Header Ads Widget

▶️ চালাক পীর ও তাদের আউট নলেজ। আবু তাহের বর্ধমানী।


এ আই ফাইল
পীরগণ তাদের আউট বুদ্ধি খাটিয়ে ধোকা দিয়ে মানুষকে তাদের কেরামতি দেখায়। এভাবে অজ্ঞ মানুষদের ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে নিজের মুরিদান বৃদ্ধি করে।


পীরদের আউট বুদ্ধি

মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী 

বিদ্যান হোক আর মূর্খ হোক, আলিম হোক আর জাহিল হোক, সব শ্রেণীর পীর কিন্তু আউট বুদ্ধি খাটিয়ে থাকেন খুব বেশী। আউট বুদ্ধি, ট্যাক্টিস, চালাকী ও চতুরতা না খাটালে কোন পীরই তার পরীরগিরি কায়েম রাখতে পারেন না। এক জাঁদরেল পীর তাঁর কয়েকজন ভক্তকে নিয়ে এক মাহফিলে যাচ্ছিলেন। পথের ধারে এক ষাঁড় চরছিল। কাছাকাছি যেয়েই ষাঁড়টাকে লক্ষ্য করে খুব গাম্ভীর্যের সাথে বললেন, 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ' ভক্তরা সব অবাক কি ব্যাপার! মাহফিলে যেয়ে অনেকের কানে তারা কথাটা দিল। সবাই ব্যাপারটা জানার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। মাহফিল শেষ হল। হুজুর বৈঠক ঘরে ঢুকে পড়লেন। লোকজন কিন্তু কেউ উঠল না।

"শান্তির পথের সাথেই থাকুন"

ভেদ জানার জন্য সবাই থেকে গেল। প্রধান সাহাবীরা ভিতরে ঢুকে খুব আদবের সাথে বলল, হুজুর সব লোক বসে আছে একটা কথার জানার জন্য, যদি একটু মেহেরবানী করতেন তো ভাল হতো। হুজুর একটু মৃদু হেসে মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন, বুঝেছি- ঐ সালামের ব্যাপারটা তো? ভক্তরা শুনেতো অবাক। কেউ চাই; কেউ কেউ বলল, হুঁ-হুঁ একি যার তার ব্যাপার; কামেল পীররা সবই জানতে পারেন, কারণ উনারা হলেন টেলিভিশন। আমাদের মনের খবর সবই উনাদের কাছে ধরা পড়ে।

এবার পীর সাহেব বললেন শুনো, আমি যখন আসছিলাম, আমাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য দু'জন ফেরেশতা ঐ ষাঁড়ের শিং-এ দাঁড়িয়ে ছিল। কাছে যেতেই ওরা আমাকে সালাম দিল, তাই আমি ওদের সালামের জওয়াবে বললাম, 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ'। একথা শুনে ভক্তরা সব খুশীর চোটে কেঁদে ফেলল, আর বলতে লাগল, সৌভাগ্য আমাদের যে, এহেন কামেল পীর আমরা পেয়েছি।

এক পীর উরুসের মেলা বসিয়েছেন। ভক্তরা সব খাসী, মোরগ, চাল, ডাল, তেল, আটা প্রভৃতি নিয়ে হাজির হয়েছে। এক ভক্ত খুব-সুরত এক দুম্বা নিয়ে হাজির হয়েছে। ভক্তের দিলের আকাঙ্ক্ষা, হুজুর যদি উঠে এসে দুম্বাটার গায়ে একটু হাত বুলিয়ে দিতেন তো ভাল হতো। এই বলে দুম্বাটাকে বাইরে বেঁধে রেখে সে ভিতরে ঢুকে পড়ল।

 পীর কেবলা তখন প্রধান ভক্তদের নিয়ে আসর জমিয়েছেন ভাল। এমন সময় দুম্বাওয়ালা তার মনের কথাটা পীরকে বলল। পীর সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে হাতের ইশারা করে বললেন, যাও হাত বুলিয়ে দিলাম। ভক্তের কিন্তু এতে মন উঠল না। বলল, হুজুর একটু কাছে যেয়ে গায়ে হাতটা যদি দিত পীরতো চটে লাল; বললেন বিশ্বাস হয় না তোমার। 

আমি এখানে বসে চোখ বন্ধ করে লন্ডনের আদালতে মামলার তদবীর করে আসি, আর এখানে বসে তোমার দুম্বার গায়ে হাত বুলাতে পারব না? যাও, হাত বুলিয়ে দিয়েছি- যাও ভক্ত হুজুরের পায়ে চুমা দিয়ে বেরিয়ে এল।

আর এক ঘটনা শুনুন। এক পীর সাহেবের নাম ছিল 'লাল বুজুক্কার'। একদিনের ঘটনা, এক গ্রামের রাস্তা দিয়ে গভীর রাতে একটা হাতী চলে গেছে।


গ্রামের লোকেরা কিন্তু কেউ কোনদিন এ চিহ্ন দেখেনি। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাদের পীরও কোনদিন এরূপ চিহ্ন দেখেনি। ভোরবেলায় উঠে একজন লোক হাতীর পায়ের দাগ দেখে ডাক-হাঁক শুরু করে দিল। এক দুই করে গ্রামের ছোট-বড় মেয়ে-মরদ সবাই জুটে পড়ল। দাগ দেখে সবাই হয়রান, ব্যাপারটা কারো মাথায় আর আসে না। 

কেউ বলে কিয়ামত খুবই নদিক, এটা তারই আলামত। কেউ বলে ভূমিকম্প হয়ে গ্রাম ধ্বংস হবে, এটা তারই আলামত। কেউ বলে গ্রামে কলেরা মহামারী আসবে, এটা তারই আলামত। মোটকথা, গ্রামের সকলেই আতঙ্কিত হয়ে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। 

কয়েকজন লোক ছুটল পালকী নিয়ে পীর সাহেবকে আনতে। পীর সাহেব এসেই বললেন চিন্তা নেই কেঁদ না। আমি থাকতে কোন মসিবত আসতে দিব না। এই বলে তিনি হাতীর পায়ের দাগ দেখে চিন্তা করতে লাগলেন এবং বৈঠক ঘরে ঢুকে পড়ে দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে ধ্যানে বসে পড়লেন। 

আউট বুদ্ধি খাটিয়ে কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বের হয়ে বিকট এক চিৎকার করে বলতে লাগলেন-

লাল বুজুক্কার না সাকে তো

আওর সাকেগা কো

পাও যে চাক্কী বাঁধকে শায়েদ

হরিণ কুদা হো।

লাল বুজুক্কার পীর না পারলে এ রহস্য আর কে বলতে পারবে? শুন, শুন, চার পায়ে চারটা চাক্কী (যাঁতা) বেঁধে একটা হরিণ এ রাস্তা দিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেছে। এ কথা শুনে গ্রামের লোকদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। যথাসম্ভব সম্মান করে পীর সাহেবকে তারা পৌঁছে দিল।

এ ধরনের চালাকীর কথা কত শুনবেন। আর এক ঘটনা শুনুন। এক এলাকার চল্লিশ পঞ্চাশটা গ্রামের লোক ছিল তাঁতী। তাঁতের কাপড় বুনাই ছিল তাদের এক মাত্র পেশা। এবং তারা সবাই ছিল এক গদ্দীনশীল ভণ্ড পীরের অন্ধভক্ত। এক সময় এক মিসর ফেরতা বিখ্যাত আলিম তাবলীগের উদ্দেশ্যে ঐ এলাকার গ্রামে গ্রামে যেয়ে ওয়াজ নসিহত শুরু করে দিলেন। 

ওয়াজ নসিহত শুনে এলাকার লোক খুবই মুগ্ধ হতে লাগল। কেউ কেউ পীর সাহেবের কাছে যেয়ে ওয়াজের প্রশংসা করতে লাগল। প্রশংসা শুনে পীর রেগে আগুন হয়ে গেলেন। বললেন, তোমাদের মতো আহাম্মক তো দেখি না। যার তার কথায় একেবারে গলে যাও দেখছি। 

নিয়ে এসোতো বেটাকে ধরে, দেখি সে কত বড় আলিম হয়েছে। আমার একটা কথার জওয়াব যদি সে দিতে পারে তাহলে বুঝব, হ্যাঁ কিছু জানে; আর যদি উত্তর দিতে না পারে, গলা ধাক্কা দিয়ে বেটাকে এলাকা ছাড়া করব। তোমরা যাও, যেয়ে কাল বিকেলে শিমুলতলীর হাটখোলায় তাকে হাজির কর। আর আমার সব মুরীদানকে জানিয়ে দাও- সবাই যেন হাজির থাকে।

এবার ভক্তরা সব ছুটল মাওলানার কাছে। সব কথাই খুলে বললেন মাওলানাকে। মাওলানা একজন বিরাট আলিম। ইল্মে কুরআন, ইল্মে হাদীস, ইলমে ফিকাহ, ইল্মে ওসুল, ইল্মে বালাগাত, ইল্মে মান্ত্রেক ও ইল্মে আদবে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। 

কাজেই ঘাবরাবার পাত্র তো তিনি নন। তাছাড়া তিনি বেড়াচ্ছেন তাবলীগে-দীনের উদ্দেশে, কোন দুরভিসন্ধি তো তাঁর নেই; অতএব মাওলানা পরের দিন বিকেলে শিমুলতলীর হাটখোলায় হাজির হলেন। যেয়ে দেখেন হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। চল্লিশ পঞ্চাশটা গ্রামের সব লোক জমা হয়েছে।

বাহাসের বিরাট প্রস্তুতি। পীর সাহেবের সাথে মাওলানার হবে বাহাস। মাওলানা তো অবাক! একি ব্যাপার? যাক তিনি তাঁর আসনে যেয়ে বসলেন। একটু পরেই খুব জাঁকজমকের সাথে পীর সাহেব এসে সামনাসামনি তাঁর আসনে বসে পড়লেন। লোকের কোলাহল এবার থেমে গেল। পীর সাহেব মাওলানাকে লক্ষ্য করে গাম্ভীর্যের সাথে বললেন, কি সাহেব শুনছি নাকি আমার এই এলাকায় এসে আজে বাজে কি সব কথা বলে বেড়াচ্ছেন।

 মাওলানা বললেন- আস্তাগফিরুল্লাহ, কে আপনাকে বলল যে আমি আজে বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছি। আল্লাহর ফজলে আমি একজন আলিম। মিসর থেকে পাশ করে এসে কিছু তাবলীগের উদ্দেশে বের হয়েছি। কুরআন হাদীস প্রচার করে বেড়াচ্ছি।

পীর সাহেব পীরগিরির ভঙ্গিমায় মাথা হিলিয়ে হিলিয়ে বলতে লাগলেন, বুঝেছি সাহেব বুঝেছি, বড় আলিম বলে নিজেকে তো প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, বলি কুরান জানেন তো? মাওলানা বললেন, জানব না কেন? আল্লাহর ফজলে কুরআনের বড় বড় তাফসীরের কিতাবগুলি সবই পড়েছি। পীর সাহেব বললেন-

আসালাংলাং ফাসালাংলাং

আবে আয়ে আবে গ্যায়ে

ফাবে থপথপ ফাবে থপথপ।

বলুন তো সাহেব, এই আয়াতের মানে কি? আর এটা কাদের শানে নাযিল হয়েছে?

মাওলানা তো হতভম্ভ। বললেন, একথা ত্রিশপারা কুরআনের কোন জায়গায় যদি আপনি দেখাতে পারেন তো এক্ষুণি আপনাকে পাঁচশত টাকা পুরস্কর দিব। পীর সাহেব ভীষণ এক গর্জন করে বললেন, ত্রিশ পারা নিয়েই পড়ে থাকেন সাহেব- ত্রিশ পারা নিয়েই পড়ে থাকেন। 


সম্মানিত পাঠক! লিখাগুলো আমরা অনেক পরিশ্রম করে যত্নের সাথে লিখি। এর জন্য বিনিময় চাইনা। শুধুমাত্র ছবিগুলোতে একবার ক্লিক দিন। 

আরও যে দশ পারা কলবের মধ্যে আছে সে খরবতো রাখেন না; হিয়া বড়া মাওলানা সেজে বসে আছেন। যান, আমার এলাকা ছেড়ে চলে যান। তারপর ভক্তদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, যতসব আহাম্মকের দল; যে ব্যক্তি একটা কুরআনের আয়াতের খবর রাখে না, তার ওয়াজ শুনে সব পাগল হয়ে গেছে, দাও এ ভণ্ডকে এলাকা ছাড়া করে দাও। ভক্তরা হুকুম পাওয়া মাত্র মাওলানাকে এলাকা থেকেই তাড়িয়ে দিল।

এবার পীর সাহেবকে সবাই ধরল যে, হুজুর ঐ আয়াতটার মানে আমাদেরকে একটু ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিন। হুজুর বললেন, ওগো আমার প্রিয় শিষ্যরা শুন, এ আয়াত একমাত্র তোমাদের শানেই আমার কলবে নাযিল হয়েছে। তোমরা যখন তাঁতের কাপড় তৈরী কর, সেই সময়কার ঘটনাটাই এই আয়াতে সুন্দর করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ডান পায়ে করে যখন চেপে ধর, তখন বলা হচ্ছে 'আসালাংলাং' আর বাম পায়ে করে যখন চেপে ধর, তখন বলা হচ্ছে 'ফাসালাংলাং', ডান দিক থেকে সূতার গুটি যখন বামে যায়, সে অবস্থাটাকে বলা হয়েছে 'আবে আয়ে' আর বামে থেকে যখন ডানে যায়, তখন বলা হচ্ছে 'আবে গ্যায়ে' আর যখন চাপ দিয়ে সূতার গায়ে সূতা বসিয়ে দাও, তখনকার অবস্থাটা হচ্ছে 'ফাবে থপথপ ফাবে থপথপ।

তারপর পীর সাহেব বললেন, বাবারা শুন! তোমাদের কাজটাকে আল্লাহ খুব পছন্দ করেছেন বলেই আল্লাহর খাস্ রহমত স্বরূপ এ আয়াত আমার কলবে নাজিল হয়েছে, অতএব তোমরা বেশক জান্নাতী। এ কথা শুনে মুরীদের দল পীরের পায়ে চুমা দিয়ে পীর কেবলা জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে দিতে প্রস্থান করল। এই ঘটনা উল্লেখ এজন্য করলাম যে, অনেক পীর নিজের প্রভাব, পীরত্ব ও ভাত রুটি চলে যাওয়ার ভয়ে, কোন যোগ্য ও জবরদস্ত হক্কানী আলেমকে নিজের এলাকায় ঢুকতে দিতে চান না।

এ ধরনের কত কথা শুনবেন। জনৈক জাঁদরেল পীর এক এলাকা থেকে আর এক এলাকা যাবেন। সকাল সাতটার ট্রেন তাঁকে ধরতেই হবে। পীর আগেই তাঁর দু'জন খাস ভক্তকে চুপে চুপে স্টেশনে পাঠিয়ে দিলেন আর কানে কানে বলে দিলেন যে, আমার স্টেশন যাওয়ার আগেই যদি ট্রেন ছেড়ে দেয়, তাহলে তোমরা শিকল টেনে ট্রেন থামিয়ে দিও। এদিকে পীর সাহেবের নাস্তাটাস্তা হয়ে গেল- পালকী হাজির। পীর সাহেব কিন্তু ইচ্ছা করেই দেরী

করছেন। সবাই বলল হুজুর, তাড়াতাড়ি উঠুন, তা না হলে ট্রেন পাবেন না, দু'মাইল রাস্তা যেতে হবে। হুজুর বললেন, এত বড় শক্তি যে ট্রেন আমাকে ফেলে চলে যাবে? জেনে রেখো ট্রেন আমার সাথে কখনই বেয়াদবী করবে না। এই বলে পীর সাহেব কয়েক মিনিট দেরী করেই পালকীতে উঠলেন। পালকী স্টেশন হতে কোয়াটার মাইল দূরে থাকতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। হুজুর ট্রেন ছেড়ে দিল, হুজুর ট্রেন ছেড়ে দিল- বলে ভক্তরা চেঁচাতে শুরু করে দিল। হুজুর বললেন চেঁচাও কেন? জেনে রেখ, ট্রেন আমার সাথে কখনই বেআদবী করবে না। সত্যিই ট্রেনটা আউট সিগ্লালের কাছে যেয়ে থেমে গেল। আর পালকীর কাছ থেকে ট্রেনের দূরত্বটা অনেকটা কমে গেল। হুজুর যেয়ে ট্রেনে উঠলেন, আর সেই সঙ্গে পীর সাহেবের মস্তবড় কারামতি জাহের হয়ে গেল।

আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, পীর সাহেবের ইন্তেকালের পর তাঁর কতকগুলো ভক্তকে বুজুরগীটা এভাবে বর্ণনা করতে দেখা গেছে। একদিন হুজুর কেবলা পালকীতে চড়ে ট্রেন ধরার জন্য রওয়ানা হলেন। হাফ মাইল দূরে থাকতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। সবাই তখন বলল, হুজুর, ট্রেন তো ছেড়ে দিল। আমাদের হুজুর পাক তখন বললেন, বাবারা চিন্তা করো না, আমাকে না নিয়ে ট্রেন যাবে না। সত্যিই দেখা গেল, ট্রেন প্লাটফরমের বাইরে যেয়ে থেমে গেল। ট্রেন আর কোন মতে চলে না। ড্রাইভারের শত চেষ্টা ব্যর্থ হল। এমন সময় হুজুর পাক যেয়ে পালকী থেকে নামলেন। এবার ব্যাপারটা বুঝতে আর কারো বাকী থাকলো না। ড্রাইভার ও গার্ড ছুটে এসে হুজুরের পা দু'টো জড়িয়ে ধরল। 

হুজুর তখন ইঞ্জিনের দিকে মুখ করে একটা ফুঁক মেরে দিয়ে বললেন, যাও- এবার চালাও। ড্রাইভার ইঞ্জিনে উঠেই দেখে, কলকজা সব ঠিক হয়ে গেছে। ট্রেন এবার চলতে আরম্ভ করল। ভাইসব, আমাদের হুজুর এমন হুজুর ছিলেন যে, রেলগাড়ী তাঁর কথা শুনতো। এ ধরনের বহু কথা আছে। ঘটনা ঘটে এক- আর নিজেদের কারামতি জাহের করার জন্য রূপ দেয় আর এক।

আর একটা ঘটনা শুনুন। এক পীরের আড্ডায় পীর ও তার ভক্তদেরকে বিকট চিৎকার করে হেলে-দুলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চালনা করে যিক্র করতে দেখে এক হাজী সাহেব বলেছিলেন, তোমরা যিক্র করো তো এত নাচো কেন? সঙ্গে সঙ্গে পীর বাবাজী উত্তর দিল, বাবা, কেবল হাজী হলেই হয় না, কুরআনের খবর টবর রাখতে হয়। এই বলে পড়তে শুরু করে দিল:

কূল আউযো বেরব্বিন নাছে, মালেকিন নাছে, ইলাহিন নাছে, মিন শাররিল ওয়াছ ওয়াছিল খান্নাছে, আল্লাযী ইয়ো-ওয়াছ বিছু ফী সুদুরীন নাছে, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাছে। অর্থাৎ- রব নাচে, মালেক নাচে, ইলাহি নাচে, জিন-ইনসান সবাই নাচে, নাচে না কেবল খান্নাস।

সম্মানিত পাঠক! লিখাগুলো আমরা অনেক পরিশ্রম করে যত্নের সাথে লিখি। এর জন্য বিনিময় চাইনা। শুধুমাত্র ছবিগুলোতে একবার ক্লিক দিন। 

আর এক আউট বুদ্ধির কথা বলবো। এক পীর ভক্তের গ্রামের একটি ছেলে আমার কাছে পড়তো। ছেলেটি বাড়ী গেলেই পীর সাহেব তাকে প্রশ্ন করতো, আচ্ছা বলতো বাবা, আউযোবিল্লার বাপ কে? 'আলিফ' কেন খাড়া হযে আছে আর 'বে' কেন পড়ে আছে? জিমের পেটে কেন নুক্তা? ছেলেটি বলতো, এগুলো সব বাজে প্রশ্ন। শরীয়তের আদেশ নিষেধের কথা কিছু জিজ্ঞেস করুন। পীর তখন বলতো, বাবা- ভেদ আছে, ভেদ আছে। মৌলবীদের কাছে এসব পাবে না। এসব হচ্ছে মারফতী তত্ত্ব।

এক পীরের কাছে কোন লোক গেলেই তাকে এক গ্লাস পানি আনা করাতো। তারপর ঐ পানিতে লাঠির মাথাটা একটু ডুবিয়ে দিলে বলতো- লে বেটা খেয়ে লে। ভক্ত পানি খেয়ে দেখে একেবারে মিছরীর সরবত। কিন্তু পীর যে আগেই কাম সেরে রেখেছে তা আর কয়জন বোঝে। মানে লাঠির মাথায় 'সেকারিন' দিয়ে রেখেছে।

এক মুনসেফ সাহেবের একটা ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল। বিচলিত হয়ে মুনসেফ সাহেব জনৈক পীরের কাছে গেলেন। দূরে থেকে মুনসেফ সাহেবকে দেখে পীরের জনৈক ভক্ত পীরের কানে কানে বলে দিল যে, হুজুর আজ তিন দিন হল মুনসেফ সাহেবের ছেলে হারিয়েছে, তাই আপনার কাছে আসছেন। সামনে যেতেই কোন কথা না শুনেই চোখ বন্ধ করে ঘাড় হিলিয়ে হিলিয়ে পীর বলতে লাগল, মুনসেফের বেটা! মাত্র তিনদিন হল, ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো, ফল পাবে- ফল পাবে। 

মুনসেফ তো শুনেই অবাক, একি! কেমন করে ইনি জানলেন যে, আমি ছেলের জন্য এসেছি এবং আমার ছেলে তিনদিন হলো হারিয়েছে। যাক, তিনি আবেদন নিবেদন জানিয়ে চলে এলেন। আল্লাহর মর্জি, ছেলেটি কয়েকদিন পর ফিরে এলো। পীরের ভক্ত এ রিপোর্টটাও পীরের কানে দিয়ে দিল।

 ছেলে ফিরে আসায় মুনসেফ সাহেব খুসী হয়ে কিছু উপঢৌকন নিয়ে পীরের কাছে যেতেই, সেই আগের ভঙ্গিমায় বলতে লাগল, মুনসেফের বেটা বলি নাই যে ধৈর্য্য ধরো, ধৈর্য ধরো, ফল পাবে, ফল পাবে। কি হলো- ছেলে এসেছে তো? বাবা, ভেদ আছে ভেদ আছে।

মোটকথা আউট বুদ্ধি খাটিয়ে পীররা তাদের ব্যবসাকে ঠিক রেখেছেন। আর জনমত তাদের অন্ধভক্ত হয়ে পা চাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। 

▶️ পীর ভক্তী যখন অন্ধ হয়,।

অন্ধভক্তরা তদন্ত করে দেখল না যে, আউট সিগ্লালের কাছে ট্রেনটা কেন থামল? যে পীর বাংলার মাটিতে বসে চোখ বন্ধ করে লন্ডনের আদালতে মামলার তদবীরে যায়, যে পীর একই সঙ্গে একাধিক সুরত ধরতে পারে, যে পীর নিজেকে টেলিভিশন বলে দাবী করে সকলের মনের খবর বলে দেওয়ার স্পর্ধা দেখায়, যে পীর ঘরে বসে চোখ বুজে বাইরে বাঁধা দুম্বার গায়ে হাত বুলাতে পারে; সেই পীরের ভক্ত যখন তারই সামনে মটর গাড়ির তলায় পড়ে মারা যায়, কেন সে পীর তখন হাত ইশারায় গাড়ীটা রুকে দিয়ে দুর্ঘটানর হাত থেকে, তার ভক্তকে বাঁচাতে পারে না? এ সব সাধারণ কথা যদি ভক্তদের মাথায় না ঢুকে, তাহলে তাদের অন্ধত্ব ঘুচাবে কে?

Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp