Header Ads Widget

▶️ নারীর পর্দা। আঃ হামিদ ফায়জি মাদানি। ভিডিও সহ

 

🌹পরদা🌹
ফুলের বাগান রক্ষা করতে হলে ভালো করে বেড়া দিয়ে রাখতে হয়, নইলে ছাগলে খেয়ে যায়। তারের জাল দিয়ে পুকুরের মোহনা বন্ধ করতে হয়। নচেৎ চঞ্চল মাছ বের হয়ে যায়। মহিলার সৌন্দর্যও যদি গোপন করা না হয়, তাহলে তাও নষ্ট হয়ে যায়। সোনার মূল্য আছে বলেই তাকে কোটা, আলমারী ও রুমের মধ্যে তালাবদ্ধ রাখা হয়। যাতে অপরের লালসা সৃষ্টি না হয়, চুরি ও ছিন্তাই না হয়ে যায়।

নারীর সৌন্দর্য তার দুশমন। এই জন্যই নারীর জীবনে নিরাপত্তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রহরী হল তার কুৎসিত চেহারা। কিন্তু পর্দা হলে তো তার প্রয়োজন থাকে না। উদ্ভিন্ন যৌবনা বোনটি আমার! তুমি পর্দা কর, নিরাপত্তা ও সম্মান পাবে প্রতিপালকের কাছে, ভালো মানুষদের কাছে।

কিন্তু কেমন পর্দা করবে তুমি? দুনিয়ার বুকে পর্দার ধরন-গঠন অনেক রকম। কোন্ পর্দা করলে তুমি নিরাপত্তা পাবে এবং তা দোযখের আগুন থেকে পর্দা স্বরূপ হবে? প্রথমে দেখ কত রকমের পর্দাঃ-



🌹১। ছানি পর্দা।🌹

এ পর্দা যারা করে, তারা বাইরে গেলে বোরকা পরে। বাইরের লোককে পর্দা করে। কিন্তু বেগানা আত্মীয়-স্বজনকে পর্দা করে না। যে কোন বেগানা লোক, ভাই, খালু,
ফোফা ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে দিব্যি ঘরে অর্থাৎ ভাতঘরে ঢুকতে পারে এবং সে ঘরের মহিলারা তাদেরকে এগানাই মনে করে। এমনকি বাড়ির কারো বন্ধুকেও তারা বেগানা মনে করে না। কারণ বেগানা মনে ক'রে বৈঠকখানায় জায়গা দিলে তাদেরকে পর মনে করা হয় তাই। পক্ষান্তরে অনাত্মীয় অপরিচিত লোক এলে তাদের পর্দা ঠিক থাকে। বরং তাদের কেউ বাড়ি প্রবেশ ক'রে গেলে আর রেহাই নেই। উত্তম-মধ্যম শুনিয়ে তাকে বাইরে বের করা হয়।



🌹২। নানী পর্দা।🌹

এ পর্দা যারা করে, তারা কেবল পরিচিত লোকদেরকে পর্দা করে। অপরিচিত লোকদেরকে পর্দা করে না। গ্রাম থেকে গাড়ি বের হয়ে গেলে এদের পর্দার রেঞ্জ শেষ হয়ে যায়। এদের অনেকে আবার পরিচিত লোক যদি আত্মীয়র মত হয়, তাহলে তাদেরকেও পর্দা করে না। যেমন কাজের গতিকে যাদেরকে ঘনঘন অন্দর মহলে প্রবেশ করতে হয়, তাদেরকে তারা পরোয়া করে না।

অবশ্য অনেকে আবার গ্রামের কাউকে পর্দা করে না, কেবল ইমাম সাহেবকে করে। আসলে এক নানীর গল্প থেকে বক্তা হুজুররা এই পর্দার নাম দিয়েছেন 'নানী পর্দা'। গল্পটা নিম্নরূপঃ-

এক দুপুরে নানী নাতিকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে গেল। নানী পর্দানশীন মহিলা। পুকুরটা রাস্তার ধারে। নাতিকে বলল, 'আমি গোসল করতে নামছি। লোক এলে বলবি।'

নাতিকে পাড়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নানী ঘাটে বসে গায়ের কাপড় খুলে সাবান মাখতে লাগল। ক্ষণেক পরে ঐ রাস্তায় একটি লোক আসতে দেখে নাতি হাকুলি-বিকুলি ক'রে বলে উঠল, 'নানী গো নানী! লোক আসছে।'

তা শুনে নানী শশব্যস্ত হয়ে গায়ে-মাথায় শাড়ী জড়িয়ে নিল। লোকটি পার হয়ে গেল।

ঘোমটার ফাঁকে নানী দেখল, লোকটি আর কেউ নয়, ও পাড়ার ফটিক। তাই নাতিকে

বলল, 'ও-হ! ও তো ও পাড়ার ফটিক রে। ভাল ক'রে দেখবি, লোক এলে বলবি।' কিছু পরে একজনকে আসতে দেখে নাতি বলে উঠল, 'নানী গো নানী! লোক আসছে।'

নানী সত্বর গায়ে মাথায় শাড়ী জড়িয়ে নিয়ে চোরা চাহনিতে দেখল, দুধ-ওয়ালা।
বিরক্ত হয়ে বলল, 'আরে বোকা! ও তো দুধ-ওয়ালা রে। প্রত্যেকদিন আমাদের ঘরে দুধ দিয়ে যায়, জানিস না? ভাল ক'রে দেখিস, লোক এলে বলবি।'

সামান্যক্ষণ পরেই মাথায় ঝুড়ি নিয়ে একজনকে আসতে দেখে নাতি বলল, 'নানী গো নানী! লোক আসছে।'

নানী গায়ে-মাথায় কাপড় নিয়ে পিছন থেকে তাকিয়ে দেখে বলল, 'ও তো চুড়ি- ওয়ালা রে। আমরা ওর কাছে চুড়ি পরি জানিস না?'

নানী সাবান মাখতে মশগুল হল, নাতি মনে মনে ভাবতে লাগল, তাহলে লোক আবার কাকে বলে? স্থির করল আর কিছু বলবে না। অকস্মাৎ গ্রামের ইমাম সাহেব সে রাস্তায় পার হচ্ছিলেন। নাতি আর কিছু বলল না। নানীকে খোলামেলা দেখে মৌলবী সাহেব গলা ঝাড়তে শুরু করলেন। নানী শশব্যস্ত হয়ে লজ্জাবতী লতার মত শাড়ী জড়িয়ে জড়সড় হয়ে গেল। মৌলবী সাহেব পার হয়ে গেলে সে রাগে অধীরা হয়ে পাড়ে এসে নাতির গালে ঠাস্ ঠাস্ ক'রে দু' চড় লাগিয়ে দিল। বলল, 'বাঁদর! লোক চিনিস্ না? তোর চোখ খারাপ হয়েছে নাকি? বললাম যে, লোক এলে বলবি!'

নাতি 'এ্যা এ্যা' ক'রে কাঁদতে শুরু করে দিল। বলল, 'তুমিই তো বললে, ফটিক লোক নয়, দুধ-ওয়ালা লোক নয়, চুড়ি-ওয়ালা লোক নয়। তাতেই আমি মনে করলাম, হয়তো বেটা ছেলেরা লোক নয়। তাতেই আমি আর বলি নাই। শুধু মৈলবীরা যে লোক তা তো আমি জানতাম না।'


এক গ্রামের মসজিদ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বর্ষার কাদায় একমাত্র রাস্তা অচল হয়ে পড়েছিল। পাড়ার লোকেরা এক ব্যক্তির ঘরের আঙিনা বেয়ে পারাপার করছিল। যেহেতু আমি মৌলবী সাহেব ছিলাম, সেহেতু এক ভাই আগে থেকেই সেই বাড়ি- ওয়ালার কাছে পার হওয়ার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু পাঁচিলহীন বাড়ির পর্দাবিবির মরদ


হঠাৎ করেই একজন জবাব দিল, 'কারণ, দুনিয়াতে মৌলবীরাই পুরুষ, আর বাকী সব কাপুরুষ তাই।'

আমি বলি, 'না। অনেক মহিলার নিকটে মৌলবীরাও পুরুষ নয়। আমরা এক আত্মীয়র বাড়ি গেলে, সে বাড়ির এক বেগানা মহিলা খোলা মাথায় শ্যাম্পু করা ছড়ানো

চুল নিয়ে আমাদের সামনে চা পেশ করল!' অথবা ঐ শ্রেণীর মহিলারা কবির এই কথায় বিশ্বাসী,

'সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!'

৩। লোকদেখানী বা ভয়ের পর্দা সাধারণতঃ এ পর্দা মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে ক'রে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহকে রাজি করা নয়; বরং লোকপ্রদর্শন। এরা মায়ের বাড়িতে কোন প্রকার পর্দা করে না। কিন্তু শ্বশুর গ্রামে পর্দাবিবি সাজে। এদের 'সদরেতে ছুঁচ চলে না, মফস্বলে হাতি চলে।' এরা 'হাট যায় বাজার যায়, তোলা পানিতে গোছল করে!' এদের মরদরা বারুইকে বলে, 'একবার চালের ঐ পাশে যাও, ম্যাডাম মার্কেট যাবে।'



🌹৩। এরই শামিল এয়ারপোটী পর্দাঃ-🌹

এই পর্দা সউদী আরবের কিছু মহিলা ক'রে থাকে; যারা দেশের ভিতরে পর্দায় থাকতে বাধ্য হয়। কিন্তু যখনই বাইরের কোন দেশ সফর করে, তখনই এয়ারপোর্টে এসে বোরকা ব্যাগে ভরে নেয়।

অনুরূপ বহু বেপর্দা মহিলা, যারা সরকারীভাবে পর্দাদেশ সউদী আরবে বসবাস করে। অতঃপর যখন এ দেশের এয়ারপোর্টে নামে তখন বোরকা ব্যাগ থেকে বের ক'রে অনিচ্ছা সত্ত্বেও জ্বালা মনে গায়ে জড়িয়ে নিতে বাধ্য হয়। আর যখন এ দেশ থেকে নিজের দেশে যায়, তখন এয়ারপোর্টে পৌঁছে স্বস্তির শ্বাস নিয়ে সানন্দ চিত্তে বোরকাটি খুলে ব্যাগে ভরে। অবশ্য এ দেশেও তারা ফ্লাটের ভিতরে অতি সতর্কতার সাথে আপন দেশের পরিবেশ বানিয়ে রাখে!

🌹৪। শরয়ী পর্দা🌹

শরয়ী পর্দা হল তাই, যা শরীয়তে করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, মহিলার আপাদ- মস্তক সর্বাঙ্গ শরীর বেগানা পুরুষের সামনে গোপন করতে হবে। বাড়ির ভিতরেও বেগানা পুরুষকে পর্দা করতে হবে এবং বাইরে গেলেও পর্দা করতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর নির্দেশ হল,
অর্থাৎ, হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসীদের রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব ৫৯ আয়াত)

বুঝতেই পারছ, পর্দা সম্ভ্রান্ত মহিলার চিহ্ন। সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মহিলাদের লেবাস। নবী যুগের মহিলারা সর্বাঙ্গ শরীর ঢেকে রাখতেন। অনেকে প্রয়োজনে কব্জি অবধি হাত ও পায়ের পাতা বের করা বৈধ বলেছেন। তোমাকে এই পর্দাই মানতে হবে। যথাসাধ্য সকল বেগানা থেকে পর্দা করতে হবে।


অনেক অপরিণামদর্শী আধুনিক টাইপের হুজুররা বলে থাকেন, গান-বাজনা শোনা জায়েয, বাড়িতে টিভি রাখা জায়েয, মেয়েদের চেহারা দেখানো জায়েয ইত্যাদি।

একজন ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ এক হুজুরকে বললেন, 'তোমার বউ সাধারণ মেয়েদের মত আসছে-যাচ্ছে, অথচ তুমি একজন মওলানা!' উত্তরে হুজুর বললেন, 'কি হবে তা? চেহারা দেখানো জায়েয!'

অধিকাংশ মহিলা মনে করে, চেহারা দেখানো জায়েয। যেহেতু সেই মহিলারা তাদের স্বামী, বাপ, ভাই বা অন্য কোন হুজুরের ফতোয়া শুনেছে। সুতরাং তারা তোমার ফতোয়া মানবে কেন? অথচ যাঁরা এ ফতোয়া দিয়েছেন, তাঁরা শর্তারোপ ক'রে বলেছেন, 'যদি ফিতনার ভয় না থাকে তাহলে।' কিন্তু এ শর্তের কোন পরোয়াই করা হয় না। বরং আরো একধাপ এগিয়ে তারা বলে, 'পর্দা তো নিজের কাছে!' অর্থাৎ, নিজে ঠিক থাকলে দেহের সৌন্দর্য দেখালেও অসুবিধে নেই। তারা মনে করে, ইঁদুর চোখ বন্ধ ক'রে রাখলেই বিড়াল তাকে দেখতে পাবে না। অথচ এরকম করলে ইঁদুর যে কত বড় বোকামি করবে, তা তারা ভাল মতই জানে।

পরন্তু আসল সৌন্দর্য চেহারাতেই। চেহারা দেখেই পুরুষ সুন্দরী-অসুন্দরী পছন্দ করে। চেহারাতেই আছে দু'টি চোখ; যাতে আছে যাদু। তা খোলা রাখলে বিপত্তি থেকে বাঁচার উপায় কোথায়?

চেহারা দেখানো জায়েয হলে তোমার বাড়িতে যে কেউ ঢুকতে পারে, যার তার সামনে খোলা চেহারা নিয়ে আসতে-যেতে পার, খোলা চেহারা নিয়ে পর-পুরুষের সাথে কাজ করতে পার। আর তাহলে মহান আল্লাহর এই বাণীর অর্থ কি?

‎‫وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ) অর্থাৎ, তোমরা তাদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাও। এ বিধান‬‎
তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। (ঐ ৫৩ আয়াত)

চেহারাই যদি তুমি আমাকে দেখাবে, তাহলে 'পর্দার অন্তরাল হতে' আবার কিছু চাইব কেন? তখন 'পর্দার অন্তরাল' আবার কোনটি? অনেকে বলে, 'অত পর্দা মানতে পারি না। আমরা হাজী নই, বড়লোকও নই।' তার মানে আমরা পাজি ছোটলোক, তাই আমাদের পর্দার দরকার নেই। অথচ এ কথা বললে তারা তোমাকে আখ-ঝোড়া করবে।



'বড়লোক নই' অর্থাৎ, বড়লোকদের মত যদি আমাদের বাড়িতে কল-পায়খানা থাকত, তাহলে পর্দা করতাম। নেই, তাহলে করব কিভাবে? আসলে মন থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার ইচ্ছা থাকলে, তা খুব সহজ। সাহাবীদের যুগে পানির যে কষ্ট ছিল, তা তোমার অজানা নয়। সুদূর প্রসারী এই মরুভূমীর দেশে দূর-দূরান্ত থেকে পানি এনে ঘরে রাখতে হত। মেয়েরা রাতে বাইরে গিয়ে নিজেদের প্রয়োজন সারত। কোথাও কোথাও যৌথ গোসলখানার ব্যবস্থা ছিল। তোমার দেশেও দেখ, বহু গরীব ঘরে পর্দার ব্যবস্থা আছে।

অবশ্য আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতা হওয়ার ফলে তুমি পর্দাকে গোঁড়ামি মনে করতে পার। একজন ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ এক লোককে বললেন, 'তোমার বউ মাথা খুলে মার্কেট যায়?' উত্তরে সে বলল, 'আসলে আমরা গোঁড়া মুসলমান নই।' তার মানে যারা পর্দা মানে তারা গোঁড়া মুসলমান। আর ওরা হচ্ছে স্বাভাবিক; বরং মেড়া ও ঢিলে মুসলমান।

পর্দার ব্যাপারে গোঁড়া হল তারা, যারা বউকে ঘর হতে আদৌ বের হতে দেয় না, প্রয়োজনে বাসে-ট্রেনে চাপতে দেয় না ইত্যাদি। গোঁড়া তারা নয়, যারা চেহারা ঢাকতে বলে, স্বামীর ভাই, দোলাভাই ইত্যাদিকে দেখা দেওয়া হারাম বলে। যেহেতু শরীয়তের বিধান সেটাই। আর যারা শরীয়তের বিধান সঠিকরূপে পালন করে, তারা গোঁড়া নয়। গোঁড়া হল তারা, যারা শরীয়তের বিধান সঠিকভাবে না জেনে যাকে তাকে 'গোঁড়া' বলে গালি দেয়।

একজন শুনল, 'ওদের বউরা খুব পর্দা।' বলল, 'পর্দা তাতি বাসে-ট্রেনে যায়- আসে, হাসপাতাল যায়, দেওরদেরকে দেখা দেয় কেন?'

ঐ দেখ, এই শ্রেণীর মানুষরা পর্দা না মানলেও, অপরের পর্দাতে খোঁটা দেয়, এদের মন গোঁড়ামিতে পরিপূর্ণ। কেউ যদি সম্পূর্ণ পর্দা না মানতে পারে, তাহলে কি যতটা সাধ্য ততটাও পালন করা যাবে না? নাকি ওদের মত, 'খাব তো পেট ভরে, মরব তো খাট ভরে' বলবে? অর্থাৎ, তাছাড়া খাবে না, মরবেও না? এ তো বড় আজীব কথা!
শরীরের কোন অঙ্গ যদি ডাক্তারকে দেখাতে হয়, তা বলে কি তাকে সর্বাঙ্গ খুলে দেখিয়ে দেবে? পায়ে কুকুরের গু' লেগে গেলে কি গোটা গায়েই মেখে নেবে? নাকি শুধু পা-টাই ধুয়ে নেবে? বোনটি আমার! মানার মন না থাকলে, আলাচালাই করে লোকে।

ট্রেনে বোরকা দেখে এক ভদ্রলোক বললেন, 'আপনারা এখনো সভ্যতার আলো পাননি?' বললাম, 'কেন শরীর খোলা না থাকলে ঐ আলো লাভ করা যায় না?' বললেন, 'এ যুগে আর ওসব চলে না।' বললাম, 'যে আলো পায় সে আলোকপ্রাপ্তা। যে মহিলার দেহের যত বেশী অংশে আলো পায়, সে তত বড় আলোকপ্রাপ্তা। যার দেহ সম্পূর্ণ নগ্ন, সে সবচেয়ে বড় আলোকপ্রাপ্তা! তাই নয় কি? সভ্যতা নগ্নতায় আছে, নাকি আদর্শ লেবাসে-পোশাকে?' তারপর আমাকে মৌলানা অথবা মৌচাক বুঝে তিনি নিরুত্তর হলেন।

বলবে, পর্দাবিবিরাও অনেক খারাপ আছে। বোরকা পরে কত মেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কত মেয়ের ঘোমটার ভিতরে খেমটার নাচ। তার জন্য কথায় বলে,

'দুষ্ট লোকের মিষ্ট কথা দীঘল-ঘোমটা নারী,
পানার নীচে শীতল জল তিনই মন্দকারী।'

হ্যাঁ, এ কথা মানতে কোনই অসুবিধা নেই। কত বোরকা-ওয়ালী, হাদীস-ওয়ালী খেমটার নাচ দেখাচ্ছে। আর তার মানে তো এই নয় যে, পর্দা ক'রে কোন লাভ নেই। পর্দা দুই প্রকার: মনে ও বাইরে। এক সঙ্গে উভয় পর্দা না থাকলে, সে পর্দার কোন দাম নেই। তুমি যদি বল, 'মনের পর্দা বড় পর্দা, বাইরের পর্দা ওঠাও রে।' তাহলে আমি বলব, তাতেও কোন ফল নেই। আর কেউ যদি বলে, মনের পর্দা না থাকলেও বাইরের পর্দা করলেই যথেষ্ট, তাহলে মহান আল্লাহ বলেন,

‎‫يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ‬‎

অর্থাৎ, হে আদম সন্তান (হে মানবজাতি)! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ অবতীর্ণ করেছি। আর সংযমশীলতার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা আ'রাফ ২৬ আয়াত)

যার মনে 'তাক্বওয়া', সংযমশীলতা ও লজ্জাশীলতা নেই, তাকে যতই ঢাকা দেওয়া হোক, সে হবে খুলনার মেয়ে। সে সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখলেও, তার চলনে-বলনে, ধরনে-ধারণে, আকারে-প্রকারে, ভাবে-ভঙ্গিতে নগ্নতা প্রদর্শন করবে।

মহানবী বলেন, "তোমাদের সবচেয়ে খারাপ মেয়ে তারা, যারা বেপর্দা,
অহংকারী, তারা কপট নারী, তাদের মধ্য হতে লাল রঙের ঠোঁট ও পা-বিশিষ্ট কাকের মত (বিরল) সংখ্যক মেয়ে বেহেস্তে যাবে।” (বাইহাক্বী)

সোনামণি আধুনিকা বোনটি আমার! বেগানার সামনে শরয়ী লেবাস পর, তুমি হবে আদর্শ মেয়ে।

আমার অন্যান্য বইয়ে শরয়ী লেবাসের কথা পড়েছ। তবুও সে লেবাসের কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করছিঃ-

১। লেবাস যেন দেহের সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখে। কেননা মহানবী বলেন, "মেয়ে মানুষের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে তোলে।” (তিরমিযী, মিশকাত ৩১০৯ নং)

২। যে লেবাস মহিলা পরিধান করবে, সেটাই যেন (বেগানা পুরুষের সামনে) সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, "সাধারণতঃ যা প্রকাশ হয়ে থাকে, তা ছাড়া তারা যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর ৩১ আয়াত) সুতরাং তোমার বোরকা যেন নক্সাখচিত না হয়।

৩। লেবাস যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া নজরে আসে। নচেৎ ঢাকা থাকলেও খোলার পর্যায়ভুক্ত।

একদা হাফসা বিন্তে আব্দুর রহমান পাতলা ওড়না পরে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর নিকট গেলে তিনি তাঁর ওড়নাকে ছিড়ে ফেলে দিলেন এবং তাঁকে একটি মোটা ওড়না পরতে দিলেন। (মালেক, মিশকাত ৪৩৭৫ নং)

মহানবী বলেন, “দুই শ্রেণীর মানুষ দোযখবাসী; যাদেরকে আমি (এখনো) দেখিনি। ---(এদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ সেই) মহিলাদল, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে, অপর পুরুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেও তার দিকে আকৃষ্ট হবে, যাদের মাথা (চুলের খোঁপা) হিলে থাকা উটের কুঁজের মত হবে। তারা বেহেস্তে প্রবেশ করবে না। আর তার সুগন্ধও পাবে না; অথচ তার সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ, মুসলিম)

৪। পোশাক যেন এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়। কারণ এমন ঢাকাও খোলার পর্যায়ভুক্ত এবং দৃষ্টি-আকর্ষী।

৫। যেন সুগন্ধিত না হয়। মহানবী বলেন, "সেন্ট বিলাবার উদ্দেশ্যে কোন মহিলা যদি তা ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যায়, তবে সে বেশ্যা মেয়ে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত ১০৬৫ নং)

৬। লেবাস যেন কোন কাফের মহিলার অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবী বলেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (লেবাসে-পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আবু দাউদ, মিশকাত ৪৩৪৭ নং)


৭। তা যেন পুরুষদের লেবাসের অনুরূপ না হয়। মহানবী সেই নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে।” (আবু দাউদ ৪০১৭, ইবনে মাজাহ ১৯০৪ নং)

৮। লেবাস যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, বিরল ধরনের লেবাস পরলে সাধারণতঃ পরিধানকারীর মনে গর্ব সৃষ্টি হয় এবং দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই মহানবী বলেন, "যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক লেবাস পরবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতে লাঞ্ছনার লেবাস পরাবেন।” (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৪৩৪৬ নং)

পর্দানশীন বোনটি আমার! নানীর মত সমুদ্র, নদী বা পুকুর ঘাটে অথবা খোলামেলা কোন সুইমিংপুলে গোসল করতে যেয়ো না।

আল্লাহর রসূল বলেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ গোসলখানায় প্রবেশ করতে না দেয়।” (আহমাদ, সহীহ তারগীব ১৬০নং) উম্মে দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি সাধারণ গোসলখানা হতে বের হলাম। ইত্যবসরে নবী-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমাকে বললেন, "কোথেকে, হে উম্মে দারদা?!" আমি বললাম, 'গোসলখানা থেকে।' তিনি বললেন, "সেই সত্তার শপথ; যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যে কোনও মহিলা তার কোন মায়ের ঘর ছাড়া অন্য স্থানে নিজের কাপড় খোলে, সে তার ও দয়াময় (আল্লাহর) মাঝে প্রত্যেক পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে।” (আহমাদ তাবারদীর কারীর সহীহ তারগীব ১৬২নং)

বলা বাহুল্য, বাড়িতে খাস গোসলখানা তৈরী করা ওয়াজেব। যদিও তা তোলা পানির হয়।



Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp