সালাম, সালামুন আলাইকুম, নাকি আচ্ছালামু আলাইকুম কোনটি ঠিক? ইসলাম আমাদেরকে এর কোনটি শিখিয়েছে?
সালাম, সালামুন আলাইকুম, নাকি আচ্ছালামু আলাইকুম কোনটি ঠিক? ইসলাম আমাদেরকে এর কোনটি শিখিয়েছে? |
প্রশ্নঃ- সালাম, সালামুন আলাইকুম, নাকি আচ্ছালামু আলাইকুম কোনটি ঠিক? ইসলাম আমাদেরকে এর কোনটি শিখিয়েছে?
উত্তরঃ- "সালাম" অর্থ শান্তি বা শান্তি কামনা করি। "সালামুন আলাইকুম" অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং "আচ্ছালামু আলাইকুম" শব্দের অর্থও আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
অর্থের দিক বিবেচনা করলে সবগুলোর একই অর্থ প্রকাশ পায়। কিন্তু তিনটির মধ্যে কোনটি সঠিক। এবং কোনটি আমরা ব্যাবহার করবো। যদি বলেন কোনটি ভালো? তাহলে নিঃসংকোচে বলবো আল্লাহ যা আমাদের শিখিয়েছেন সেটাই ভালো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন-
تِلْكَ ءَايَٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَ ٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ يُؤْمِنُونَ
এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমি তা যথাযথভাবেই তোমার কাছে তিলাওয়াত করছি। অতএব তারা আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর আর কোন হাদিসে বিশ্বাস করবে?। (সুরা জাসিয়া-৬)
হাদিসে এসেছে সালামুন আলা মুহাম্মাদ নিয়মিত খুতবায় বলতেন,
إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ،
নিশ্চয় সত্য হাদিস হল আল্লাহর কিতাব। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৫৭৮)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার নাযিল করা কিতাবে সালাম বিষয়ের শব্দকে নিজেই পবিত্র অভিবাদন ও বরকতময় বলেছেন।
যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةً طَيِّبَةًۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ। এভাবে আল্লাহ তোমাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার। (আন নুর ২৪ঃ৬১)
প্রশ্নঃ- তাহলে এবার আমাকে বলুন আল্লাহ তায়ালার শেখানো সেই পবিত্র ও বরকতপুর্ণ অভিবাদন কোনটি?
উত্তরঃ- মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্পষ্টভাবে আমাদের শিখিয়েছেন যে, আমাদের একে অপরের মধ্যে কোন বাক্যের মাধ্যমে অভিবাদন আদান প্রদান করতে হবে। প্রথমে জানুন কিভাবে অভিবাদন প্রদান করতে হয়।
আসুন এবার আমরা জেনে নেই কিভাবে আমরা একে অপরের মধ্যে অভিবাদন প্রদান করবোঃ-
১/- মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
وَإِذَا جَآءَكَ ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِـَٔايَٰتِنَا فَقُلْ سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْۖ
আর যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তুমি বল, "সালামুন আলাইকুম" (তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। (আনয়াম ৬ঃ৫৪)
"এখানে একটা কথা পরিষ্কার যে "যারা আমার আয়াত সমুহের উপর ইমান আনে অর্থাৎ যারা কুরআনের উপর ইমান এনেছে তারা যদি কেউ আসে তাদেরকে বলতে হবে সালামুন আলাইকুম। আর যারা কুরআনুল কারিমকে বিশ্বাসই করেনা তাদের পবিত্র অভিবাদন বলতে কিছু নেই।
২/-ফেরেস্তাগণের অভিবাদন প্রদানের পদ্ধতিও আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন -
ٱلَّذِينَ تَتَوَفَّىٰهُمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ طَيِّبِينَۙ يَقُولُونَ سَلَٰمٌ عَلَيْكُمُ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
ফেরেশতা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র অবস্থায় এই ব’লে যে, "'সালামুন আলাইকুম" তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে ‘আমাল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (নাহল ১৬ঃ৩২)
অর্থাৎ যখন ফেরেস্তা কোন পবিত্র বা নেক ব্যাক্তির জান কব্জ করেন এবং মৃত্যু ঘটান তখন সেই ব্যাক্তিকে "সালামুন আলাইকুম" বলে অভিবাদন প্রদান করেন এবং জান্নাতের সুসংবাদ দেন।
এই আয়াত গুলো এতই স্পষ্ট যে, যেকোন ব্যাক্তি তা পাঠ করলেই বুঝতে পারবে। হোক সে শিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত, ছোট অথবা বড়। এই আয়াতগুলো শুধুমাত্র তারাই বুঝবেনা যারা এই কুরআনের প্রতি ইমান রাখেনা বা যারা কুরআনকে হিংসা-বশত অস্বীকার করে। অথবা যারা আল্লাহর কিতাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি এবং যারা নিজেদের দলমত প্রতিষ্ঠায় ব্যাস্ত। একমাত্র তারাই বুঝতে ও মেনে নিতে শত অজুহাত দার করাবে।
৩/- ফেরেস্তাগণ জান্নাতি লোকদের "সালামুন আলাইকুম" বলে অভিবাদন জানাবেন।
وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ رَبَّهُمْ إِلَى ٱلْجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَٱدْخُلُوهَا خَٰلِدِينَ
আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌঁছুবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, "সালামুন আলাইকুম তিবতুম" তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা ভাল ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর’। (যুমার ৩৯ঃ৭৩)
৪/- সালামুন আলা ইব্রাহিম তার পিতা আজরকে একবচনে "সালামুন আলাইকা" বলে অভিবাদন করেছেন। নিম্নের আয়াত তার প্রমান বহণ করে।
قَالَ سَلَٰمٌ عَلَيْكَۖ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّىٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ بِى حَفِيًّا
ইবরাহীম বলল, "সালামুন আলাইকা" ‘তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আমার রবের কাছে তোমার জন্য ক্ষমা চাইব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল’। (মারইয়াম ১৯ঃ৪৭)
৫/- জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে অবস্থিত আরাফ নামক স্থানের অধিবাসিরাও একে অপরকে! "সালামুন আলাইকুম" বলে অভিবাদন জ্ঞাপন করবেন।
وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌۚ وَعَلَى ٱلْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّۢا بِسِيمَىٰهُمْۚ وَنَادَوْا۟ أَصْحَٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَن سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْۚ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ
উভয় দলের মাঝে আছে পর্দা আর আ‘রাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী অংশ) কিছু লোক থাকবে যারা প্রত্যেক লোককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে (যে সে জান্নাতের বাসিন্দা না জাহান্নামের)। জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে তারা বলবে, সালামুন আলাইকুম" ‘তোমাদের প্রতি সালাম’। তারা (আ‘রাফবাসীরা) তখনও জান্নাতে প্রবেশ করেনি কিন্তু তারা আশা করছে। (আরাফ ৭ঃ৪৬)
৬/- ফেরেস্তাগণ জান্নাতবাসীদেরকে "সালামুন আলাইকুম" বলে অভিবাদন পেশ করবেন।
جَنَّٰتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ ءَابَآئِهِمْ وَأَزْوَٰجِهِمْ وَذُرِّيَّٰتِهِمْۖ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ
তা হল স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে। আর তাদের পিতৃ পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানাদির মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফেরেশতারা সকল দরজা দিয়ে তাদের কাছে হাজির হয়ে সংবর্ধনা জানাবে (এই বলে যে)-
سَلَٰمٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْۚ فَنِعْمَ عُقْبَى ٱلدَّارِ
"‘সালামুন আলাইকুম"' তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কতই না উত্তম পরকালের এই ঘর!’’ (রাদ ১৩ঃ২৩'২৪)
৭/- কেউ যখন নিরর্থক কথা বলতে থাকে মুমিনরা তখন বিতর্ক না করে "সালামুন আলাইকুম" বলে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
وَإِذَا سَمِعُوا۟ ٱللَّغْوَ أَعْرَضُوا۟ عَنْهُ وَقَالُوا۟ لَنَآ أَعْمَٰلُنَا وَلَكُمْ أَعْمَٰلُكُمْ سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِى ٱلْجَٰهِلِينَ
তারা যখন নিরর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তাত্থেকে ফিরে থাকে আর বলে- আমাদের কাজের ফল আমরা পাব, তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে, সালামুন আলাইকুম" তোমাদের প্রতি সালাম, অজ্ঞদের সাথে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। (কাসাস ২৮ঃ৫৫)
৮/- মহান রব্বে করিমও সেদিন জান্নাতীদেরকে "সালাম" বলে অভিবাদন করবেন।
سَلَٰمٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ
দয়াময় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদেরকে ‘সালাম’ বলে সম্ভাষণ করা হবে। (ইয়াসিন ৩৬ঃ৫৮)
৯/- এছাড়াও জান্নাতি বান্দাগণ যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবেন সেদিন সবার অভিবাদন হবে "সালাম"।
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَه۫ سَلَامٌ ﺊ وَّأَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيْمًا
“যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৪৪)
১০/- আপনি হতে পারেন হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী, আহলে হাদিস, শিয়া ও সুন্নী, আপনি যেই হোননা কেন সকল দলমত দুরে ঠেলে দিয়ে একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন ও পড়ে দেখুন মুসলিম শরীফের ৪র্থ খন্ড বিচার-বিধান অধ্যায় হদিস নং ৪৩৩৭। এবং তিরমিজীর (মা আয়শা কর্তৃক আসীর মুয়াবিয়াকে চিঠি লিখা অধ্যায়) হাদীসে সালামের বাক্য ''সালামুন আলাইকুম/ সালামুন আলাইকা''। বলেছেন।
আল-বিদায়াওয়ান নিহায়া (তারিখে ইবনে কাসীর) ৮ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ২৮৯ মোতাবেক ইমাম হোসাইন (রাঃ) কুফাবাসীকে সালাম দিয়েছিলেন সালামুন আলাইকুম বলে।
আরো পড়ুন
আমরা এবার জানবো কিভাবে সালামের উত্তর দিতে হয়। এবিষয়ে আল্লাহ আমাদের কি শিখিয়েছেন।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সালামের উত্তম জবাব শিখিয়েছেন। সালাম প্রদান কারী যে বাক্য দিয়ে সালাম প্রদান করেছেন আমরা যেন সেই বাক্য দিয়েই উত্তর প্রদান করি অথবা তার সাথে ভালো কোন শব্দ যোগ করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়লা বলেন,
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا۟ بِأَحْسَنَ مِنْهَآ أَوْ رُدُّوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ حَسِيبًا
আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী। (নিসা ৪ঃ৮৬)
প্রশ্নঃ- আমরা নবী রাসুলদের কিভাবে সালাম দিব? তিন পদ্ধতি কোনটি রাসুলদের জন্য উত্তম হবে?
উত্তরঃ- আপনার প্রশ্নটি বেশ যৌক্তিক। তবে এর উত্তর অনেকটাই সহজ। আমাদের দেশে নবী রাসুলদের প্রতি সালামের অনেক পদ্ধতি চালু আছে যার বেশিরভাগটাই হলো মানব রচিত ও মনগড়া। কেউতো আবার সালামুন আলা মুহাম্মাদকে সালাম জানানোর উসিলায় মিলাদ নামক একটি ইবাদত চালু করে নিয়েছে।
যে ইবাদত শুধু রাসুলের উদ্দেশেই করা হয়। কথা না বাড়িয়ে আমরা আসল কথায় আসি। নবী রাসুলদের প্রতি সালাম প্রদানের নিয়ম আল্লাহই আমাদের শিখিয়েছেন। আল্লাহর কিতাব পরিপুর্ণ।
আল্লাহ তা‘আলা যা দিয়েছেন সবই সত্য এবং পরিপূর্ণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلًا
“সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। (সূরা আনআম ৬:১১৫)
তাই নতুন করে দীন ইসলামে কোন কিছু প্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন করল আর তা ভাল মনে করল সে ব্যক্তির বিশ্বাস হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীন প্রচারে খিয়ানত করেছেন।
কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।”
যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবদ্দশায় ওহীর মাধ্যমে কুরআন বা পূর্ণ ইসলাম পেয়েছেন এবং প্রচার করেছেন, অতএব নতুন কোন সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ নেই।
তারেক বিন শিহাব বলেন: এক ইয়াহূদী উমার (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে বলল: হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনাদের কিতাবের এমন একটি আয়াত আপনারা তেলাওয়াত করেন যদি তা আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের ওপর অবতীর্ণ হত তাহলে আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করে নিতাম। তিনি বললেন: তা কোন্ দিন? সে বলল:
(اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ...... )।
উমার (রাঃ) বললেন: আল্লাহর শপথ যেদিন এ আয়াত সালামুন আলা মুহাম্মাদের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং কোন্ সময়ে হয়েছে সে সম্পর্কে আমি অধিক জানি। আরাফায় জুমার দিন বিকালে অবতীর্ণ হয়েছে। (মুসনাদ আহমাদ: ১/২৮, সহীহ)
❤️❤️❤️
আসুন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কি শিখিয়েছে তা জেনে নেই।
১/- আল্লাহ তায়ালা সকল নবীগনকে "সালামুন আলাল মুরসালিন" বলে অভিবাদন জানিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ- وَسَلَامٌ عَلَي الْمُرْسَلِيْنَ - وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ
তারা যা বলে থাকে তা থেকে তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী। ‘সালাম’ বর্ষিত হোক রাসূলগণের প্রতি। আর সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার, যিনি সারা বিশ্বের প্রতিপালক।” (সূরা সফফাত ৩৭:১৮০-১৮২)
২/- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইলিয়াস নবীকে অভিবাদন জানিয়েছেন "সালামুন আলাল ইলইয়াস" বলে।
سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِلْ يَاسِينَ
সালামুন আলা ইলিয়াস। (সফফাত ৩৭ঃ১৩০)
৩/- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মুসা ও হারুন নবীকে অভিবাদন জানিয়েছেন "সালামুন আলা মুসা ওয়া হারুন" বলে।
سَلَٰمٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَٰرُونَ
মূসা ও হারূনের প্রতি সালাম। (সফফাত ৩৭ঃ১২০)
৪/-- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইবরাহিম নবীকে অভিবাদন জানিয়েছেন "সালামুন আলাল ইবরাহিম" বলে।
سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ
ইবরাহীমের প্রতি সালাম। (সফফাত ৩৭ঃ১০৯)
৫/- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সকল নবীকে অভিবাদন জানিয়েছেন "সালামুন আলাল মুরসালিন" বলে।
وَسَلَٰمٌ عَلَى ٱلْمُرْسَلِينَ-
আর রাসূলদের প্রতি সালাম। (সফফাত ৩৭ঃ১৮১)
৬/- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেভাবে নবীদেরকে অভিবাদন জানিয়েছেন সেভাবেই অভিবাদন করা উত্তম।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এই শব্দ সমুহ পবিত্র ও বরকতপুর্ণ। সে হিসেবে নবী মুহাম্মাদের নাম উচ্চারণের সময় আমাদের বলতে হবে "সালামুন আলা মুহাম্মাদ"।
❤️❤️❤️
প্রশ্নঃ- আমরা তাহলে হাদিসে "আসসালামু আলাইকুম পাই কেন? নবী (সাঃ) তো আমাদেরকে "আসসালামু আলাইকুম" শিক্ষা দিয়েছেন বলে আমরা জানি।
উত্তরঃ- আপনার একথা সঠিক নয়। রাসুলের নামে এমন কথা সঠিক হতে পারেনা। যদি একথা সত্যি হয় তাহলে আপনি অসংখ্য কুরানের আয়াত ও অসংখ্য হাদিস অস্বীকার করলেন। আপনি কিভাবে ধারণা করতে পারেন যে, আল্লাহর নবী সালামুন আলা মুহাম্মাদ কুরআন থেকে প্রচার করেননি।
দদাদাদআল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসুলকে উদ্যেশ্য করে বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُۥۚ وَٱللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْكَٰفِرِينَ
হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে শুধু তাই প্রচার কর, যদি না কর তাহলে তুমি তাঁর বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করলে না। মানুষের অনিষ্ট হতে আল্লাহ্ই তোমাকে রক্ষা করবেন, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে কক্ষনো সৎপথ প্রদর্শন করবেন না। (সুরা মায়েদা ৫ঃ৬৭)
"হে রাসুল আপনি শুধু তাই প্রচার করুন যা আপনার প্রতি আপনার রব নাযিল করছেন। আল্লাহর নবী কুরআন ছাড়া অন্য কিছু প্রচার করেছেন একথা বিশ্বাস করলে আপনার ইমান থাকবে? আয়েশা রাঃ বলেন সালামুন আলা মুহাম্মাদ এর জিবনটাই ছিলো কুরআন।
এরপরেও আপনি কিকরে বলতে পারেন সালামুন আলা মুহাম্মাদ কুরআনের বাইরে অন্যকিছু শিক্ষা দিয়েছেন। যদি রাসুলের নামে এমন কোন কথা পেয়ে যান যা কুরআনের বিপরীত তাহলে তা কোনক্রমেই রাসুলের কথা হতে পারেনা। কেউ সালামুন আলা মুহাম্মাদ এর নামে রচনা করেছে।
সুতরাং, মহান আল্লাহ্ "সালাম" শব্দের সাথে "আস" যোগ করে আসসালাম করতে বা বলতে বলেন নাই। কুরানুল করীমে কোথাও আসসালাম শব্দ নাই। অতএব আমরা যারা আল্লাহ্র আয়াতে বিশ্বাসী (৬:৫৪) তাঁদের অবশ্যই ঈমানী দ্বায়িত্ব হ'লো মহান রবের শিখানো শব্দ দ্বারা সালাম দেয়া বা বিনিময় করা (৫৮:৮)।
প্রশ্নঃ- কোন অপরিচিত লোক যদি সালাম দেয়, হতে পারে সে বিধর্মী তাহলে তার সালামের উত্তর কি দেয়া যাবে?
উত্তরঃ- অপরিচিত কেহ সালাম দিলে বলা যবে না তুমি মুমিন নও তাই তোমার সালাম নিবো না বা জবাব দিবো না (৪:৯৪)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا ضَرَبْتُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَتَبَيَّنُوا۟ وَلَا تَقُولُوا۟ لِمَنْ أَلْقَىٰٓ إِلَيْكُمُ ٱلسَّلَٰمَ لَسْتَ مُؤْمِنًا
হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে যাত্রা করবে তখন কে বন্ধু আর কে শত্রু তা পরীক্ষা করে নেবে, কেউ তোমাদেরকে সালাম করলে তাকে বলো না, ‘তুমি মু’মিন নও। (নিসা ৪ঃ৯৪)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সালামুন আলা মুহাম্মাদ এর সাহাবীদের পাশ দিয়ে বানী সুলাইম গোত্রের এক লোক তার ছাগল নিয়ে যাচ্ছিল। সে সাহাবীদেরকে দেখে সালাম দিল। সাহাবীগণ বললেন: সে আমাদের থেকে বাঁচার জন্য সালাম দিয়েছে। তাই সাহাবীগণ তাকে ধরে হত্যা করল, ছাগলগুলো নিয়ে সালামুন আলা মুহাম্মাদ এর নিকট আগমন করল। তখন
(أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِذَا ضَرَبْتُمْ... )
আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী হা: ৩০৩০, আহমাদ হা: ২৪৬২, সহীহ)
প্রশ্নঃ- সালামের হুকুম কি হবে? সালাম বলা ফরজ, ওয়াজিব, নফল, নাকি সুন্নত?
উত্তরঃ- প্রশ্নটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।
🌹 ধন্যবাদ 🌹
সালামের হুকুম ও গুরুত্বের দিক বিবেচনা করলে এবং সালামের অসংখ্য আয়াতকে সামনে রাখলে বুঝা যায় সালাম দেয়া ফরজ। কালেমা, সালাত, সিয়াম, হজ্ব ও যাকাত আল্লাহ্র হুকুম বা ফরজ ইবাদত তদ্রুপ সালাম দেয়া ও উত্তর প্রদান করাও আল্লাহ্র হুকুম (২৪:৬১, ৬:৫৪, ৪:৮৬) এবং ফরজ ইবাদত।
প্রশ্নঃ- আমি যদি কুরআনে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে সালাম না দেই বা উত্তর প্রদান না করি তাহলে কি কোন পাপ হবে?
উত্তরঃ- আপনি খুব প্রাসাঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন। এর উত্তরে আমি আপনাকে দুটি কথা জানাতে পারি।
১/- আপনি যদি কুরআনে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী সালাম আদান প্রদান না করেন, তাহলে আপনি আল্লাহর হুকুম পালনে অসিকৃতি জ্ঞাপন করলেন। আল্লাহর বিধান বা তার নাযিল করা কিতাবকে অবজ্ঞা করলেন। আল্লাহর বিধান অবজ্ঞা করে কেউ মুসলিম থাকবে বলে আমার জানা নাই। কিয়ামতের মাঠে কুরআন অবজ্ঞাকারীদের বিরুদ্ধে সালামুন আলা মুহাম্মাদ আল্লাহর দরবারে মামলা করবেন।(ফুরকান ৩০)
সালামুন আলা মুহাম্মাদ কারো বিরুদ্ধে মামলা করলে তার অবস্থান কোথায় হবে তা সকলেরই জানা।
২/- মহান আল্লাহ্র শিখানো শব্দ দ্বারা সালাম না দিলে তাদেরকে আল্লাহ্ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। এই মর্মে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন,
وَإِذَا جَآءُوكَ حَيَّوْكَ بِمَا لَمْ يُحَيِّكَ بِهِ ٱللَّهُ وَيَقُولُونَ فِىٓ أَنفُسِهِمْ لَوْلَا يُعَذِّبُنَا ٱللَّهُ بِمَا نَقُولُۚ حَسْبُهُمْ جَهَنَّمُ يَصْلَوْنَهَاۖ فَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ
তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা তোমাকে এমনভাবে অভিবাদন করে যেমনভাবে আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেননি। তারা মনে মনে বলে- ‘আমরা যা বলি তার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে ‘আযাব দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্য যথেষ্ট, তাতে তারা জ্বলবে, কতই না নিকৃষ্ট সেই গন্তব্যস্থল! (মুজাদিলাহ ৫৮ঃ৮)
প্রশ্নঃ- এভাবে সালাম আদান প্রদান করলে আমরা কি কোন নেকি পাব?
উত্তরঃ- আপনি খুব প্রাসাঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন। এর উত্তরে আমি আপনাকে দুটি কথা জানাতে পারি। ১টি কুরআন থেকে অপরটি হাদিস থেকে।
১/- মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
مَن جَآءَ بِٱلْحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشْرُ أَمْثَالِهَاۖ وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰٓ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
যে ব্যক্তি কোন সৎকর্ম করবে তার জন্য আছে দশ গুণ পুরস্কার, আর যে ব্যক্তি অসৎকাজ করবে তাকে শুধু কৃতকর্মের তুল্য প্রতিফল দেয়া হবে, তাদের উপর অত্যাচার করা হবে না।” (সূরা আনআম ৬:১৬০)
২/- আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে-
أنَّ رجُلًا مرَّ على رسولِ اللهِ ﷺ وهو في مجلسٍ فقال: سلامٌ عليكم فقال: (عشرُ حسناتٍ) ثمَّ مرَّ رجُلٌ آخَرُ فقال: سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ فقال: (عشرونَ حسنةً) فمرَّ رجُلٌ آخَرُ فقال: سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه فقال: (ثلاثونَ حسنةً)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল এবং বলল سلامٌ عليكم তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন দশটি হাসানাহ। অতঃপর আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল এবং সে বলল سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন বিশটি হাসানাহ।অতঃপর আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল এবং বলল سلامٌ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বললেন ত্রিশটি হাসানাহ। (সহীহ ইবনে হিব্বান, ৪৯৩)
2 Comments
আহলে কোরআনের, ইসলাম বিধ্বংসী অস্ত্র অনেক ধারালো।
ReplyDeleteসত্য প্রতিষ্ঠিত হবেই যদিও আহলে আবু জেহেলরা তা অপছন্দ করে।
ReplyDelete