Header Ads Widget

▶️ মহিলাদের বয়ান। পর্ব-২

 


▶️ মহিলাদের বয়ান। পর্ব-১ এখানে....

হে মানুষ। এই পৃথিবীর সবকিছুই তোমার আল্লাহ তাআলা এই বিশাল পৃথিবী, দুনিয়ার বাইরে চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, আলো-বাতাস সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণে। আল্লাহ বলেছেন-

A يابَنِ آدَمَ خَلَقْتُ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ يا ابن آدم خلقت الاشياء لاجلك‎

অতঃপর বলেছেন-

‎‫اَ هُوَ لَكَ عَمَّنْ أَنتَ لَهُ - فَلَا تَشْتَغِلْ بِمَا।‬‎

তোমার জন্যে যা কিছু সৃষ্টি করেছি সেগুলোর ফাঁদে পড়ে তোমাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছি সে কথা ভুলে যেও না।

এই পৃথিবী আমাদের জন্যে। আর আমরা আল্লাহর জন্যে। আল্লাহ তাআলা বলেন, এই পৃথিবী তোমার সেবায় নিয়োজিত। কিন্তু তুমি এই কারণে আমাকে ভুলে যেও না। আমার অবাধ্য হয়ে পড়ো না। দুনিয়ার সকল সৃষ্টি তোমার সেবায় সদা নিয়োজিত। তুমি যদি এই পৃথিবীতে আমার অবাধ্য হও তবুও তুমি এই সেবা পাবে। সূর্য উঠবে, পৃথিবীব্যাপী আলো ছড়াবে। সূর্যের আলো জালেমের ঘরও আলোকিত করে, আলোকিত করে নীতিবানের ঘরও। ছোট ঘরেও সূর্যের আলো পৌঁছায়, আলো পৌঁছায় বড় ঘরেও। আকাশে চাঁদ ওঠে। চাঁদ জ্যোৎস্না বিলায়। আল্লাহর অনুগত জনপদে এবং অবাধ্য জনপদেও। এক কথায়, জগতের সকল সৃষ্টি এক সুশৃঙ্খল নিয়মে অবিরাম বয়ে চলছে। সকলেই মানুষের সেবায় নিয়োজিত। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রেখেছেন সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই পৃথিবীতে তিনি আমাদেরকে পাকড়াও করেন না। এটাই আল্লাহ তাআলার নিয়ম। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, আল্লাহ তাআলা জালিমদের জুলুম সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-

‎‫وَلَا تَحْسَبَنَّ اللهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّلِمُونَ -‬‎

তুমি কখনো মনে করো না জালিম সম্প্রদায় যা করে তা আল্লাহ জানেন না। [ইবরাহীম: ৪২।

আদ জাতির পরিণতি

তোমরা কি আদ সম্প্রদায়ের ইতিহাস ভুলে গেছো? আদ সম্প্রদায়কে মহাঝড় গ্রাস করেনিয়েছিল।

‎‫فتَرَى الْقَوْمَ فِيهَا صَرْعى 

- তখন তুমি উক্ত সম্প্রদায়কে দেখবে তারা সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে।‬‎

‎‫كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ -‬‎

সারশূন্য খর্জুর কাণ্ডের ন্যায়। [হাক্কাহ: ৭]

যখন আল্লাহ তাআলার ইশারা হয়েছে প্রবল বেগে বাতাস এসে সমকালীন দুনিয়ার শক্তিশালী একটি জাতিকে চুরমার করে রেখে গেছে। আল্লাহ তাআলা দেখিয়েছেন- এই আসমান ও দুনিয়ার সকল সৃষ্টি তাঁর মুঠোর ভেতর।

ইরশাদ হয়েছে-

‎‫يُمْسِكُ السَّمَواتِ وَالْأَرْضَ أَنْ تَزُولاً -‬‎

তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে সংরক্ষণ করেন যাতে তারা স্থানচ্যুত না হয়। [ফাতির: ৪১]

আরও ইরশাদ করেছেন-

‎‫الم تركيفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ - إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ - الَّتِي لَمْ يُخْلَقُ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ -‬‎

তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক কী করেছিলেন? আদ জাতির ইরাম গোত্রের প্রতি- যারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের। যার সমতুল্য কোন দেশে নির্মিত হয়নি। [ফাজর: ৬-৮]

ইতিহাস থেকে যতটুকু জাান যায়, আদ সম্প্রদায়ের একেকজন মানুষ চল্লিশ পঞ্চাশ হাত লম্বা হত। এতটুকু উঁচু দৈহিক শক্তির অধিকারী করে আল্লাহ তাআলা আর কোন জাতিকে সৃষ্টি করেননি। তারা তিনশ' বছর বয়সে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সাবালক হতো। তাদের গড় আয়ু ছিল ছয়শ' থেকে নয়শ' বছর। তাদের কোন অসুখ-বিসুখ হতো না। তাদেরকে বার্ধক্য আক্রান্ত করতো না। তাদের চুল সাদা হতো না, দাঁত দুর্বল হতো না। বয়সের ভারে তারা কখনও কুঁজো হতো না। অথচ যখন আল্লাহ তাআলা চেয়েছেন তখন শক্তিশালী বিশাল এ জাতিকে বাতাসের ছোঁয়ায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন।


সামুদ জাতির পরিণতি

সামুদ জাতির পরিণতি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-

 وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ -‎

এবং সামুদের প্রতি? যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল। [ফাজর: ৯)

‎‫وفرعون ذي الأوتاد -‬‎

এবং বহু সৈন্য শিবিরের অধিপতি ফিরাউনের প্রতি। [ফাজর: ১০] 

فَصَبَ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سُوْطَ عَذَابٍ -‎

এবং সেথায় অশান্তি বৃদ্ধি করেছিল; অতঃপর তোমার প্রতিপালক তাদের উপর শান্তির কষাঘাত হানলেন। [ফাজর: ১২-১৩]

‎‫وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ -‬‎

তাদের কাউকে কাউকে আঘাত করেছিল মহানীদ। [আনকাবুত: ৪০]

 مِنْهُمْ مَنْ أَغْرَ قُنَا .‎

এবং কাউকে কাউকে করেছিলাম পানিতে নিমজ্জিত। [আনকাবুত : ৪০] 

মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর পাক কিতাবে অতীতকালে অবাধ্যদের ঘটনা শুনিয়েছেন। বলেছেন, তোমরা পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখ- যারাই আমার অবাধ্য হয়েছে তাদেরকে আমি কীভাবে পাকড়াও করেছি। তোমাদের সাইন্স ও টেকনোলজি অতীতেও আমাকে দুর্বল করতে পারেনি, আমার হাত থেকে রক্ষা পায়নি, ভবিষ্যতেও পারবে না। কারণ, এই বিশাল পৃথিবী আমারই মুঠোয়।

‎‫إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا।‬‎

পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে। [যিলযাল: ১]

অর্থাৎ এখনও যদি কোথাও ভূকম্পন শুরু হয় তাহলে সে কম্পন থেকে এই দুনিয়ার কেউ নিজেকে, নিজের আবাসকে রক্ষা করতে পারবে না। এটাই হলো আল্লাহর কুদরত।

নূহ্ জাতির পরিণাম

হযরত নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়কে গ্রাস করেছিল উত্তাল পানি। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-

‎‫الأرض عيونا منْهُمِرٍ وَفَجَّرْنَا السَّمَاءِ بِمَاءٍ فَفَتَحْنَا أبواب الْمَاءُ عَلَى أَمْرٍ قَدْ قَدِرَ - فا التقى‬‎

ফলে আমি উন্মুক্ত করে দিলাম আকাশের দ্বার, প্রবল বারি বর্ষণে এবং মৃত্তিকা থেকে উৎসারিত করলাম প্রস্রবণ। অতঃপর সকল পানি মিলিত হলো এ পরিকল্পনা অনুসারে। [কামার: ১১-১২]

একটি হাদীসে আছে-আল্লাহ তাআলা যদি সেদিন কারো প্রতি অনুগ্রহ করতেন তাহলে সেই নারীর প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করতেন- যে নারী প্রবল বন্যায় পানি দেখে বাঁচার আকুতি নিয়ে দুগ্ধপায়ী নিষ্পাপ শিশুকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। পেছনে ধেয়ে আসছে পানি। সে ছুটছে সামনের দিকে। ছুটতে ছুটতে একটি টিলায় গিয়ে উঠলো। যখন টিলাটি পানি গ্রাস করেনিল তখন সে এর চাইতে উঁচু আরেকটি টিলায় আশ্রয় নিলো। 

যখন সেখানেও পানি পৌঁছে গেল তখন সে অঞ্চলের সর্বোচ্চ টিলায় গিয়ে আশ্রয় নিলো। ধীরে ধীরে পানি সেখানেও পৌঁছে গেল। অতঃপর পানি তার পা এবং ক্রমাগত তার বুক পর্যন্ত পৌছে গেল। সে তার সন্তানটিকে উপরে তুলতে তুলতে কাঁধে তুলে নিল। পানি যখন কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে গেল তখন সে তার সন্তানকে উপরে তুলে ধরলো। আমি মরে যাবো তবুও যেন আমার সন্তান বেঁচে যায়। আর ঠিক সেই সময়ই একটি ক্ষিপ্র ঢেউ এসে তার সন্তানকে ছিনিয়ে নিল। অতঃপর সন্তানটিকে এবং তার মাকেও ডুবিয়ে মারল।

যুগে যুগে যারা অবাধ্য হয়েছে এভাবেই তারা করুণ পরিণতির শিকার হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই গল্প শোনাচ্ছেন, যেন আমরা তাঁর শক্তিকে উপলব্ধি করতে পারি।

আল্লাহর শক্তি অসীম। তিনি চাইলে কাউকে আজই ধরতে পারেন। বিজ্ঞানীরা চাইলেই তাকে পরাজিত করতে পারবে না। রকেট দৌড়েও তাঁর শক্তি সীমার বাইরে যেতে পারবে না। আল্লাহ তাআলার একটি ঝড় সৃষ্টি জগতের সকল কৌশলকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তিনি আমাদেরকে দেখছেন, আমাদের সবগুলো কথা তিনি শুনছেন। তিনি আমাদের সবকিছু সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত। 

তিনি সবকিছু সর্বদাই করতে পারেন। সকল সৃষ্টি জগত তাঁর কজায়। তিনি নিরঙ্কুশ শাসন ও ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর কোন সহযোগী কিংবা পরামর্শক নেই। তিনি একক বাদশাহ। তাঁর কোন শরীক নেই। নেই কোন সমকক্ষ। তার কোন উপমা নেই- যাকে আমরা ভয় করবো। তাঁকে ব্যতীত কোন প্রভুও নেই যার কাছে আমরা আশা করবো। আল্লাহ ও আমাদের মাঝে এমন কোন মাধ্যমও নেই যাকে ঘুষ দিয়ে তাঁর পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। তাছাড়া এমন কোন উজিরও নেই, যিনি সুপারিশ করে আমাদের কাজ করিয়ে দিবেন। বরং তিনি সদা সর্বত্র বিরাজমান।

ইরশাদ হয়েছে-

‎‫اقرب إِلَيْهِ مِن حَبْلِ الْوَرِيدِ - مِنْ‬‎

আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী অপেক্ষা নিকটতর। [ক্বাফ: ১৬]

আরও ইরশাদ হয়েছে-

 كُلُّ شَيْ هَالِكَ إِلَّا وَجْهُهُ - -‎

[আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল। [ক্বাসাস : ৮৮]

আরও ইরশাদ হয়েছে-

‎‫كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَإِن وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ والإِكرام -‬‎

ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবকিছুই নশ্বর, অবিনশ্বর কেবল তোমার প্রতিপালকের সত্তা যিনি মহিমাময় মহানুভব। (আর-রাহমান: ২৬-২৭)


Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp