) করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন 'তাক্তমু, ইয়াকতুমুনা' এই শব্দগুচ্ছ। আর ধর্মের কাজ করে মানুষের কাছ থেকে তার বিনিময়ে তুচ্ছ পার্থিব মূল্য, বৈষয়িক স্বার্থ (small price, a gain) হাসিল করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন 'সামানান কালিলান'। এই শব্দ দুটো কোর'আনে বার বার এসেছে। এ কাজটি যে কেবল হারামই নয়, এটা যে কুফর, যারা এ কাজ করবে তারা যে আগুন খাচ্ছে, পরকালেও তারা যে জাহান্নামে যাবে, তারা যে আলেম নয় বরং পথভ্রষ্ট, পবিত্র কোর'আনের সুরা বাকারার ১৭৪-১৭৫ নম্বর আয়াতে এই সবগুলো কথা আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ও সরল ভাষায় উল্লেখ করেছেন যা বোঝার জন্য কোনো তাফসির বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না, সরল অনুবাদই যথেষ্ট। 

এ আয়াতে আল্লাহ বলেন, 

"বস্তুত, যারা আল্লাহ কিতাবে যা অবতীর্ণ করেছেন তা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে পার্থিব তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ঢুকায় না। এবং আল্লাহ হাশরের দিন তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। এরাই হচ্ছে সেই সমস্ত মানুষ যারা সঠিক পথের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল।" (সুরা বাকারা ১৭৪-১৭৫)

এই দীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি এই আয়াতে ঘোষিত হয়েছে। যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাবের বিধিবিধান ও শিক্ষাকে গোপন করে এবং দীনের বিনিময়ে অর্থ বা স্বার্থ হাসিল করে তারা-

(১) "আগুন ছাড়া কিছুই খায় না।" অর্থাৎ তারা যা কিছু খায় তা সমস্তই জাহান্নামের আগুন। তাদের এই অপকর্ম, গর্হিত কাজ তাদের ভক্ষিত সকল হালাল বস্তুকেও হারামে পরিণত করে, যেভাবে আগুন সব কিছুকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

(২) "হাশরের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না"। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাদের উপর কতটা ক্রোধান্বিত। আল্লাহ যার সাথে কথাও বলবেন না তার সেই মহাবিপদের দিন কী দুর্দশা হবে কল্পনা করা যায়?

(৩) "তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।" মানুষ মাত্রই পাপী, আল্লাহর ক্ষমার সরোবরে স্নান করেই মানুষ পাপমুক্ত হয়ে জান্নাতে যেতে পারে। আল্লাহর এই ক্ষমার হকদার হচ্ছে মুমিনগণ। কিন্তু যারা ধর্মব্যবসায়ী তারা গাফুরুর রহিম, আফওয়ান গফুর, গাফুরুন ওয়াদুদ, সেই অসীম প্রেমময় ক্ষমাশীল আল্লাহর ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।

(৪) "তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব"। এ হচ্ছে চূড়ান্ত কথা যা সব অস্পষ্টতাকে নস্যাৎ করে দেয়। ধর্মের কাজ করে স্বার্থহাসিলকারীরা জাহান্নামী এ নিয়ে আর কোনো সন্দেহের বা দ্বিমত পোষণের অবকাশ থাকে না।

(৫) "তারা হেদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে"। খুবই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য। আমরা আলেম সমাজের কাছে কেন যাই, কেন তাদের ওয়াজ, খুতবা নসিহত শ্রবণ করি? নিশ্চয়ই পরকালীন মুক্তির পথ জানার জন্য? হেদায়াহ শব্দের মানেই হচ্ছে সঠিক পথনির্দেশ। আল্লাহ বলেই দিচ্ছেন, যারা ধর্মের কাজের বিনিময় গ্রহণ করে তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট। একজন পথভ্রষ্ট মানুষ কী করে আরেক ব্যক্তিকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে? এ কি সম্ভব? 

সুতরাং ধর্মজীবী, পেশাদার আলেমদের কাছে যারা মুক্তিপথের সন্ধান করবে তারাও পথভ্রষ্টই হবে, তারাও জাহান্নামেই যাবে। সঠিক পথের দিশা পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ অকপটচিত্তে কোনো একটি গন্তব্যের পানে রওয়ানা করল। কোনো এক চৌরাস্তায় গিয়ে যদি সে ভুল পথটি বেছে নেয় তাহলে সে কি বাকি জীবন পথ চলেও তার গন্তব্যে পৌছতে পারবে? তার পথ চলাই সার হবে। সে মনে মনে ভাববে একটু পরেই আমি গন্তব্যে পৌঁছে যাব কিন্তু সে কোনোদিনই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না।

 

তেমনি ধর্মব্যবসায়ীদের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে কোনোদিনই একজন মহা পরহেজগার মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে না। তার সব আমল-আখলাকই দিনশেষে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, কেয়ামতের দিন তাকে হতাশা ঘিরে ধরবে। ধর্মব্যবসায়ী আলেম ও পীরদের ব্যাপারে আল্লাহ এ জাতিকে সতর্ক করার পাশাপাশি আখেরাতে তাদের কী শাস্তি দেওয়া হবে সেটা বলে দিয়েছেন। আজ ধর্মব্যবসায়ীদের একটি অংশ পীর সেজে বলছে, আমাদেরকে টাকা দাও, আমরা পরকালে তোমাদের নাজাতের উসিলা হব। 

আরেকটি অংশ তো নামাজ পড়িয়ে, ওয়াজ করে ইত্যাদি বিবিধ উপায়ে ধর্মকে ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করছেনই। এই উভয় শ্রেণি সম্পর্কে আল্লাহ পূর্বেই পবিত্র কোর'আনে সতর্কবাণী ঘোষণা করেছেন এই বলে যে, "অধিকাংশ আলেম ও সুফিবাদীরা মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। তারা যে সোনা রূপা সঞ্চয় করে, হাশরের দিন সেগুলো উত্তপ্ত করে তাদের ললাটে ও পার্শ্বদেশে ছ্যাঁকা দেওয়া হবে।” (সুরা তওবা ৩৪)

অথচ এইসব ভারসাম্যহীন সুফিবাদীদের কথায় কোটি কোটি মুরিদান নিজেদের জমি-জমা বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের পায়ে সর্বস্ব ঢেলে দিচ্ছে, পীরদেরকে ভোট দিচ্ছে, পীরদের আহ্বানে সংখ্যাধিক্যের অহঙ্কারে আস্ফালন করছে, বিভিন্ন উদ্ভট দাবি আদায়ের নামে দেশ ও জাতির বিপুল ক্ষতি সাধন করছে এবং দেশ অচল করে দেওয়ার হুমকি ধামকি প্রদর্শন করছে। সকল জাতীয় ধর্মব্যবসায়ীদের থেকে মুমিনদের ঈমান ও আমলকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন, "তাদের অনুসরণ করো যারা তোমাদের কাছে কোনোপ্রকার বিনিময় চায় না এবং যারা সঠিক পথে, হেদায়াতে আছে।” (সুরা ইয়াসীন ২১)

এই আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কার দুটো বিষয় (১) যারা বিনিময় চায় না, (২) যারা হেদায়াতে তথা সঠিক পথে রয়েছে তাদের কথা শুনতে ও মানতে, তাদের অনুসরণ করতে হুকুম করেছেন। এই হুকুম সত্ত্বেও যদি কোনো ব্যক্তি যারা বিনিময় নেয় এবং নিজেরাই পথভ্রষ্ট তাদের আনুগত্য, অনুসরণ করে তাহলে সে আল্লাহরই নাফরমানি করল। বর্তমানে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এভাবেই ধর্মব্যবসায়ীদের আনুগত্য করে আল্লাহর হুকুমকে লঙ্ঘন করে চলেছে।

আল্লাহর দৃষ্টিতে দীনব্যবসা কত ঘৃণিত তা উপলব্ধি করার জন্য সুরা বাকারার ১৭৪ নম্বর আয়াতের পূর্বের আয়াতটিও পড়া দরকার। মনে রাখতে হবে, কোর'আনের একেকটি বিচ্ছিন্ন আয়াত উল্লেখ করে অনেক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মানুষের ঈমানকে বিপথে চালিত করে। তাই একটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে হলে সেটার পূর্ণ রূপটাকে বিবেচনায় নিতে হবে। হাতির একটি শুঁড় পুরো হাতির প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং ভুল ধারণাই প্রদান করে।

সুরা বাকারা ১৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ কিছু বস্তুকে খাদ্য হিসাবে হারাম করেছেন, কিন্তু বলেছেন নিরূপায় হলে খেতে পার, আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। 

তিনি বলেন, "তিনি তো হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি অনন্যোপায় হয়ে, লোভের বশবর্তী না হয়ে বা সীমালঙ্ঘন না করে তা ভক্ষণ করে তাহলে তার কোনো গোনাহ হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। "(সুরা বাকারা ১৭৩)

লক্ষ্য করুন, এ আয়াতে আল্লাহ কয়েকটি বস্তু ভক্ষণকে হারাম করলেন, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে বা বিশেষ প্রয়োজনে কেউ যদি বাধ্য হয়ে খায় তাহলে তাকে তিনি ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী আয়াতে যেখানে আল্লাহ দীনের বিনিময়ে অর্থগ্রহণ করাকে 'আগুন খাওয়া' বললেন, তার পরে কিন্তু এটা বললেন না যে, অনন্যোপায় হলে, বিশেষ প্রয়োজনে খাওয়া যাবে এবং আল্লাহ সে অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। বরং বললেন, যারা এটা করবে তাদের সাথে তিনি রোজ হাশরে কথাই বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না। এতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, কোনো অবস্থাতেই, এমন কি মরে গেলেও আল্লাহর দীনের বিনিময়ে স্বার্থ হাসিল করা, অর্থ রোজগার করে, একে জীবিকার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। তাহলে আর কোন উসিলায় এই কাজকে জায়েজ করা হবে? সুতরাং অনেকে যে প্রশ্নটি তোলেন যে তারা তাহলে কী করে খাবে, সে প্রশ্নটিও অবান্তর। যারা পথভ্রষ্ট ও ধর্মব্যবসায়ী আলেম তারা কীভাবে জাতির ধ্বংস বয়ে আনে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ হলেও এখানে একটু উল্লেখ করে যেতে চাই। সুরা বাকারার ১৭৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ অল্প কথার মধ্যে সেই কারণটি উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, "যে কারণে এ শাস্তি তা হলো, আল্লাহ সত্যসহ কেতাব নাজিল করেছেন। এবং যারা এই কেতাবের বিষয়বস্তু নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি করে তারা চূড়ান্ত পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। (”সুরা বাকারা ১৭৬)

বস্তুত আল্লাহর দীন বিকৃত হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে দীনের বিষয়বস্তু নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি করা। এই কাজটি সাধারণ মুসলিমরা করেন না, এটা করেন যাদের দীন সম্পর্কে জ্ঞান আছে অর্থাৎ কথিত ধর্মজ্ঞানীরা। তাদের দীন সংক্রান্ত মতভেদের পরিণামে জাতিও তাদের অনুসরণ করে বহু ভাগে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেছে এবং এখনও নতুন নতুন মতবাদে দীক্ষা নিয়ে এক উম্মাহকে আরো টুকরো টুকরো করে ফেলছে। সামান্য তারাবির সালাত ৮ রাকাত না ২০ রাকাত, নবী নূরের তৈরি না মাটির তৈরি এসব অনর্থক বিষয় নিয়ে তারা শত শত বছর বিতর্ক করে যাচ্ছেন।

একজন জীবিত মানুষকে যখন দুইটি টুকরো করা হয় সে আর জীবিত থাকে না, তেমনি আজ ১৬০ কোটি উম্মতে মোহাম্মদীর দাবিদার জনগোষ্ঠী অর্ধপৃথিবী জুড়ে বিরাট লাশের মতো পড়ে আছে। হাজার হাজার ভাগে তারা খণ্ডবিখণ্ড। এই কাজটি করেছেন জাতির কথিত আলেম সাহেবরা, ফেরকা সৃষ্টিকারী ইমামগণ, দীনের অতি বিশ্লেষণকারী মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজতাহিদ, মুফতিগণ, ভারসাম্যহীন সুফিবাদী পীর, মাশায়েখ, বুজুর্গানে দীনেরা। তারা তাদের অনুসারী তৈরি করেছেন, রাসুলের (সা.) হাতে গড়া জাতি ছিন্নভিন্ন হয়ে প্রাণহীন লাশে পরিণত হয়েছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলামের প্রতিটি আমলের উদ্দেশ্য হবে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো আমল করা হলে সেটা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না, সেটার বিনিময়ও আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে না। উপরন্তু সেই লোক দেখানো আমল তার জাহান্নামের কারণ হবে। 

"রসুলাল্লাহ (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন এমন একজন 'আলেমকে' উপস্থিত করা হবে যে দীনের জ্ঞান অর্জন করেছে এবং মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছে এবং কোর'আন পাঠ করেছে। অতঃপর তাকে আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ করানো হবে। সেও তা স্বীকার করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন: আমার দেয়া নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? সে বলবে: আমি আপনার দেওয়া নেয়ামতের বিনিময়ে দীনের জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্যে কোর'আন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেন: তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এই জন্যে বিদ্যা শিক্ষা করেছিলে যাতে করে মানুষ তোমাকে আলেম বলে। আর এই জন্যে কোর'আন পাঠ করেছিলে যাতে লোকেরা তোমাকে কারী বলে। পৃথিবীতে তোমাকে এই সব বলা হয়ে গেছে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের আদেশ দেয়া হবে। অতঃপর নাক ও মুখের উপর উপুড় করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ।)

যেখানে শুধু আলেম বা কারী বলে পরিচিত হওয়ার বাসনা থাকার দরুন তার সব আমল ব্যর্থ সেখানে অর্থ রোজগারের নিয়তে আলেম দাবিদার ব্যক্তির প্রতি কী আচরণ করা হবে সেটাও আল্লাহর রসুল বলে গেছেন, 

"যে ব্যক্তি এমন কোনো জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, কিন্তু তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবু হোরায়রাহ রা. থেকে আবু দাউদ।)

বিদায় হজ্বের দিন আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, 

"আজ যারা এই সমাবেশে উপস্থিত নেই তাদের কাছে যারা উপস্থিত রয়েছ তারা আমার এই কথাগুলো পৌঁছে দেবে।" সত্য প্রচারের এই যে দায়বদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা উম্মাহর উপর তাদের নেতা, আল্লাহর শেষ রাসুল কর্তৃক অর্পিত হলো সেই দায়িত্ব কি উম্মাহ টাকার বিনিময়ে পালন করবে? এই সত্যের শিক্ষা প্রদানের সাথে কি অর্থের বা স্বার্থের কোনো সংযোগ থাকতে পারে? আল্লাহর রসুল যা কিছু করেছেন তা কি তিনি অর্থের বিনিময়ে করেছেন? নাউজুবিল্লাহ। তিনি নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নির্দেশে অতিবাহিত করেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য। পবিত্র কোর'আনে আল্লাহ তাঁকে এর বিনিময়ে কোনো আজরিন, খারজান, মা'লান অর্থাৎ মজুরি, সম্পদ, বিনিময় (payment, wealth, reward) গ্রহণ না করার জন্য অন্তত ছয়টি আয়াতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,

(১) এবং তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি করো না। এই বাণী তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র। (সুরা ইউসুফ ১০৪)

(২) বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই। (সুরা সা'দ ৮৬)

(৩) ...বল! আমি এর (দীনের) বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না। ( সুরা শুরা ২৩)

(৪) (হে মোহাম্মদ!) তুমি কি তাদের নিকট কোনো মজুরি চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই তো শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রেযেকদাতা। (সুরা মুমিনুন ৭২)

(৫) তবে কি তুমি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছো যা ওরা একটি দুর্বহ বোঝা মনে করে? (সুরা তুর ৪০)

(৬) তাঁদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। (সুরা আনআম ৯০)

শেষোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহ পূর্বের সমস্ত নবী-রসুলদের কথা উল্লেখ করে তাঁর শেষ রসুলকে (সা.) নির্দেশ দিচ্ছেন পূর্বসূরীদের পথ অনুসরণ করতে। 

সেই পথটি কী? সেটা হচ্ছে বিনা মজুরিতে আল্লাহর দীনকে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া। সমসাময়িক বিকৃত ধর্মের ধারক বাহকদের ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নেওয়ার দরুন আল্লাহর নবী-রসুলগণ ধর্মব্যবসায়ী আলেম পুরোহিত গোষ্ঠীর দ্বারা প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। নবী-রসুলরা তাদের এই ধর্মব্যবসাকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন, যার ফলে তারা রুজি রোজগার বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি সম্মান ও কর্তৃত্ব খোয়ানোর আশঙ্কায় নবী-রসুলদের বিরুদ্ধে জনগণ ও শাসক শ্রেণিকে খেপিয়ে তুলেছেন।

 নবী-রসুলগণ সকলেই তাদের জাতির উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় রয়েছে আল্লাহর কাছে। এটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তিনি যা তাদের সামনে উপস্থাপন করছেন তা নির্ভেজাল সত্য, হক্, এতে মিথ্যার কোনো মিশ্রণ নেই। কারণ প্রতিটি মিথ্যাই হয় উদ্দেশ্য-প্রণোদিত, তাতে মানুষের কোনো না কোনো পার্থিবস্বার্থ জড়িত থাকে। নবী-রসুলগণ যে কোনো পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন না সেটা সুস্পষ্ট করার জন্যই এ কথাটি বলতেন। বিনিময়গ্রহণ না করা তাঁদের সত্যতার, হাকিকতের বড় একটি নির্দেশক। এ বিষয়ে নবী-রসুলদের (আ.) বেশ কয়েকজনের ঘোষণা আল্লাহ দৃষ্টান্তস্বরূপ পবিত্র কোর'আনেও সন্নিবদ্ধ করেছেন। যেমন:

১. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট। (সুরা হুদ-২৯।)

২. হুদ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুদ্ধি (আকল) খাটাবে না?(সুরা হুদ ৫১)

৩. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো কেবল বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। (সুরা শুয়ারা ১০৯)

৪. সালেহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সুরা শুয়ারা ১৪৫)

৫. লুত (আ.) এর ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সুরা শুয়ারা ১৬৪)

৬. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: যদি তোমরা আমার কথা না শোনো তাহলে জেনে রাখ, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই নি। আমার প্রতিদান কেবল আল্লাহর নিকট এবং আমাকে মুসলিম (সত্যের প্রতি সমর্পিত) হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে। (সুরা ইউনুস ৭২)

৭. হুদ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাচ্ছি না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি এই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা। (সুরা শুয়ারা ১২৭)

৮. শোয়েব (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সুরা শুয়ারা ১৮০)

পাঠকবর্গকে অনুরোধ করব এই আয়াতগুলোর পূর্বাপর আয়াতগুলোও পবিত্র কোর'আন থেকে পড়ে নিতে, তাহলে দীনের এই চিরন্তন নীতি সম্পর্কে আল্লাহর যে নীতি তা আপনাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে ধরা দেবে। নবী-রসুলগণ আজীবন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন। তাদের বক্তব্যের সারকথা হচ্ছে এমন, "তোমরা একমাত্র আল্লাহকে মান্য করো। আমার কথা শোনো। আমি তোমাদের জাগতিক ও পারলৌকিক শান্তির ব্যবস্থা নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদেরকে অশান্তি থেকে, জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করতে চাই। তোমরা ভাবছ আমার স্বার্থ কী? না, আমার এই চাওয়ার পেছনে কোনো স্বার্থ নেই। আমাকে কোনো টাকা পয়সা তোমাদের দিতে হবে না। আমার এই কাজের বিনিময় আল্লাহর কাছ থেকে পাব।"

ধর্মের কোনো কাজ করে নবী ও রসুলরা যেমন পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না, তেমনি তাঁদের উম্মাহর জন্যও পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ নয়। তথাপি নবীদের বিদায়ের পরে জাতির মধ্যে অবধারিতভাবে জন্ম নিয়েছে দীনের পণ্ডিত, ধারক-বাহক, আলেম, পুরোহিত, যাজক নামধারী একটি অকর্মণ্য, কর্মবিমুখ, পরনির্ভরশীল শ্রেণি। বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষাভেদে তাদের বিভিন্ন উপাধি বা বিশেষণ ধরে ডাকা হয়ে থাকে। যাহোক, তারা নিজেদেরকে নবী-রসুলদের প্রতিনিধি, ওয়ারিশ বা স্থলাভিষিক্ত (ওরাসাতুল আম্বিয়া, Inheritors of the Prophets) বলে দাবি করতে থাকেন এবং জাতিও তাদের এই দাবি মেনে নেয়। কিন্তু এই তারা যে আম্বিয়ায়ে কেরামের, নবী-রসুলদের ওয়ারিশ বলে নিজেদের দাবি করে তাদেরই রেখে যাওয়া বিনিময় গ্রহণ না করে নিঃস্বার্থ ধর্মপ্রচার, প্রসার, ধর্মীয় কার্যাদি পরিচালনার নীতি নিজেদের বেলায় বহাল রাখলেন না। সেটাকে উল্টে দিয়ে নিজেরা ধর্মের লেবাস ধারণ করে স্বার্থহাসিলে তথা ধর্মব্যবসায় মত্ত হয়ে গেলেন যা আল্লাহ হারাম করেছেন।

আলেমরা নবীদের উত্তরসূরি, এটা আমাদের কথা নয়, স্বয়ং আল্লাহর রসুলের কথা। এর অর্থ হচ্ছে, নবীদের অবর্তমানে তারা মানুষের সামনে সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য তুলে ধরবেন। এটাই হচ্ছে আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার, এর দ্বারাই তারা তাদের জ্ঞানের হক আদায় করতে পারবেন। তারা জীবন গেলেও মিথ্যার সাথে আপস করতে পারবেন না, পার্থিব স্বার্থে সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করতে পারবেন না।

কিন্তু বাস্তবে পৃথিবী সর্বদাই অন্য চিত্র দেখতে পেয়েছে। বাস্তব অবস্থা দেখলে বরং মনে হতে পারে যে, আল্লাহ-রসুলের নাম ভাঙিয়ে খাওয়ার জন্যই আলেম-ওলামা শ্রেণিটির জন্ম হয়েছে। তারা একটু সম্মানের জন্য, দুটো টাকার জন্য, উন্নত জীবনমানের জন্য ক্ষমতাবান দুর্বৃত্তের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের সকল অন্যায়কে জায়েজ করে দিয়েছেন। তারা সমাজনেতাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মৌন থেকেছেন, খুব হেকমতের সাথে সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে স্বার্থ হাসিল করে গেছেন।

পূর্ববর্তী কিতাবধারী জাতিগুলোর সেই অপকর্মের ইতিহাস পবিত্র কোর'আনে আল্লাহ বারংবার উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ করার কারণ যেন রসুলাল্লাহর উম্মাহর আলেমরা পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের মতো না হন। 

পূর্বের প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল এর ধারকরা যেন মানুষকে পথ প্রদর্শনের বিনিময়ে পার্থিব স্বার্থ হাসিল না করেন। কারণ এর দরুন অর্থ প্রদানকারীর চাহিদামাফিক সত্য বিকৃত হয়ে যায়। 

যারা আল্লাহর কাছে করা এই অঙ্গীকারকে সামান্য মূল্যে অর্থাৎ নশ্বর পার্থিব মূল্যে বিক্রি করে দেয় তাদের প্রতি আল্লাহর হুঁশিয়ারি বার্তা অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ বনী ইসরাইলকে বলেছিলেন, "আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। তোমরা কেতাবের প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর তুচ্ছমূল্যে আমার আয়াত বিক্রি করো না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে গোপন করো না। "(সুরা বাকারা ৪১,৪২)

কিন্তু আল্লাহর এ হুকুমকে তারা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল এবং ধর্মকেই তাদের উপার্জনের মাধ্যম, স্বার্থসিদ্ধির উপকরণে পরিণত করেছিল। এর পরিণামে তারা আল্লাহর অভিশাপের বস্তুতে পরিণত হয়েছিল এবং শত শত বছর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে করুণার পাত্র হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল। এটা হচ্ছে পার্থিব শাস্তি। পরকালীন শাস্তি তো জমাই রয়েছে। এ কথাই আল্লাহ বলেছেন যে, "যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ যখন তাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই এটা মানুষের মধ্যে প্রচার করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে নিক্ষেপ করল এবং খুব কম মূল্যে বিক্রয় করল, অতএব তারা যা কিনল তা নিকৃষ্টতর।"(সুরা আলে ইমরান ১৮৭)

আল্লাহ সত্য, তথ্য গোপন করতে এতবার নিষেধ করেছেন, ধর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করাকে এতগুলো আয়াতে জাহান্নামের কারণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন, অথচ আমাদের সমাজের যারা ধর্মব্যবসায়ী আলেম রয়েছেন তারা এ সবগুলো আয়াতকেই গোপন করে তাদের হারাম উপার্জন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা তাদের ওয়াজে, খোতবায় ভুলেও এগুলো উল্লেখ করেন না। দীনের বিনিময় সংক্রান্ত যে আয়াতগুলো উল্লেখ করলাম, এমন আরও বহু আছে, সেগুলোও তারা গোপন করেন। 

এই সত্যগোপন ও দীনের বিনিময় গ্রহণ প্রসঙ্গে আল্লাহর কথা হলো, "কেয়ামতের দিন তিনি তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না, তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, পবিত্রও করবেন না। পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে। "(সুরা আলে ইমরান ৭৭)

এমন কঠোর সাবধানবাণী আল্লাহ আর কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে উচ্চারণ করেছেন কি? কেউ যদি তাদেরকে এই আয়াতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তারা হাজারো অপব্যাখ্যা, মিথ্যা ফতোয়া হাজির করে নিজেদের এই অবৈধ ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তাদের এই সত্য গোপনের ফলে মুসলিম জাতি বহু আগেই পথ হারিয়ে ফেলেছে। এখন তারা বিগত চৌদ্দশ' বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছে। তারা সর্বত্র মার খাচ্ছে, উদ্বাস্ত হচ্ছে, তাদের দেশগুলো ধ্বংস হচ্ছে। তাদের অপকর্মের পরিণতিতে গোটা জাতি পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং দুর্দশার শিকার হয়েছে।


🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

🌹🌹🌹🌹🌹🌹

🌹🌹🌹🌹🌹

🌹🌹🌹🌹

🌹🌹🌹

🌹🌹

🌹

Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp