Header Ads Widget

▶️ যারা নামাজে হাত বাধেনা তাদের দলীল সমুহ।

সালাতে হাত ছেড়ে অথবা হাত বেঁধে আদায় সম্পর্কে

সালাতে হাত ছেড়ে অথবা হাত বেঁধে আদায় সম্পর্কে 
আল কোরানের নির্দেশ মতে দ্বীনের কার্যক্রম মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা সহকারে সম্পাদন করতে হবে । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ- 

”তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে আল্লাহর উপাসনা করতে এবং দ্বীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করতে “।  (সূরা বাইয়্যেনাহ ৫)

সালাত সেইভাবেই কায়েম কর যেভাবে তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন আর যেভাবে ফিরিয়া আসিবে। (সূরা আরাফ  ২৯।)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতের দ্বারা আমরা স্পষ্ট ধারণা নিতে পারি যে ,“যেভাবে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন” অর্থাৎ যেভাবে আমরা মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসি তখন আমাদের উভয় হাত সোজা থাকে , বাঁধা অবস্থায় নয় এবং “যেভাবে তোমরা ফিরিয়া আসিবে” (অর্থাৎ মৃত্যুর পর কবরে উভয় হাত সোজা অবস্থাতেই রাখা হয়)। তাই নামাযকেও ঠিক একই রূপে আদায় করতে হবে ।

” সালাতে যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে ” (সূরা নিসা ১০২)  এখন বুঝার বিষয় সশস্ত্র থাকলে কিভাবে দাঁড়াতে হয়।

”প্রত্যেকেই জানে তাহার ইবাদতের ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি , যেভাবে এক পাখি আল্লাহর পবিত্রতা মহিমা ঘোষণা করে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা ছড়িয়ে ” (সূরা নূর ৪১)


পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াতের কারীমা থেকে আমরা আরও প্রমাণ পাই যে , পৃথিবীতে প্রত্যেকেই আল্লাহর ইবাদতের পদ্ধতি জানে। একটি পাখি যখন আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় থাকে তখনই সে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে। তাহলে পাখি যখন আকাশে উড়ে তখন তার ডানা মেলে উড়ে এবং তার দুটো ডানা সোজা রেখে উড়তে থাকে। যদি সে তার হাতকে (ডানা) বন্ধ বা বেঁধে রাখে তাহলে সে উড়ন্ত অবস্থাতেই পড়ে যাবে তখন সে তার ইবাদত থেকে সরে যাবে , থেমে যাবে তার ইবাদত ।
তাই নামযকেও ঠিক একই রূপে আদায় করতে হবে ।

”ইহুদীরা বলে- আল্লাহর হাত বাধা, তাদেরই হাত বাধা এবং যারা বলে তার জন্য উহারাই অভিশপ্ত, বরং আল্লাহর উভয় হস্তই প্রসারিত ” (সূরা মায়িদা ৬৪)

”যাহারা মোনাফেক নর ও নারী উহারা হাত বদ্ধ করিয়া রাখে” (সূরা তাওবা ৬৭)

প্রখ্যাত সাহাবী আবু হামিদ সায়েদী একদল সাহাবী যাদের মধ্যে আবু হুরায়রা দুসী, সাহাল সায়েদী, আবু ওসাইদ সায়েদী, আবু কাতাদাহ, হারেস ইবনে রাবয়ী এবং মোহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ ও ছিলেন ।
তাদের জন্য নবী (সাঃ) থেকে নামায পড়ার পদ্ধতি এবং ছোট-বড় মোস্তাহাবগুলোও বর্ণনা করেছেন, কিন্ত এরূপ কোন আমলের কথা (হাতের উপড় হাত বাঁধা) বর্ণনা করেন নি।
স্পষ্টতই যদি মহানবী (সাঃ) কখনো হাত বেধে নামাজ পরতেন তবে তারা সাহাবীগণ অবস্যই বর্ণনা করতেন এবং উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গকে স্বরণ করিয়ে দিতেন ।
সায়েদির হাদিসের অনুরূপ হাদিস হাম্মাদ ইবনে ঈসার মাধ্যমে ইমাম জাফর সাদেক (রঃ) এর ভাষায় হাদিস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে । সূত্র বায়হাকী সুনান-২/৭২, ৭৩, ১০১, ১০২। সুনানে আবু দাউদ-১/১৯৪ বাবে এফতেতাহে সালাত, হাদিস-৭৩০, ৭৩৬। তিরমিযি সুনান ২/৯৮ বাবে সেফাতুস সালাত (আফয়ালে সালাত) হাদিস-৮১)।





আল্লামা শাহ্ ইসমাইল (ভারত) তিনি বলেন, হাতকে সোজা রেখে রাসূল (সাঃ)-এর যুগে নামায আদায় হত । সূত্র – হেদায়াতুল মাহদী, আল্লামা ওয়াহেদ খান, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১২৬। তানভিরুল য়া’নাঈম (লাহর মুদ্রিত) আল্লামা ইসমাইল (ভারত দেওয়াবন্দ) পৃঃ ২১।

হাফেয ইবনুল কাইয়্যেম (রাহঃ) লিখেন, ইমাম মালেক (রহঃ) হাত ছেড়ে দিয়ে নামায পড়তে বলেছেন। ইমাম মালেক (রাহঃ)-এর অনুসারীরা এভাবে নামায পড়তে শুরু করে দিয়েছে। সূত্রঃ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ইদরীছ কাছেমী, পত্রিকা-ইনকিলাব, ঢাকা বৃহঃ বার, ২১ মে ২০০৯, ধর্ম দর্শন)। 


নামাযে হাত বাঁধা রাসূল (সঃ)-এর পছন্দ নয়
———————————–
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) কোমরে হাত রাখা পছন্দ করতেন না এবং বলতেন, ইহুদিরাই এরূপ করে। সূত্রঃ বুখারী ৩য় খন্ড পৃঃ ৪০১, হাঃ ৩২০০  আধুনিক প্রকাশনী ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) কোমরে হাত রেখে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন । সূত্রঃ বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৯৭, হাঃ ১১৪০, আধুনিক প্রকাশনী ।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সঃ) নিষেধ করেছেন নামাযের মধ্যে কোমরে হাত রাখিয়া দাঁড়াইতে। সূত্রঃ মেশকাত শরীফ ৩য় খন্ড, হাঃ ৯১৮-(৪) পৃঃ ১২, সন-২০০৬ ।

প্রচলিত নামাযে দাঁড়িয়ে নাভীর নীচে হাত বাঁধা হয় । এটাও সহিহ হাদিসের বিপরীত। সূত্রঃ বুখারী-১ম খন্ড, পৃঃ ১০২ / মুসলিম-১ম খন্ড , পৃঃ ১৭৩ / আবু দাউদ-১ম খন্ড , পৃঃ ১১০ / তিরমিযি-পৃঃ ৩৪/৩৫ / নাসাঈ-পৃঃ ১৪১ / ইবনে মাযাহ-পৃঃ ৫৯ / মিশকাত-পৃঃ ৭৫ / ইবনে খুজাইমাহ-১ম খন্ড, পৃঃ ২২৩ / মুআত্তা মুহাম্মাদ-পৃঃ ১৬০ ।

সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত হাদীসে আমরা পাই যে, হাত বেঁধে নামায পড়া মহানবী (সঃ)-এর পরে চালু হয়েছে। কারণ তিনি বলেন, ”মানুষকে যদি এ কাজের জন্য আদেশ করা হত ” যদি মহানবী (সঃ)-এর আদেশ হত তবে তাঁর সাথে সম্পৃক্ত করা হত। সূত্র ফাতহুল বারী ২/২২৪ এবং সুনানে বায়হাকী ২/২৮।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
”অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃদ্ধির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।”
(সূরা মারিয়াম ৫৯-৬০)

”সুতরাং দূর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদিগের , যাহারা তাহাদিগের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যাহারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে“। (সূরা মাউন ৪-৬)

রাসূল (সঃ) এর পরে নামায নষ্ট হতে চলেছে।
সূত্রঃ বুখারী ১ম খন্ড পৃঃ ২৪৯ , হাঃ ৪৯৯, আধুনিক প্রকাশনী।

আমর ইবনে যুরারা (রঃ) যুহরী (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি দামেশকে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর নিকট উপস্থত হলাম, তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন রাসূল (সাঃ) এর যুগে যা কিছু পেয়েছি তার মধ্যে কেবল মাত্র সালাত ছাড়া আর কিছুই বহাল নেই। কিন্ত সালাতকেও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে । 
বাকর (রঃ) বলেন , আমার কাছে মুহাম্মদ ইবনে বাকর বুরসানী (রঃ) উসমান ইবনে আবু রওয়াদ (রঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন । সূত্রঃ বুখারী ২য় খন্ড পৃঃ ৮, হাঃ ৫০৫, (ইফাবা) ৫০৪।



রাসূল (সঃ) বলেছেন , ”তোমরা সেইভাবে নামায আদায় কর যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ।” সূত্রঃ বুখারী-মিশকাত আরবী ৬৬ পৃঃ/ মিশকাত বাংলা আরাফাত পাবলেকেশন্স, ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৮ কিতাবুস সালাত, হাঃ ৬৬২।

হযরত আলী (আঃ)-এর নামায রাসূল (সঃ)-এর নামাযের সদৃশ্য পূর্ণ। অর্থাৎ রাসূল (সঃ) যেভাবে নামায পড়তেন হযরত আলী (রাঃ) ঠিক সেইভাবে নামায পড়তেন ও পড়াতেন। সূত্রঃ বুখারী-১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫৪, হাঃ ৭৪০, ৭৪২, আধুনিক প্রকাশনী। আর শিয়াগণ আলী রাঃ এর অনুরুপ সালাত আদায় করেন।

মুতাররাফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি এবং ইমরান ইবনে হোসাইন, আলী ইবনে আবু তালিবের পিছনে কোন এক সময় নামায পড়লাম। তিনি নামাযে সালাম শেষ করার পর ইমরান আমার হাত ধরে বললেন, এ ব্যাক্তি (আলী রাঃ) আমাদেরকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নামাযের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ নামায পড়ালেন। এবং বললেন এ ব্যাক্তি আমাদেরকে রাসূলের (সাঃ) নামাযের কথা স্বরণ করিয়ে দিলেন অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়তেন আলী (রাঃ) ও ঠিক সেই ভাবে নামায পড়ালেন । সূত্রঃ বুখারী-১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫৪, হাঃ ৭৮০, আধুনিক প্রকাশনী ।

রেওয়াতে পাওয়া যায় সাহাবারা কুফার মসজিদে আলাপ করিয়াছেন এতদিন পর আলীর ইমামতে সেইরূপ নামায পড়িলাম, যেভাবে আমরা রাসূলের (সাঃ) পিছনে পড়িয়াছি । সূত্রঃ মেশকাতুল মাসাবিহ , তাজরীদুল বুখারী।

তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পরে যেভাবে নামায আদায় করা হত সেটা কি বেঠিক ছিল? যদি ঠিক থাকত কিংবা রাসূলের (সাঃ) মতই নামায থাকত তাহলে কেন সাহাবারা বললেন, এ ব্যাক্তি (আলী রাঃ) আমাদেরকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নামাযের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ নামায পড়ালেন ও রাসূলের (সাঃ) নামাযের কথা স্বরণ করিয়ে দিলেন এবং কুফার মসজিদে আলাপ করছিলেন এতদিন পরে তারা রাসূলের (সাঃ) নামাযকে আলীর (রাঃ) এর দ্বারা ফিরে পেলেন হযরত আলীর (রাঃ) এর নামাযই ঠিক ।
তাহলে হযরত আলীর (রাঃ) খেলাফতের পূর্বে যেভাবে নামায পড়া হত সে নামায কি শুদ্ধ ছিল না?
যদি সঠিক থাকতো তাহলে এমন প্রশ্ন আসবে কেন?
মুয়াবীয়ার হুকুমতের সময় এক সাহাবা বলতেছিলেন, ইসলামের এক নামায ছাড়া আর সব কিছুইতো চলে গেছে, এই লোকটির আমলে (মুয়াবিয়ার) সে নামাযটাও গেল । সূত্রঃ তাজরিদুল বুখারী , মিশকাতুল মাসাবিহ্- নামায প্রসঙ্গে ।

রাসূল (সাঃ)-এর পর যারা হুকুমতে এসেছিলেন তারা পবিত্র নামাযকেও গড়মিল করে ফেলেছিলেন আর হযরত আলী (রাঃ) এর দ্বারা নামাযটি সঠিক ভাবে রাসূলের (সাঃ) এর নামাযের রূপ ফিরে পায় মুয়াবীয়ার আমলে সেটিও গেল ।
তাহলে এখানে বুঝা যাচ্ছে, হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফতের পূর্বেও নামাযে গড়মিল এবং পরেও গড়মিল করে ফেলেছে । একমাত্র হযরত আলী (রাঃ) ও তাঁর খেলাফতের সময়টিই সঠিক পথ এবং সঠিক নামাযের রূপ প্রকাশ পায়।

তাই এখানে বিবেচনা করে দেখা যায় যে, হযরত আলী (রাঃ) এর অনুসারীদের দ্বারাই সত্য পথের এবং সঠিক নামাযের সন্ধান পাওয়া যায় । তাই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আগেই বলে দিয়েছেন,  ”আলী (রাঃ) হকের সাথে এবং হক আলীর (আঃ) সাথে। সূত্রঃ তিরমিযি, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৯৮ তারিখে বাগদাদ লীল খাতিবুল বাগদাদ, ১৪ তম খন্ড, পৃঃ ৩২১।

তাই রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ওহে আমার আনসারগণ আমি তোমাদের এমন এক ব্যাক্তির খবর দিতেছি, যে তোমাদেরকে সত্য পথে চলার জন্য তাগীত করবে। এবং তোমরা যদি তার অনুসরণ কর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না এবং সেই ব্যাক্তি একমাত্র হযরত আলী (রাঃ), যিনি তোমাদের সত্য পথের দিশা দান করবেন।
সূত্রঃ কানজুল আমাল, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৫৬।

Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp