"মহিলাদের বয়ান"
বিস্মিল্লাহির রাহমনির রাহিম
👉 মহান আল্লাহ পাক সব কিছুই অবগত
এই দুনিয়ার সব কিছু সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা সম্যক অবগত। কুরআনে ইশাদ হয়েছে-
وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوْ اجْهَرُوا بِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ -
তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বলো আর প্রকাশ্যেই বলো- তিনি তো অন্তর্যামী। [মুলক্: ১৩]
এক কথায়, আল্লাহ তাআলার জানার সীমা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। তিনি ইরশাদ করেছেন-
يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ -
তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে। [সাবা: ২]
অর্থাৎ মাটির ভেতর লুকায়িত সত্যকেও তিনি জানেন।
আরও ইরশাদ হয়েছে-
وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ -
এবং যা মাটি থেকে নির্গত হয় এবং যা আসমান থেকে অবতীর্ণ হয় তাও তিনি অবগত। [সাবা: ২]
এক কথায়, এই পৃথিবীতে কতগুলো গাছ আছে এবং সেই গাছে কতগুলো পাতা আছে তাও তিনি অবগত। শুধু কি তাই, গাছের ক'টি পাতা ঝরে পড়লো তাও তাঁর জানার বাইরে নয়।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
مَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا -
তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও ঝরে পড়ে না। আনআম: ৫৯
অথচ আমরা আমাদের ঘরের পাশের গাছটিতে কতটি পাতা আছে, এখান থেকে কতটি পাতা ঝড়ে পড়ছে তাও জানি না। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীব্যাপী বিস্তীর্ণ বিশাল বন-বনানীর বিপুল বৃক্ষের পাতা- পল্লবের পরিপূর্ণ হিসেব রাখেন। উঁচু টিলাতে কতটি গাছ রয়েছে, মরুভূমির সমতল পিঠে রয়েছে কতগুলো গাছ; সেই গাছগুলোতে কতগুলো পাতা সবুজ আর কতগুলোই বা লাল হয়ে ঝরে পড়লো এর কোনটিই তাঁর অজানা নয়।
কোন গাছে কতটি কলি ফুটলো, কতটি ফল খোসা ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলো এবং সেই ফলগুলো কবে পাকবে, কবে কাটা হবে, সেখান থেকে কতটি পাখি খাবে আর কতটি বাজারে বিক্রি হবে সবই তিনি অবগত। তিনি এও জানেন, এই ফল বাজার থেকে কে কিনবে এবং ফলের বিচিগুলো কোথায় নিক্ষিপ্ত হবে। নিক্ষিপ্ত বিচি থেকে কতগুলো গাছ সৃষ্টি হবে এর কোনটিই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়।
অনন্তর এই বিচির ভেতর কতটি গাছ লুকিয়ে আছে, সেই বৃক্ষের মাঝে লুকিয়ে আছে কত ফল সেই হিসেবও তাঁর কাছে স্পষ্ট। স্পষ্ট এটাও যে সেই লুকায়িত ফলগুলো কারা কারা ভোগ করবে।
শুধু বৃক্ষ আর ফল-মূলই নয়- এই পৃথিবীতে কতটি পাহাড় আছে এবং সেই পাহাড়ের ওজন পর্যন্ত তিনি অবগত। তিনি জানেন এই পাহাড়ের গর্ভে লুকিয়ে থাকা মূল্যবান খনিজ সম্পদের কথাও। সমুদ্রে কতটুকু পানি রয়েছে, কী পরিমাণ মাছ রয়েছে, বড় মাছ কয়টি আর ছোট মাছ কয়টি, আজ কতটি মাছ সৃষ্টি হলো, কতটি মাছ খাওয়া হলো সব হিসাব তার কাছে আছে।
তাছাড়া আজকে কতজন শিকারির জালে এরং কার জালে কতটি মাছ ধরা পড়বে সবকিছুই তিনি জানেন।। তিনি জানেন, এই মাছ কোন দেশের শিকারি শিকার করবে আর বিক্রি হবে গিয়ে কোন দেশে। তিনি এটাও জানেন, পরিশেষে বাজার থেকে কিনে এই মাছ কে খাবে। এজন্যে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّلِمُونَ -
তুমি কখনো মনে করো না জালেমদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ গাফেল। [ইবরাহীম: ৪২]
সুতরাং আল্লাহ তাআলা জালিমদেরকে পাকড়াও করছেন না বলে এমনটি ধারণা করার সুযোগ নেই যে তিনি জানেন না।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
أَفَا مِنَ الَّذِينَ مَكَرُوا السَّيِّيَاتِ أَنْ يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ
الْأَرْضَ -
যারা অপকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়ে পড়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন না? [নাহল: ৪৫]
বরং তাদের অবস্থা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ -
এমনভাবে তাদেরকে আযাব গ্রাস করে নিবে তারা টেরও পাবে না। [নাহল: ৪৫]
আরও ইরশাদ হয়েছে,
অথবা চলাফেরারত অবস্থায় তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন; তারা তো তা ব্যর্থ করতে পারবে না। [নাহল: ৪৬]
👉 আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নারীর অবদান
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
বিশাল আসমান ও বিস্তীর্ণ দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এক মহান উদ্দেশ্যে। সুতরাং এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন লক্ষ্যহীন নয়।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَا كُمْ عَبَثًا وَإِنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ -
তোমরা কি ভেবেছো আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না? (মুমিনূন: ১১৫]
আমরা আল্লাহ তাআলার এ সুদৃঢ় ও সুশৃংখল শাসন ব্যবস্থার অধীন। আমাদের মুখের প্রতিটি উচ্চারণ, চোখের প্রতিটি পলক, কানের প্রতিটি শ্রবণ এমনকি হৃদয়ে উত্থিত আবেগ অনুভূতিও আল্লাহ তাআলার নিশ্ছিদ্র তত্ত্বাবধানের অধীন।
ইরশাদ হয়েছে-
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
মানুষ মুখে যাই উচ্চারণ করে তার জন্যে তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। [ক্বাফ: ১৮]
আরও ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ كِرَامًا كَاتِبِينَ -
অবশ্যই তোমাদের জন্যে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়কগণ, সম্মানিত লিপিকারবৃন্দ। [ইনফিতার: ১০-১১]
সুতরাং আমরা জেগে থাকি আর ঘুমিয়ে থাকি; ব্যবসায় থাকি আর নির্জনে একাকীত্বে থাকি; দু'জন তত্ত্বাবধায়ক সম্মানিত ফেরেশতা রয়েছেন আমাদের পাহারায়।
আমাদের আগে পিছে নিয়োজিত এই ফেরেশতাগণ সদা তৎপর। তাদের ঘুমুতে হয় না, খানাপিনা করতে হয় না। এমনকি বিশ্রামেরও প্রয়োজন হয় না। তাদের কাজ হলো আমাদের প্রতিটি কথা, কর্ম ও আচরণের প্রতি সযত্ন লক্ষ্য রাখা।
👉 প্রতিটি অঙ্গকে জিজ্ঞাসা করা হবে
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন-
كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُوَادَ مَسْئُولاً
কান চোখ হৃদয় প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত তলব করা হবে। [বনী ইসরাইল: ৩৬]
এর অর্থ হলো- হে মানবজাতি! তোমাদের দৃষ্টি, তোমাদের শ্রবণ এবং তোমাদের হৃদয়ের ভাবনাগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাই আমার কাছে খুব সাবধানেই উপস্থিত হয়ো। যেদিন আমি প্রতিটি অঙ্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো সেদিন তোমার অঙ্গের উপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব চলবে না। তোমার অঙ্গ আমার সামনে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিবে। সেদিন হয়তো বিস্মিত হয়ে বলবে, এ কী হলো! আমার শরীর আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে! তখন তারা তার উত্তরে বলবে-
انْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ
যিনি আমাদেরকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি সবকিছু কে বাকশক্তি দিয়েছেন। [হা-মীম সিজদা: ২১।
তখন তোমরা হয়তো আশ্চর্য হয়ে বলবে- তোমাদের ধ্বংস হোক। তোমাদের প্রেরণায়ই তো আমি আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয়েছিলাম। আর আজ তোমরা আমারই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে!
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمْنَا أَيْدِيهِمْ وَتشهد أرجلهم الْيَوْمَ نَخْتِمُ
بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ -
আমি আজ এদের মুখ মোহর করে দেবো, এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দিবে এদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। [ইয়াসিন: ৬৫]
এক কথায়, এই পৃথিবীতে নারী-পুরুষ যত মানুষ এখন বসবাস করছে তাদের প্রত্যেকের সাথেই রয়েছে সতর্ক প্রহরী। প্রহরী তাদেরকে দেখছে, তাদের প্রতিটি কৃতকর্মের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। একদিন তাদের কৃতকর্মের সকল আমলনামা তাদের সামনে পেশ করবে। সুতরাং আমাদের জীবনের কোন কিছুই আল্লাহ তাআলার দৃষ্টির বাইরে নয়।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
তারা পার্থিব জীবনের বাইরের দিক সম্পর্কে অবগত। আর পরকাল সম্পর্কে তারা গাফিল। [রূম: ৭]
অর্থাৎ আমরা এই নারী-পুরুষরা যারা এখন এই পৃথিবীতে বসবাস করছি, আমরা ভুলে গেছি আমাদের একটি পরকালীন জীবন রয়েছে। আমরা ভুলে গেছি আমাদের সাথে সতর্ক প্রহরী রয়েছে। আমরা আমাদের পরকাল সম্পর্কে এবং পরকালের আযাব সম্পর্কে গাফেল। গাফিল আল্লাহর রহমাত সম্পর্কেও।
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব-২ এখানে.......
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
0 Comments