Header Ads Widget

নবীর হিকমা 🆚 আহাম্মকের বয়ান

নবীর প্রজ্ঞা বনাম আহাম্মকের বয়ান

নবীজি (সা.)-কে আল্লাহ হিকমা দিয়েছেন। কুরআন, হাদিস, সিরাত গ্রন্থে, ইসলামের ইতিহাসে নবীর উত্তম আদর্শ ও হিকমার বিবরণ আছে। আমাদের শায়খুল হাদিসরা দাবি করছেন হিকমা হচ্ছে হাদিস। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের জন্য তোমাদের রাসূলের মধ্যেই আছে উত্তম আদর্শ।'(

নবীজি (সা.)-কে আল্লাহ হিকমা দিয়েছেন। কুরআন, হাদিস, সিরাত গ্রন্থে, ইসলামের ইতিহাসে নবীর উত্তম আদর্শ ও হিকমার বিবরণ আছে। আমাদের শায়খুল হাদিসরা দাবি করছেন হিকমা হচ্ছে হাদিস।

 হাদিসে হিকমার বিবরণ আছে, তবে হাদিসকে হিকমা মনে করা নেহায়েত মূর্খতা। হিকমাহ মানে প্রজ্ঞা বা উইজডম-অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি, রিজনিং ক্যাপাসিটি এবং ডিসিশন মেকিং ক্যাপাবিলিটি। প্রতিটা জনপদে আল্লাহ নবী পাঠিয়েছেন। 

প্রতিটা জনপদের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান মানুষদের আল্লাহ নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন-যারা মানুষকে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, যুদ্ধ, রাজনীতি জীবন-জীবিকার মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। পৃথিবীতে আর কোনো নবী না আসলেও প্রজ্ঞাবান মানুষ আসবে, যারা মানবজাতির জন্য সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির নতুন নতুন দুয়ার খুলবে। এসব জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান মানুষরাই নবীদের উত্তরসূরি। যারা হবেন সমগ্র মানবজাতির জন্য বাতিঘর। 

কিন্তু আমরা মদিনা আল আজহারে পড়য়া শায়খুল হাদিসদের আলেম বা জ্ঞানী মনে করি কিন্তু হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডে পড়ুয়াদের আলেম মনে করি না। বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সমরবিদ, পদার্থবিদ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী-এরা কি তবে জাহেল বা মূর্খ?

জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যারা অবদান রেখে চলেছেন তাদের আমরা বলি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, তাই সেসব শিক্ষার সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। আর মদিনা-আল আজহারে যারা অসাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বা আলেমরা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন মোচ কদ্দূর বড় হবে, মহিলাদের মুখ খোলা রাখা যাবে কি না, কীভাবে পানি পান করতে হবে, কোন দোয়া পড়লে বেহেশতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে, কোন দোয়া পড়লে দোজখের আগুন হারাম হয়ে যাবে, কোন দোয়া পড়লে মুস্তাজাবুদ দাওয়া বনে যাবেন, ইমাম মাঙ্গী কোথায় আত্মপ্রকাশ করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

কুরআন, হাদিস, সিরাত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অমূল্য রত্নভাণ্ডার পায়ে ঠেলে হিকমার নামে এসব অর্থহীন, অবান্তর, অযৌক্তিক, অসার আলোচনায় কেন ডুবে থাকি? কারণ আল্লাহ নবীকে দিয়েছেন হিকমা আর আমাদের দিয়েছেন আহাম্মকি।

 আমেরিকান যোগাযোগবিদ ওয়াল্টার লিপম্যান (Walter Lippmann) বলেছেন, "প্রজ্ঞা বুঝতে হলেও একজন মানুষের প্রজ্ঞা থাকতে হয়, যদি শ্রোতারা বধির হয় তাহলে সংগীত কিছুই না।" "It requires wisdom to understand wisdom: the music is nothing if the audience is deaf."

একজন বধির মানুষকে মাইকেল জ্যাকসনের গান শোনানো আর মাহফুজ আহমেদের গান শোনানো একই কথা। আমাদের মতো আহাম্মকদের কাছে নবীর হিকমা আর আবু জেহেলের হিকমার তফাৎ নেই। 

আবু জেহেলরা যা যা করতো ঠিক একই কাজ আমরা মানছি নবীর সুন্নাহ নাম দিয়ে। আমরা নিজেরা কুরআন, হাদিস, সিরাত, ইতিহাস পড়তে আগ্রহী নই; চিন্তা, গবেষণা করতে রাজি নই; আমরা পালের ভেড়া হয়ে থাকতেই পছন্দ করি। কারণ এতগুলো ভেড়া তো ভুল হতে পারে না।

হিকমা নাম দিয়ে হাদিসকে কুরআনের সমকক্ষ বানিয়ে হাদিসের ভিত্তিতে ধর্মের বিধিবিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে। হাদিসে নবীজির প্রজ্ঞা এবং কুরআনের বাড়তি তথ্য আছে। সিরাত ও ইতিহাসের কিতাবেও নবীর প্রজ্ঞা ও অনুকরণীয় আদর্শ আছে। এ অধ্যায়ে নবীর হিকমা ও আমাদের আহাম্মকির তুলনামূলক আলোচনা করবো। 

সকল নবীদের আল্লাহ প্রজ্ঞা দিয়েছেন এবং নবীরাই আমাদের জন্য অনুমোদিত আদর্শ। কুরআনে আল্লাহ নবীদের প্রজ্ঞা ও উত্তম আদর্শের বিবরণ দিয়েছেন। সূরা নূহ, সূরা ইউনুস, সূরা ইউসুফ, সূরা মোহাম্মদ, সূরা হুদ, সূরা মরিয়ম, সূরা আম্বিয়া, সূরা আহযাব-কুরআনের পাতায় পাতায় নবীদের জীবনালেখ্য।

 


পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ইব্রাহীম ও তার সাথিদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।( ২ সূরা মুমতাহানা, আয়াত-৪।)

এখন ইব্রাহীম (আ.)-এর আদর্শ আমরা কোথা থেকে জানব? কুরআনে একটা সূরা আছে সূরা ইব্রাহীম। কুরআনের ৩০ পারার প্রায় এক পারা জুড়ে শুধু ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রজ্ঞা ও জীবনাদর্শের আলোচনা করা হয়েছে। ইব্রাহীম (আ.)- এর আপন পিতা, একেবারে ব্যক্তিগত পিতা একজন সার্টিফাইড মুশরিক। 

ইব্রাহীম (আ.)-এর পিতা একজন মুশরিক ছিলেন, নূহ (আ.)-এর আপন পুত্র কাফের ছিল-এসব কথা কুরআনে বলার উদ্দেশ্য কী? আল্লাহর কিতাবের বাইরে নবীর বাপের কথাও বিশ্বাস করবা না। আওলাদে রাসূল শুনলেই দৌড় দিবা না। নবীর বাপও মুশরিক হতে পারে, আওলাদে রাসূলও কাফের হতে পারে। আল্লাহ রাসূলদের অথোরাইজ করেছেন, এর বাইরে যাদেরকে সত্যায়িত করেননি তাদের বক্তব্য গ্রহণের মানদণ্ড হবে কুরআন।

ইব্রাহীম (আ.)-কে ফেরেশতারা কীভাবে সালাম দিয়েছেন, তিনি কীভাবে সালামের জবাব দিয়েছেন কুরআনে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। তারা (ফেরেশতারা) বললো সালাম, সেও (ইব্রাহীম) বললো সালাম। (সুরা হুূদ - ৩৩)

আমার একটি ভিডিওতে আমি 'সালাম এভরিওয়ান' বলায় কয়েকজন কমেন্ট করলেন যে এটা আবার কোন দেশি সালাম? এটা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সালাম। অনেকে সালামুন আলাইকুম বলে দেন, কারণ কুরআনে 'সালামুন আলাইকুম' বলে সালাম দিতে বলা হয়েছে। (সুরা আময়াম- ৫৪)

সালামুন আইকুম ১০০ ভাগ কুরআনসম্মত সালাম কিন্তু অনেকে আস্সালামু আলাইকুম বলাটাকে কুরআন অস্বীকার করার অভিযোগে কুফুরী বলছেন। আবার 'সালামুন আলাইকুম' বললেই অনেকে আহলে কুরআন ফেতনা বলে গালাগাল করেন। এ বিবাদের প্রধান কারণ আমরা আপাদমস্তক আহাম্মক আমরা দিনভর পীরের পিছে দৌড়াই কিন্তু কুরআন খুলে মিলিয়ে দেখি না। 

সালামুন আলাইকুম আর আস্সালামু আলাইকুম-এ দুয়ের মধ্যে অর্থ, ভাষা ও ব্যাকরণগত কোনো পার্থক্য নেই। কুরআনকে আল-কুরআন বলা যাবে না? তদুপরি কুরআনে নবীরা আস্সালামু বলেও সালাম দিয়েছেন।

মুসা (আ.) এবং হারুন (আ.) সালাম দিয়েছেন, আস্সালামু আলা মানিওবা আল হুদা। (সুরা তহা - ৪৭)

‎‫وَالسَّلَامُ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى‬‎

ঈসা (আ.) সালাম দিয়েছেন আসসালামু আলাইয়া।

‎‫والسَّلامُ عَلَى يَوْمَ وُلِدتُ وَيَوْمَ أُمُوتُ وَيَوْمَ أَبْعَثُ حَيًّا‬‎

সুতরাং সালাম, সালামুন আলাইকুম, আস্সালামু আলাইকুম সবই কুরআন এবং হাদিসসম্মত সালাম। (৬ সূরা মরিয়াম, আয়াত-৩৩)

সালাম মানে শুধু মুখে একটা মুখস্থ বাক্য বলা নয়; আন্তরিকভাবে শান্তি কামনা করা। অর্থাৎ পরিচিত-অপরিচিত সবার শান্তি কামনা করা, মঙ্গল কামনা করা একজন আদর্শ মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। শান্তি বলতে সকল প্রকার শান্তি বা প্রশান্তি বুঝায়। অর্থাৎ একজন ভালো মুসলমান পরিচিত-অপরিচিত সকলের প্রশান্তি ও আনন্দের কারণ হবে।

 সকলের শুভাকাঙ্ক্ষী হবে, সহযোগী হবে, মানুষকে ভালো কথা বলবে, উৎসাহব্যঞ্জক ও প্রশংসাসূচক কথা বলবে। সালামের জবাবও সালাম অর্থাৎ আপনার জন্যও প্রশান্তি কিন্তু আমরা কারো সালামের জবাব দেই 'আপনার তো সালামই হয় না, আগে সালাম দেয়া শিখেন, তারপর ভিডিও বানান', সালাম দিতে জানে না, আবার বই লেখে।


ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে প্রজ্ঞাপূর্ণ দোয়া করেছেন, আল্লাহ কুরআনে তা উল্লেখ করেছেন

‎‫رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَ الْحِقْنِي بِالصَّلِحِينَ‬‎

রাব্বি হাবলী হুকমাও ওয়া আল হিক্কনী বিস্ ছলেহীন, ওজআল লী লিছানা ছিদক্কিন ফিল আখিরীন।

‎‫وَاجْعَلْ لِي لِسَانَ صِدْقٍ فِي الْآخِرِينَ‬‎

'হে আমার রব, আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন।' এবং পরবর্তীদের মধ্যে আমার সুনাম-সুখ্যাতি অব্যাহত রাখুন। (সুরা শুয়ারা ৮৩-৮৪)

ইব্রাহীম (আ.)-এর আরো দোয়া আছে কুরআনে। কুরআনের দোয়া অধ্যায়ে আলোচনা করেছি।

ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে কী ভিক্ষা চাইতেন? প্রজ্ঞা বা উইজডম। তিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত থাকার আরজি পেশ করতেন। আমল মানে কর্ম। আমাদের কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের সাফল্য নির্ধারণ করবে। এই আমল মানে মুখস্থ দোয়া-দুরুদ নয়। সৎকর্ম মানে ভালো কাজ। 

ইব্রাহীম (আ.)-এর আবেদনপত্র বলছে তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রজ্ঞা, সৎকর্ম এবং পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি। কিন্তু আমরা ইব্রাহীম (আ.)-এর জীবনাদর্শ বলতে বুঝি সুন্নাতে খৎনার। এ খৎনার নাম দিয়েছি মুসলমানি; মুসলিম আর অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে খৎনা।

হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর খত্নার কথা পবিত্র কুরআনে নেই। কুরআনে ৬৭ বার হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর কাবা ঘর নির্মাণ এবং অন্য সব ব্যাপারে কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে; অথচ তাঁকে তাঁর গোপনাঙ্গের একটি অংশ কেটে ফেলতে বলা হয়েছে-তা কোথাও বলা হয়নি। 

আল্লাহর ওপর হযরত ইব্রাহীম (আ.)- এর বিশ্বাস এবং নিষ্ঠার কথাই গুরুত্বসহকারে বলা হয়েছে, যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। কিন্তু আমাদের কাছে খৎনা কেন মুসলমানির সমার্থক? কারণ আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.)-কে দিয়েছেন হিকমা আর আমাদেরকে দিয়েছেন আহাম্মকি।

আমাদের নবীজি (সা.)-এর প্রজ্ঞা ও উত্তম জীবনাদর্শের নির্ভুল বিবরণ একমাত্র কুরআনে আছে। সূরা মুহাম্মদ নামে কুরআনে একটা সূরা আছে। সূরা আহযাবে নবীজির একান্ত ব্যক্তিগত ঘরোয়া বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে। এছাড়া কুরআনের বিধি-নিষেধসংক্রান্ত আয়াতগুলো আল্লাহ নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। 

হে নবী! আপনি বলুন, হে নবী! আপনি পড়ুন, হে নবী! আপনি জানিয়ে দিন, তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করলে আপনি বলুন, আপনি করুন, আপনি করবেন না, নবীর জন্য এটা করা পাপ হবে না, নবীর জন্য এটা করা উচিত হবে না। কুরআন নবীজিরই জীবনালেখ্য।

নবীজি (সা.)-এর দাড়ি ছিল বা তাঁকে দাড়ি রাখার নির্দেশ কুরআনে দেয়া হয়নি কিন্তু আমাদের কাছে নবীর প্রধান অনুকরণীয় আদর্শ হচ্ছে দাড়ি।

নবীজি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করছেন। তাঁর প্রচণ্ড মন খারাপ এর আগে তিনি তায়েফে গিয়েছেন, তায়েফবাসী তাঁকে পাথর মেরেছে। মদিনাবাসী বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাঁর আর যাওয়ার জায়গা নেই। আল্লাহ নবীজিকে দোয়া শিখিয়ে দিচ্ছেন যে, হে নবী! আপনি আমার কাছে এই দোয়াটা করুন-

"রাব্বী আদখেলনী মুদখালা ছেদকিন, ওয়াখরিজনি মুখরাজা ছেদকিন, ওজাআল লী মিল্লাদুনকা সুলতানান নাসিরা।"

(এবং বলুন, "আমার প্রভু! আমাকে একটি সম্মানজনক প্রবেশদ্বার এবং একটি সম্মানজনক প্রস্থান দিন এবং আমাকে আপনার নিজের পক্ষ থেকে একটি সমর্থনকারী কর্তৃত্ব দিন।") - ড. মোস্তফা খাত্তাব, স্পষ্ট কুরআন।

হে আল্লাহ, আমাকে মদিনায় সম্মানিত করেন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমার জন্য সাহায্যকারী আনসার প্রেরণ করেন। এ দোয়ার বদৌলতে আল্লাহ নবীজিকে মদিনার বাদশাহ বানিয়েছেন। মদিনাবাসীদেরকে আল্লাহ আনসার বা সাহায্যকারী বানিয়ে দিয়েছেন। 

কিন্তু কুরআনের রেডিমেইড দোয়া আমাদের মনঃপুত হয় না। আবু হুজায়ফা থেকে আবু কুরাইজা, তার থেকে আবু নুসাইবা-এভাবে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে একটা সহিহ দোয়া খুঁজে বের করছি; আর কুরআনের পাতায় পাতায় আল্লাহ নবী-রাসূলদের তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া বর্ণনা করছেন, তা আমাদের পর্যাপ্ত মনে হয় না।

হজরত আদম (আ.) আল্লাহর আদেশ অমান্য করে যখন আল্লাহর বিরাগভাজন হলেন, তিনি কাঁদতে কাঁদতে পেরেশান হয়ে গেলেন। কোনো দোয়ায় কোনো কাজ হয় না। শেষে যে দোয়ায় আরশে আযিমের দুয়ার খুলেছে সে পাসওয়ার্ড আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে তখন ক্ষমা করেছেন যখন তারা বললো-

‎‫رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَسِرِينَ ٣٣ 

(রব্বানা জ্বলামনা আনফুছানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়াতার হামনা লানাকুনান্না মিনাল খছিরীন)‬‎

'হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।" (৮ সূরা আরাফ, আয়াত-২৩।)

হজরত নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে কী দোয়া করতেন?

সূরা হুদের ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ আমাদের শেখাচ্ছেন হজরত নূহ (আ.)- এর দোয়া (সে বলল)-

‎‫ربانی اعوذ یک أَنْ أَسْلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلَّا‬‎

'রাব্বী ইন্নী আউযুবিকা আন আসআলাকা মা লাইছা-লী বিহি ইলম'

'হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। ( সূরা হুদ, আয়াত-৪৭।)

নূহ (আ.)-এর মতো মর্যাদাবান নবী, যার নামে কুরআনে একটা সূরা আছে-সূরা নূহ। তিনি জানতেন যে তিনি সব বিষয়ে জানতেন না। আর আমরা নিজেদের আল্লামা দাবি করি। আল্লামা শব্দের অর্থ সর্বজ্ঞ; এটা আল্লাহর উপাধি।



হজরত জাকারিয়া (আ.)-এর সন্তান ছিল না, তিনি কোন দরগায় মানত করলেন। আল্লাহ বলে দিচ্ছেন-

সেখানে জাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল-

(হুনালিকা দা'আ জাকারিয়া রব্বাহু)

‎‫رَبِّ حَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةٌ طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ ٣٨‬‎

(রাব্বি হাব লী মিল্লাদুনকা যুররিয়াতান তাইয়্যেবাতান, ইন্নাকা সামীউদ দু-আ)

"হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। ( সূরা আল ইমরান, আয়াত-৩৮)

এই দোয়ায় আল্লাহ তাঁকে একটি পুত্র সন্তান দিয়েছেন। যেনতেন পুত্র সন্তান নয়, আল্লাহর আরেক পয়গম্বর হজরত ইয়াহিয়া (আ.)।

হজরত মূসা (আ.)-কে আল্লাহ কিতাব দিয়ে বললেন, আপনি আমার কিতাব প্রচার করেন। মূসা (আ.)-এর হাঁটু কাঁপা শুরু হলো। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে, আল্লাহর কিতাবের কথা বললেই ফেরাউনের দল তাঁকে আহলে কুরআন, মুতাজিলা, মুনকারিনে হাদিস, ওরিয়েন্টালিস্ট, আমেরিকার দালাল বলে ধাওয়া দিবে। 

তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন-

‎‫رَبِّ الشرح لِي صَدْرِي 

রাব্বিশ রাহলী ছদরী

‎‫وَيَسْرْ لِي أَمْرِى 

ওয়া ইয়াছ ছিরলী আমরী

‎‫وَاحْلُلْ عُقْدَةٌ مِنْ نِسَانى 

ওয়াহলুল উক্কদাতাম মিললিসানী

‎‫يَفْقَهُوا قَوْلِي 

ইয়াফকাহু কাওলী

'হে আমার রব, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন (যাতে আমি নির্ভয়ে, নিঃসংশয়ে সত্য প্রচার করতে পারি) যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। (১১ সূরা ত্ব-হা, আয়াত, ২৫-২৯।)

এ কথাটাকে ভাবানুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-

অন্তর মম বিকশিত করো

অন্তরতর হে।

নির্মল করো উজ্জ্বল করো,

সুন্দর করো হে।

জাগ্রত করো, উদ্যত করো,

নির্ভয় করো হে।

মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে। (গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।)

এই কবিতার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। 

আর আমাদের গবেষণার বিষয় মুসা (আ.) তার ভাই হারুন (আ.)-এর চুল ও দাড়ি ধরে টেনেছেন। অর্থাৎ হারুন (আ.)-এর দাড়ি ছিল। সুতরাং দাড়ি রাখার কথা ফরজ। যদিও এই যুক্তিতে চুল রাখা ফরজ হয়নি। কারণ আল্লাহ মূসা (আ.)-কে দিয়েছেন হিকমা, আর আমাদেরকে দিয়েছেন আহাম্মকি।

হজরত আইয়ুব (আ.)-কে আল্লাহ ধুলায় মিশিয়ে দিলেন। তাঁর সম্মান, সম্পদ, সন্তান, স্বাস্থ্য, সবকিছু আল্লাহ নিয়ে গেছেন শুধু নিশ্বাসটুকু ছিল। তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন-

‎‫اني مستني الضر وانت أرحم الرحمين له‬‎

(আন্নী মাছছানিয়াদ দুররু ওয়াআনতা আরহামুর রাহিমীন) 'আমি না হয় জগতের সবচেয়ে দুঃখী মানুষ কিন্তু আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (১৩ সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৮৩।)

হজরত আইয়ুব (আ.)-এর দোয়ায় আল্লাহ লজ্জিত হয়ে গেলেন এবং তাঁকে তার সব ফিরিয়ে দিলেন। আবার সোলায়মান (আ.)-কে আল্লাহ এমন বাদশাহি দিলেন-তিনি নবীর ছেলে নবী, বাদশাহর ছেলে বাদশাহ। সমস্ত সৃষ্টিকুলের ওপর আল্লাহ তাঁকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন। 

মানুষ, জিন, ডাইনোসরের মতো প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড প্রাণী নিয়ে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর আর্মি। এই প্রতাপশালী আর্মি যখন দুনিয়া কাঁপিয়ে মার্চ করছিল তখন একটা পিঁপড়া বললো, সোলায়মানের আর্মি আসছে, ভাগো; পায়ের নিচে পড়ে মরবি। 

হজরত সোলায়মান (আ.) পিঁপড়ার এ কথা শুনেছেন এবং এই পিঁপড়ার জন্য তিনি তাঁর আর্মি হল্ট করলেন।



আজব দুনিয়া গজব কাহিনি বলছি না, কুরআনের কাহিনি বলছি। কুরআনে একটা সূরা আছে-সূরা নামল। এই নামল শব্দের অর্থ পিঁপড়া। যেনতেন পিঁপড়া নয়; যে পিঁপড়ার জন্য বাদশাহ সোলায়মান তার আর্মি হল্ট করেছেন এবং সেখানে বসে তিনি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এক দোয়া করলেন। সূরা নামলের ১৯ নাম্বার আয়াত- رب أوزعني أن أشكر نعمتك التي العنت على وعلى والدي وأن أعمل صالحا ترضة وأدخلني برحمتك في عبادك الصلحين‎

(রাব্বি আও যি'ঈনী আন আশকুরা নি'এ মাতাকাল্লাতী আনআমতা আলাইয়া ওয়াআলা ওয়ালেদাইয়া ওয়া আন আ'মালা ছলিহান তারদাহু ওয়া আদখিলনী বিরাহমাতিকা ফী ঈবাদিকাস ছলেহীন)

'হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছো, তার জন্য আমাকে শুকরিয়াবনত করো। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি, যা তুমি পছন্দ করো। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো।'

এই কথাগুলোকে ভাবানুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-

'আমার মাথা নত করে দাও হে, 

তোমার চরণধুলার তলে।

 সকল অহংকার হে আমার

 ডুবাও চোখের জলে। 

আমারে না যেন করি প্রচার

 আমার আপন কাজে; 

(ওয়া আন আ'মালা ছলেহান তারদা-হু) 

তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ

আমার জীবন-মাঝে।

 (ওয়া আদখেলনী বেরাহমাতিকা ফী এবাদিকাস ছলেহীন)

আমারে আড়াল করিয়া দাঁড়াও

হৃদয় পদ্মদলে।

সকল অহংকার হে আমার

ডুবাও চোখের জলে। 

(গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।)

খেয়াল করুন আল্লাহ নবীদের জীবনাদর্শের মাধ্যমে আমাদের কী শিক্ষা দিচ্ছেন?

আইয়ুবের মতো ধুলায় মিশে গেলেও হিম্মত হারাবা না, বিশ্বাস হারাবা না। আবার সোলায়মানের মতো বাদশাহ হলেও একটা পিঁপড়াকে নজরান্দাজ করবা না।

সোলায়মান (আ.)-এর মতো বাদশাহ হলে পিঁপড়া তো পিঁপড়া; এই দুনিয়াটাকে আমাদের কাছে টেনিস বলের মতো মনে হতো। 

দুঃসময়ে ধৈর্য ধরা কঠিন, কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন সুসময়ে বিনয়াবনত থাকা। শক্তির একটা নিজস্ব ধর্ম আছে। আপনার কাছে যখন অর্থ, খ্যাতি বা ক্ষমতা থাকবে তখন আপনি বুঝবেন নিষ্কলুষ- নিরহংকার থাকা কত কঠিন। 

আমরা অহংকার করি না। কারণ আমাদের অহংকার করার মতো কিছু নেই। পৃথিবীতে অহংকারী হওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার ছিল হযরত সোলায়মান (আ.)-এর। তিনি দুনিয়াতেও বাদশাহ, আখিরাতেও বাদশাহ। 

সোলায়মান (আ.)-এর মতো বাদশাহী আল্লাহ ফেরাউনকেও দিয়েছিল কিন্তু ফেরাউন শুকরিয়া আদায় করা তো দূরের কথা, নিজেকেই খোদা দাবি করেছে। আল্লাহ তাকে দুনিয়াবাসীর সামনে অপদস্ত করেছে।

নবীরা আল্লাহর কাছে বিনয়ী থাকার, সৎকর্মশীল থাকার, নির্ভীক সত্যনিষ্ঠ থাকার প্রার্থনা করতেন এবং একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।

অহংকার আমাদের দুনিয়া-আখিরাত বরবাদ করে দেয়। আমাদের অহংকার বা বিনয় প্রকাশিত হয় আমাদের কর্মে। হিটলার-মুসোলিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে জার্মানি-ইতালিকে অজেয় পরাশক্তি বানিয়েছে কিন্তু তাদের অন্ধ অহমিকা আর প্রতিশোধের নেশা তাদেরকে ইতিহাসের আবর্জনায় পরিণত করেছে।

হিটলার-মুসোলিনির উত্থান-পতনের বিপরীতে বিশ্বজয়ের অব্যর্থ রণনীতির যে উপমা ইসলামের নবী রেখে গেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

রাসূল (সা.)-এর পথে কাঁটা দেয়া বুড়ির সেবা করার গল্প আমরা শুনি বিভিন্ন ওয়াজে। তবে এ কাজ করার জন্য রাসূল (সা.)-এর মতো মহামানব হওয়ার দরকার নেই। একজন সাধারণ ভালো মানুষও এমনটাই করবে। 

একজন বুড়ি, তাও আবার অসুস্থ, তার খোঁজ-খবর নেয়া তো একেবারে সাধারণ ভদ্রতা। মরণাপন্ন বুড়ির ওপর প্রতিশোধ নেয়া একজন সাধারণ ভদ্রলোকের জন্যও বেমানান কিন্তু প্রবল প্রতাপশালী শত্রুকে শুধু ক্ষমা নয়, প্রধান মিত্রে পরিণত করেছেন তার অসংখ্য নজির ইসলামের নবী রেখে গেছেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিপক্ষ দলের সেনাপতি আবু জাহেল মারা যাওয়ার পর ওহুদ, খন্দকসহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল যুদ্ধ অভিযানে সেনাপতি ছিলেন আবু সুফিয়ান।

 ওহুদের যুদ্ধে রাসূল (সা.)- এর চাচা মহাবীর আমীর হামজা (রা.)-এর মৃতদেহের বুক চিরে কলিজা বের করে খেয়েছে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা। কিন্তু রাসূল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর ঘোষণা দিলেন-যারা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নিবে তারা নিরাপদ। তৎকালীন আরবে এটা ছিল কাউকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখানোর রীতি। 

শুধু আবু সুফিয়ান নয়, আবু সুফিয়ান যাদের আশ্রয় দিবে তারাও নিরাপদ। এটা শুধু যুদ্ধ কৌশল নয়, রাসুল (সা.) তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় আবু সুফিয়ানের মতো প্রধান শত্রুকে মিত্রে পরিণত করেছেন। আবু সুফিয়ানের ছেলে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) প্রায় দুই দশক মুসলিম জাহানের খলিফা ছিলেন এবং পরবর্তীতে উমাইয়ারা প্রায় একশ' বছর মুসলিম বিশ্ব শাসন করে। এই উমাইয়া বংশ মানে আবু সুফিয়ান বংশ।

ওহুদের যুদ্ধে খালেদ বিন ওয়ালিদের পাল্টা আক্রমণে মুসলমানরা বিপর্যস্ত হয়। সে খালেদ বিন ওয়ালিদকে শুধু ক্ষমাই করেননি, রাসূল (সা.) তাঁকে সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর তলোয়ার উপাধিতে সম্মানিত করেন। তিনি মুসলিম জাহানের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হয়েছেন। শতাধিক যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় এনে দিয়েছেন দিগ্বিজয়ী মহাবীর খালেদ বিন ওয়ালিদ।

সম্প্রতি পাকিস্তানের এক ফুলব্রাইট ফেলো বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষককে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার পক্ষে মামলা লড়াইয়ের কারণে তার আইনজীবীকে গুলি করে হত্যা করে। ধর্ম অবমাননা বা ব্লাসফেমি: (পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড, বিবিসি বাংলা, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯।)

 কিন্তু রাসূল (সা.)-এর প্রধান প্রতিপক্ষ আবু জেহেলের পুত্র ইকরিমা বদর-ওহুদ যুদ্ধে তো অনেক সাহাবীকে হত্যা করেছেনই, মক্কা বিজয়ের সময়ও হারামের সীমানায় অর্থাৎ যুদ্ধ নিষিদ্ধ এলাকায় মুসলমানদের ওপর ইকরিমা ব্যর্থ আক্রমণ করে।

 আবু সুফিয়ানসহ মক্কার সকল কাফেররা সাধারণ ক্ষমা পেলেও ইকরিমার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে। ইকরিমা মক্কা থেকে পালিয়ে যায়। তার স্ত্রী এসে তার হয়ে নবীজির কাছে ক্ষমা চাইলে নবীজি ইকরিমাকে মক্কায় ফিরে আসতে বললেন। ইকরিমাকে ফিরে আসতে দেখে নবীজি সকলকে বললেন-ইকরিমা ইবনে আবু জেহেল আসছে। তোমরা তার সামনে তার বাবাকে গালি দিও না।

হজরত ইকরিমা (রা.) নবীজির এ অবিশ্বাস্য ক্ষমায় অভিভূত হয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লা! আমি ওয়াদা করছি-ইসলামের বিরুদ্ধে যত শক্তি আর অর্থ ব্যয় করেছি, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আমি তার দ্বিগুণ করবো। 

রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ইয়ারমুকের মহাযুদ্ধে সেনাপতি খালেদ বিন ওয়ালিদ যখন পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন হজরত ইকরিমা বললেন-আল্লাহর রাসূলের সাথে আমার কিছু ওয়াদা আছে। সেনাপতি খালেদ বিন ওয়ালিদের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে হজরত ইকরিমা দুর্ধর্ষ রোমান সৈন্যদের দুর্ভেদ্য চক্র ভেদ করেন, অতিমানবের মতো লড়াই করে প্রতাপশালী রোমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিতিয়েছেন হজরত ইকরিমা ইবনে আবু জেহেল।

 খালেদ বিন ওয়ালিদের পরিবর্তে ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল মুসলিম জাহানের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন। ইকরিমার মতো বিষবৃক্ষকে যিনি দেবদূতে পরিণত করতে পারেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তার চেয়ে শক্তিমান নেতা আর কে? ভিন্নমত সত্ত্বেও তাদের মঙ্গল কামনা করতে পারাই সৎকর্ম। ইকরিমার মতো জঘন্য যুদ্ধাপরাধীকে নিঃশর্ত ক্ষমা ও সেনাপতির মর্যাদা দিতে পারাই নবীর হিকমা।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-

'যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?"

পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেয়া প্রজ্ঞাবান মানুষদের তালিকায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রথম। কারণ তিনি উটের দুধ পান করতেন, খেজুর খেতেন, তিনি বগলের নিচের পশম টেনে টেনে তুলতেন, তিনি জয়তুনের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করতেন, ডান হাতে পানি পান করতেন। আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা আহাম্মক উল্লাহরা বয়ান করছি হিকমা উল্লাহর জীবনাদর্শ।

হাদিসের কিতাবে নবীজির প্রজ্ঞার বিবরণ আছে; তবে তা আমাদের নজরে পড়ে না। কারণ আমরা খুঁজছি উটের মুতের ফজিলত আর ঢিলা-কুলুপের ফাজায়েল। হাদিসের সাত সমুদ্র সেচে আমরা কুরআনের সাথে সম্পর্কহীন, দুনিয়া-আখিরাতে গুরুত্বহীন কিছু বিতর্কিত বিষয় তুলে আনি।

"টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরলে সে জাহান্নামে যাবে'-এটা কোনো প্রজ্ঞাবান মানুষের কথা হতে পারে? নবীজি (সা.) এমন কথা বলেননি। তিনি বলেছেন যারা অহংকারবশত টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে তারা আল্লাহর কৃপাদৃষ্টি পাবে না। 

এই হাদিসের কী-ওয়ার্ড হচ্ছে 'অহংকারবশত'। হাদিসের পরের অংশে লেখা আছে হজরত আবু বকর (রা.) বললেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার নিজেরও তো টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলে থাকে। রাসূল (সা.) বললেন, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার করে এরূপ করে। (সহিহ বোখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস-৫৩৬৮।)

অহংকার করে যদি কেউ একটা টুপিও মাথায় দেয়, তবুও সে গুনাহগার। অহমবোধ থেকে যদি কেউ নামের আগে আল্লামা নামের শেষে মাদানী, আজহারী লাগায়, সেও আল্লাহর কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে। অহংকার অমার্জনীয় অপরাধ। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ( সূরা নিসা, আয়াত-৩৬।)

কিন্তু টাখনুর নিচে কাপড় নামা আর হাঁটুর ওপরে কাপড় ওঠা নিয়েই আমাদের রাজ্যের গবেষণা। কারণ নবীকে আল্লাহ হিকমা দিয়েছেন আর আমাদেরকে দিয়েছেন আহাম্মকি।

❤️❤️❤️

আরো পড়ুন..

  1. সালাম, সালামুন আলাইকুম, নাকি আচ্ছালামু আলাইকুম কোনটি ঠিক? ইসলাম আমাদেরকে এর কোনটি শিখিয়েছে?
  2. ▶️ যারা নামাজে হাত বাধেনা তাদের দলীল সমুহ। 
  3. ▶️ যে কারণে ধর্মকে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নেয়া হারাম
  4. ▶️ মসজিদে কি দান করা উচিৎ? দানের সঠিক জায়গা কোনটি? 

 ❤️❤️❤️

হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সময়ের বেশির ভাগ মানুষ চুরি-ডাকাতি করে উপার্জন করতো। বাণিজ্য কাফেলা বা মুসাফিরের সব কেড়ে নিত, নারীদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। 

ইব্রাহীম (আ.) বললেন, তোমরা যে লুট পাট করে উপার্জন করো, তোমাদের এই উপার্জন তো হালাল নয়, তোমরা এই হারাম কামাইয়ে কেনা কাপড় পরে আল্লাহর ঘরে আসবে না। পরবর্তীতে আবু জাহেলরা ইব্রাহীম (আ.)-এর হাদিসের ভিত্তিতে লেংটা হয়ে কাবা তাওয়াফ করা শুরু করে।

 কারণ তাদের কামাই হারাম আর ইব্রাহীম (আ.) বলেছে হারাম কামাই দিয়ে কেনা কাপড় পরে আল্লাহর ঘরে আসবে না। তাহলে উপায় কী? ল্যাংটা। হজরত ইব্রাহীম (আ.) বুঝাতে চেয়েছেন যে তোমরা হালাল উপার্জন করো। 

তিনি তো আর বুঝতে পারেননি যে আহাম্মকের দল ল্যাংটা হয়ে কাবা তাওয়াফ করবে কিন্তু চুরি-ডাকাতি ছাড়বে না।

❤️❤️❤️


Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp