▶️ আধার রাতের বন্দিনী পর্ব- ৬




পর্ব- ৬


 
 

 

[পনের]

ধূলি উড়িয়ে, ঘন্টি বাজিয়ে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলছে আমার পাগলা ঘোড়া। গিরি কান্তার পাড়ি দিয়ে চলছি আলমাআতার সন্ধানে। বিশ্রাম নেই, বিরতি নেই। নেই ক্লান্তির ছোঁয়া। পথে নামায ও হাল্কা টিফিন করতে একটু সময় খরচ হচ্ছে। আমার নামায ও টিফিনের ফাঁকে ঘোড়াটিও কিছু ঘাস-পানি খেয়ে নিচ্ছে।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যার সামান্য একটু আগেই আলমাআতা এসে পৌঁছলাম। অশ্বের পদধ্বনি ও ঘন্টাধ্বনিতে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা অধীর আগ্রহে পথের দিকে তাকিয়ে দেখছে। আমি অশ্ব থেকে অবতরণ করে উচ্চ আওয়াজে গুড আফটারনুন বলে সম্মান প্রদর্শন করলাম।

আমি বললাম, হে আমার বলসেভিক ভায়েরা! আমি অতি সংগোপনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে আসলাম। সব এলাকায়ই আমাদের তরুণ-যুবকরা ও লাল বাহিনীর সদস্যরা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। তবে কিছু স্থানে মৌলবাদী বা রুহানিরা অস্ত্রবলে বলিয়ান হয়ে আমাদের সঙ্গী-সাথীদের উপর আক্রমণ করছে। বুকভরা আশা নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমি বাসকাউন্ড বন্দী শিবিরে গিয়েছিলাম, দু'চারজন মৌলবাদী বা রুহানীকে জবাই করে অন্তরকে সান্ত্বনা দেব এই আশায়।

আমার আশা সম্পূর্ণই ব্যর্থ হল। সেখানে গিয়ে দেখি, নেই কোন বন্দী, নেই আমাদের বলসেভিক জোয়ান। ভেবেছিলাম, কোন মুজাহিদ জঙ্গী গ্রুপ সেখানে আক্রমণ করে বন্দীদেরকে ছিনিয়ে নিয়েছে আর সৈন্যদেরকে হত্যা করেছে। আসলে আমার ধারণাটা একেবারেই ভিত্তিহীন। পল্লীর ঘরে ঘরে অনুসন্ধান করেছি। কেউ গোলাগুলীর কোন আওয়াজ পায়নি। পালিয়ে যেতেও দেখেনি কাউকে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে পাহারারত সৈন্যরাই হয়ত মৌলবাদে বিশ্বাসী ছিল। রাতের আঁধারে বন্দীদের মুক্ত করে ওরাও জীবন নিয়ে পালিয়েছে। সেখানে মুজাহিদরা আক্রমণ করে ছহি-ছালামতে ফিরে আসবে এমনটি ধারণা করা ঠিক নয়। কারণ, তথাকার জনসাধারণ মৌলবাদে বিশ্বাসী নয়, ওরা মনে-প্রাণে কমিউনিজমে বিশ্বাসী।

আমার কথা শুনে সেনা অফিসার বললেন, হে যুবক! তোমার বয়সই বা কত? আর ধারণাই বা কতটুকু সত্য? আমাদের সেনানায়ক মিস্টার মার্শাল বোদায়েভ তিন হাজার পঁচিশজন সৈন্যের বিশাল এক বাহিনী রণসাজে সজ্জিত করে অরণ্যভূমিতে আক্রমণের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আজ দুপুরে সেনাপতিসহ ত্রিশজনের মরদেহ ক্যাম্পে ফিরে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, বিষধর ফণিনীর ছোবলে দংশিত হয়ে তারা ইহকাল ত্যাগ করেছে। লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য সিএমএম হাসপাতালের মর্গে পাঠান হয়েছে। এ মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সেনাবাহিনীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। দুঃখের বিষয়, এ পর্যন্ত জঙ্গী মুজাহিদ গ্রুপের কোন সদস্যকেই গ্রেফতার বা হত্যা করা সম্ভব হয়নি।

জেনারেলের কথা শুনে আমি দুঃখ প্রকাশ করলাম। মাগরিবের সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, এখনো নামাযের সুযোগ করতে পারিনি। প্রকাশ্যে নামায পড়া তো আদৌ সম্ভব নয়। তাই সবিনয় নিবেদন জানালাম, স্যার! ঐ মহল্লায় আমার একজন বন্ধু আছে, ওর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাব, যদি আপনার মর্জি হয়। জেনারেল রাজি হলেন এবং বললেন, জলদি ফিরে এস।

নামায আদায়ের জন্য ছুটে চললাম চাচার বাসায়। চাচা আমাকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। আমি অজু করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। নামায পড়তে পড়তে খানাপিনা হাজির। খানা সেরে চাচাকে কারগুজারী শুনালাম। চাচা খুশিতে আত্মহারা। তিনি আমাকে অনেক দোয়া ও সাহস দিলেন। তারপর বিদায় নিতে চাইলে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। আমি অনুনয়-বিনয় করে বললাম, চাচাজান, ক্যাম্পে তোমাকে যেতেই হবে। মেজর সাহেবরা আমার অপেক্ষায় থাকবেন। চাচা অবুঝ নন। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় দিলেন।

আমি দ্রুত ক্যাম্পে এসে হাজির হলাম। আমাকে দেখে মেজর সাহেব বললেন, “পার্শ্ববর্তী মহল্লা থেকে দশ-বারজন সুন্দরী মেয়েকে ধরে নিয়ে এস, আজ রাতে ফুর্তি করব। অবশ্যই মৌলবাদীদের সন্তান হতে হবে। তোমার সাহায্যে সাত-আটজন সিপাহী দিচ্ছি।" ওদের পৈশাচিক মনোভাব দেখে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত
বিদ্যুদ্বেগে রক্ত সঞ্চালন আরম্ভ হয়ে গেল। আমি বললাম, "আমি ওসব মহল্লা সবেমাত্র ঘুরে এসেছি। এলাকার পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয়।"


জেনারেল শিউরে ওঠে জিজ্ঞেস করলেন, "কোন দুঃসংবাদ নিয়ে আসনি তো?"

আমি বললাম, "স্যার! আমি আমার যে বন্ধুর বাড়ী গিয়েছিলাম, সেখান থেকে আভাস পেয়েছি, কিছু অপরিচিত লোক এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। সবাই ধারণা করছে, লোকগুলো সশস্ত্র এবং মুজাহিদ হতে পারে। পুরো এলাকায় এক আতংক বিরাজ করছে। রাতটাও বেজায় অন্ধকার, কখন কোন্ দিক থেকে আক্রমণ হয় কে জানে। অন্যথায় এলাকা থেকে দশ-বারজন সুন্দরী আনা কোন ব্যাপার নয়। সবাই আপনাদের মনোরঞ্জনের জন্য নিজ কন্যাদেরকে দিতে কার্পণ্যের পরিচয় দেবে না। এখন আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করুন। যা হুকুম করবেন, আমার পালন করতে দেরি হবে না জেনারেল ভয় পেয়ে গিয়ে বললেন, "ঠিক আছে, আজ তাহলে থাক, পরে দেখা যাবে।"

আমার কথা শুনে জেনারেলদের মাথা ঊনপঞ্চাশ। সাথে সাথে জরুরীভিত্তিতে জেনারেলদের পরামর্শ সভা ডাকলেন। উপস্থিত জেনারেল সদস্যগণকে উদ্দেশ্য করে ভারপ্রাপ্ত সেনাপতি বললেন, হে আমার অনুগত সামরিক অফিসারবৃন্দ! আজ সারাদেশে চলছে রূহানীদের দৌরাত্ম্য। আমাদের সৈন্যরা অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে। আমি বিশেষ সূত্রে জানতে পারলাম, এ এলাকা মুজাহিদদের পদচারণায় ভারী হয়ে উঠছে। এমনকি তারা এ ছাউনীতে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে। আশু বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যায় পরামর্শ দিন।

একজন জেনারেল দাঁড়িয়ে বলল, স্যার! দু'হাজার সৈন্যের মধ্য থেকে কমপক্ষে ত্রিশজন সৈন্য বাছাই করে পাহাদারীর ব্যবস্থ করা হোক। নিরাপত্তা জোরদার না হলে এখানে অবস্থান করা মুশকিল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। ত্রিশজনের মধ্যে দশজন থাকবে উত্তরের রাস্তায়। অবস্থান নেবে অর্ধ কিলোমিটার দূরে প্রাইমারী স্কুলে। আরো দশজন দক্ষিণ দিকে আধা কিলোমিটার দূরে রাস্তার পার্শ্বে গোরস্তানে লাশ রাখার উন্মুক্ত ঘরে। বাকী দশজন ছাউনীর আশপাশে। পূর্ব-পশ্চিমে পাহারাদারীর প্রয়োজন নেই। কারণ, ঐ দু'দিক থেকে আক্রমণ আসার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-১



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪


🌹 ধন্যবাদ 🌹


ভারপ্রাপ্ত সেনা প্রধান উক্ত জেনারেল অফিসারের পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করলেন। তিনি ত্রিশজন সুদক্ষ সৈনিককে বাছাই করে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার নিদের্শ দিলেন। সবাই রণসাজে সজ্জিত হতে লাগল। একটু পরেই অভিযানে বেরিয়ে যাবে। কেউ খানাপিনা তৈরির ব্যস্ত : কাজে, কেউ অস্ত্র মুছতে ব্যস্ত। কেউ ম্যাগজিনে গুলী ঢুকাচ্ছে, কেউবা পিটু ব্যাল্ট কমরক কষছে। একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত।

এ অবসরে আমি অদূরের একটি ফার্মেসী থেকে একশ' পাওয়ারের পঞ্চাশটি ঘুমের ট্যাবলেট এনে খুব গোপনে গুড়ো করে নিলাম। তারপর এক কেটলি মদের মধ্যে পাউডারগুলো ভালভাবে মিশিয়ে নিলাম। খানার শেষে সকল পাহাদারকে এক গ্লাস করে মদ পান করতে দিলাম। ওরা মনের আনন্দে কাড়াকাড়ি করে মদপান করে নিজ নিজ দায়িত্বে বেরিয়ে গেল। অন্যরাও প্রায় অর্ধগ্লাস করে পঞ্চাশ-ষাটজনে পান করে যার যার তাঁবু, মোর্চা, বাংকার বা মাদ্রাসার বিভিন্ন কামরায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

জামিউল উলুমের নীচ তলায় অফিস সংলগ্ন একটি রুমে আব্বু থাকতেন। আমি গিয়ে ঐ রুমে শোয়ার ব্যবস্থা করলাম। নেই কোন বিছানাপত্র, নেই আগের সেই সুরত। খানিকটা ঝেড়ে পুরাতন চট বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম। অনেক চেষ্টা করেও চোখে ঘুম আনতে পারলাম না। অতীতের স্মৃতি-বিজড়িত কত কথাই না হৃদয় আঙ্গিনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। একসময় এ মাদ্রাসায়ই অধ্যয়ন করেছিলাম। হেফজখানা, মক্তব, ক্লাসরুম, অফিস, কুতুবখানা ও মাতবাখ সবই আছে, নেই শুধু সেই লোকজন এবং কোলাহল। রাশি রাশি কিতাব আর কুরআন শরীফ জ্বালিয়ে দিয়েছে কাফির, বেঈমান ও খোদাদ্রোহীরা। এটা তো সেই রুম, সেখানে জীবনের বহুদিন কাটিয়েছি, আব্বুর বাহুবন্ধনে অনেক রাত কাটিয়েছি। হেফজখানা ছুটি হলেই আব্বুর রুমে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি। আব্বু ঘুম থেকে জাগিয়ে খানা খাওয়াতেন প্রায় সময়। আজ সবই স্মৃতি। আব্বু নেই, নেই ছাত্র, ওস্তাদ। এ সমস্ত বেদনাদয়ক কথাগুলো বারবারই শিউলীর মতো হৃদয় সরোবরে ভেবে উঠছে। বাঁধনহীন ঝর্নার মতো বয়ে চলেছে অশ্রুধারা। অঘুম নয়নে জেগে আছি আমি একা।


রাত বারটা পার হয়ে যাচ্ছে। ওদের খবরাখবর নেয়া দরকার। তাই রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দরজা খুলছে না যে। 

এখন আর বুঝতে বাকি নেই, ওরা আমাকে সন্দেহ করে বাইরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাকে যে বেরুতেই হবে। অনেক চিন্তার পর মাথায় একটি বুদ্ধি আসল। এই রুমের সাথেই আছে বাথরুম। বাথরুমের একটি দরজা রুমের দিকে, অপর দরজা বাইরে টিউবওয়েলের দিকে। ছাত্ররা সোজাসুজি যাওয়ার জন্য এই দরজা খুলে টিউবওয়েলের পানি আনত। আমি প্রথমে বাথরুমে গিয়ে অপর দরজার ছিটকিনি খুলে একটু ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। বাইরে এসে আল্লাহর শোকর আদায় করলাম।

দু'পা এগিয়ে দেখি, পাহারারত সমস্ত সৈন্য নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি কালবিলম্ব না করে ছুটে গেলাম এক সৈন্যের নিকট। একটু নাড়া দিলাম। ক্ষীণ আওয়াজে ডাকলাম। কিন্তু কোন সাড়া-শব্দ পেলাম না। ওর কোমর থেকে খঞ্জরটি খুলে নিলাম। পরখ করে খঞ্জরের শাণ দেখে নিলাম। শতাধিক জবাই করলেও ধার ক্ষয় হওয়ার নয়। আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে প্রত্যেকের গলায় খঞ্জর চালিয়ে মাথা গর্দান থেকে আলাদা করে ফেললাম। এক এক করে নয়জনের জবাইর কাজ সমাধা করে হাবিলদারের হাতে ও শরীরে কিছু রক্ত ছিটিয়ে দিলাম। তারপর দ্রুতগতিতে ছুটে গেলাম উত্তরদিকের স্কুলে ও দক্ষিণের গোরস্তানে। সেখানে গিয়েও দেখি ঘুমের সাগরে হারিয়ে গেছে হতভাগা সৈনিকরা। উভয় স্থানে সবাইকে জবাই করে ফিরে এলাম ছাউনীতে। খঞ্জরটি হাবিলদারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার পরনের জামা-কাপড় খুলে উনুনে নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিলাম। তারপর হাত-পা ধুয়ে দরজা বন্ধ করে পূর্বের মতো শুয়ে পড়লাম।

রাত আর বেশী বাকি নেই। একটু পরেই হয়ত ভোর হয়ে যাবে। ঘুম আর হল না। হঠাৎ পাশের রুমে দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। আমি সাথে সাথে জানালার ছিদ্রপথে তাকিয়ে দেখি, তিনজন সৈন্য মাঠের এক কোণে কুকুরের মতো দাঁড়িয়ে পেশাব করছে। তারপর এদিক-ওদিক হাঁটতে লাগল। জবাইকৃত লাশের দৃশ্য দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। কারো মুখে কোন ভাষা নেই। সবাই ভয়ে জড়সড়। একজন বলল, "সাবধান! এ ব্যাপারে তোমরা মুখ খুলো না। আমরাও কিছু বিলম্বে রুম থেকে বের হব।" এ বলে সবাই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। আমিও অযু করে তাহাজ্জুদ পড়ে নিঃশব্দে তিলাওয়াত করতে লাগলাম।

রাত শেষে ফজর পড়ে দরজা খোলার অপেক্ষায় বসে রইলাম। সকাল সাতটা। দু'একজন করে জাগতে লাগল। একজন লাশের দৃশ্য দেখে ডাকাডাকি আরম্ভ করে দিয়েছে। হায় হায়! কি সর্বনাশ! সবাইকে জবাই করে দিয়েছে! সৈন্যদের ঘুমের চাহিদা এখনো মেটেনি। তবু জোর করে উঠতে হল। মেজর, জেনারেল, হাবিলদার, সুবেদার ও সাধারণ সিপাইগণ এ মর্মান্তিক দৃশ্য ঘুরে ঘুরে দেখছে।

একজন মেজর নিজ হাতে তালা খুলে আমাকে ডাকতে লাগল। আমি সবই শুনছি। তবু ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি। অবশেষে মেজর নিজেই নাড়াচাড়া দিয়ে আমাকে জাগাল। আমি শোয়া থেকে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার! এত শোরগোল শোনা যাচ্ছে কিসের? মেজর উত্তরে বললেন- সর্বনাশ হয়ে গেছে!

কি সর্বনাশ হয়েছে- জিজ্ঞেস করলে স্যার বললেন- মুজাহিদরা সব পাহাদারকে জবাই করে ফেলেছে।

মেজরের কথায় আমি খুব হা-হুতাশ করে সমবেদনা প্রকাশ করতে লাগলাম। একটু হাঁটাহাঁটি করে হাবিলদারের নিকট গেলাম। সেখানে গিয়েই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ডেকে বললাম, স্যার! হাবিলদার সাহেব মরেননি! সাথে সাথে সৈন্যরা হাবিলদারের নিকট ছুটে এসে দেখে, হালিদার খঞ্জর হাতে রক্তাক্ত শরীরে শুয়ে আছে। একজন বলল, "এ হাবিলদারই ঘাতক, মদপান করে মাতাল হয়ে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। এখানে মুজাহিদরা ঢোকার সাহস পাবে না। সারারাত এ কাণ্ড ঘটিয়ে কসাই এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে।"

মেজর দু'জনকে দু'টি ঘোড়া দিয়ে রাস্তার পাহারাদারদের খোঁজ নিতে প্রেরণ করেন বেশ কিছুক্ষণ আগেই। এরা সবাই ফিরে এসে বলল, হায় হায়! ওখানেও একই কাণ্ড ঘটেছে। সকলের বিবেচনায় সুবেদারই এদের ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হল। ভারপ্রাপ্ত সেনাপতি লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য সামরিক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দিল। সুবেদারকে গ্রেফতার করা হল।

এ সংবাদ দাবানলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। বলসেভিকদের উপর কোন ধরনের আক্রমণ আসুক তা দেশবাসী মেনে নিতে পারে না। দেশের প্রায় বার আনা জনতাই কমিউনিস্ট বিপ্লবের পক্ষে। চার আনা মুসলমান যদিও বিপক্ষে, কিন্তু তারা খুবই দুর্বল। কিছু করা তো দূরের কথা, তারা মুখও খুলতে পারে না। লাল ফৌজ সবার কাছেই সমাদৃত।

এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শুধু যে সেনাবাহিনী মর্মাহত, তা নয়, পুরো কাজাকিস্তানে প্রভাব পড়বে। কাজেই এর প্রতিশোধ নিতে হবে কঠোর হস্তে। এ কথাগুলো বলছিলেন, ভারপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। শহরের অলিগলি ও রাজপথে নেমে এল জনতার ঢল। সবাই হাসপাতাল অভিমুখে ছুটে চলছে। কমিউনিস্ট জওয়ানরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। এরা গগনবিদারী শ্লোগান দিচ্ছে- মৌলবাদ নিপাত যাক, বলসেভিক দিচ্ছে ডাক। দুনিয়ার মজলুম এক হও। দুনিয়ার মজদুর এক হও। রুহানীরা ধ্বংস হোক। ইত্যাদি শ্লোগানে শহর প্রকম্পিত। শহরের অবস্থা দেখে মনে হল কমিউনিস্টরা বড় ধরনের কোন হাঙ্গামার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি অবস্থা বেগতিক দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলাম।


[ষোল]

আমীর সাহেব আহত। তেমন একটা নড়াচড়া করতে পারেন না। জেনারেল জাফর ভাই একা একা নৌকা বেয়ে চলছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। একদিকে হাফেজা ছায়েমা মালাকানী ও খোবায়েব জামবুলীর চিন্তা, অন্যদিকে মুসলমানদের নির্যাতনের করুণ চিত্র বারবারই ভেসে উঠছে হৃদয়ের দর্পনে। সব মিলিয়ে অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন জাফর ভাই।

একটানা কয়েক ঘন্টা দাঁড় টেনে লোকালয় পেরিয়ে গভীর অরণ্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। সাঝ সকালে সামান্য নাস্তা খেয়েছিলেন। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কোন দানাপানি পেটে

পড়েনি। যোহরের নামাযও আদায় করতে হবে। আমীর সাহেব জেনারেল জাফরকে ডেকে নৌকা নোঙর করতে বললেন। জাফর ভাই বড় একটা বৃক্ষের নীচে নোঙর ফেললেন। তারপর জাফর ভাই আমীর সাহেবের অযু-গোছলের ব্যবস্থা করে নিজেও অযু-গোছল সেরে নিলেন। অতপর নামায আদায় করে জাফর ভাই খানার ব্যবস্থা করতে লাগলেন। নিজ হাতে তারকারী কেটে, বন হতে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে খানা পাকালেন। অতপর উভয়ে একসাথে আহারাদি সেরে কায়লুলা করছেন।

দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় শরীর ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। তাই শোয়ার সাথে সাথেই উভয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। গুলীভরা এলএমজি বুকে জড়িয়ে উভয়েই ঘুমাচ্ছেন। একজন সৈনিকের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু অস্ত্র। স্ত্রী- সন্তান দূরে রাখতে পারেন, কিন্তু মুজাহিদ তার অস্ত্র ক্ষণিকের জন্যও তার থেকে আলাদা করতে রাজি নয়। কারণ, যে কোন মুহূর্তে দুশমনের আক্রমণ আসতে পারে। তাই সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়। আর এটা আমীরুল মুজাহেদীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সুন্নতও বটে। আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ)-এর হাতে অস্ত্র আসলে তিনি স্বস্নেহে চুমু খেতেন। মিম্বরে দাঁড়িয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে খুতবা দিতেন। এমনকি ফরয নামায আদায় করার সময়ও অস্ত্র দূরে রাখতেন না, রাখতেন সামনে। ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অস্ত্রকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। মাথায় তেল ছিল না, পরনে কাপড় ছিল না, পেটে ভাত ছিল না, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, কিন্তু অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত থাকতেন।

সাহাবাগণ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতেন। যেমন- তীর, ধনুক, বর্শা, ঢাল, তলোয়ার, খঞ্জর, ছোরা, যেরা, শীরস্ত্রাণ, মিনজানিক (পাথর নিক্ষেপণযন্ত্র) ও ঘোড়া। একজন পথিক সাহাবা রাস্তায় চলছেন, তার কটিদেশেও তলোয়ার শোভা পাচ্ছে। একজন রাখাল সাহাবা পাহাড়ের পাদদেশে মেষ ছড়াচ্ছেন, তাকেও তলোয়ারমুক্ত দেখা যায়নি। সেদিন সারা দুনিয়া প্রত্যেক সাহাবাকে একজন যোদ্ধা হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছে।

আজ মুসলমানরা অস্ত্র ত্যাগ করেছে। অস্ত্র রাখাকে আজ সন্ত্রাস হিসেবে গণ্য করা হয়। হাইজাকার বলে আখ্যায়িত করা হয়। নিজেরা হয় মজলুম, তবু প্রতিশোধ নেয়ার কোন ফিকির নেই। তাই সমস্ত তাগুতি শক্তি এক হয়ে শুধু মুসলমানকে জবাই-ই করছে, মুসলিম মা- বোনদের ইজ্জতও হরণ করছে।

এতক্ষণে সূর্যটা পশ্চিমাকাশে অনেকটা হেলে পড়েছে। অল্পক্ষণ পরেই নেমে আসবে ঘোর অন্ধকার। আমীর সাহেব ঘুম থেকে জেগে জাফর ভাইকে জাগিয়ে দিলেন। তারা তাড়াতাড়ি অযু সেরে আছরের নামায পড়ে নিলেন। আমীর সাহেব জায়নামাযে বসেই পরামর্শ চাইলেন। জাফর ভাই বললেন, "এখানে অনেক সময় অবস্থান করছি, আর বেশী সময় থাকা ঠিক হবে না। এখান থেকে লোকালয় বেশি দূরে নয়। কাঠুরিয়ারা এ পর্যন্ত কাঠ সংগ্রহের জন্য আসে তার অনেক আলামাত পাওয়া গেছে। তারা দেখে ফেললে রক্ষা নেই। সাথে সাথে সংবাদ পৌছিয়ে দেবে লাল ফৌজদের ক্যাম্পে। ওরা এসে অতর্কিতে আক্রমণ করে বসবে আমাদের উপর। তাছাড়া খোবায়েব ছায়েমাকে নিয়ে এসে আমাদের খুঁজবে। না পেয়ে কোথায় জানি হারিয়ে যায়। আবার অনেক দূরে গেলেও ওরা সমস্যায় পড়বে।"

জাফর ভাইয়ের কথা শুনে আমীর সাহেব খানিকটা নীরব থেকে মাথা তুলে বললেন, "এখানেই আমরা রাত্রি যাপন করব। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের হেফাজত করবেন। এখান থেকে অন্যত্র চলে গেলে খোবায়েব বিপদে পড়ার আশংকা আছে।" মাগরিবের নামাযের সময় হলে উভয়ে নামায আদায় করলেন। আমীর সাহেব ছাপ্পরে বসে পাহারা দিচ্ছেন আর জাফর ভাই নৈশভোজের আয়োজন করছেন।


রান্না শেষ হতে না হতেই এক বিকট আওয়াজে বন-জঙ্গল প্রকম্পিত হয়ে উঠল। এতে সামান্য ভূকম্পনও অনুভূত হল। এটা কিসের শব্দ তাৎক্ষণিকভাবে অনুধাবণ করা সম্ভব হল না। আমীর সাহেব ধারণা করলেন, মর্টার, মাইন বা রকেটলাঞ্চারের আওয়াজ হতে পারে। তাছাড়া বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজও অনেকটা এ ধরনের হয়ে থাকে। জাফর ভাইও এ ধরনের একটি কিছু মনে করছেন।

জাফর ভাই রান্না ফেলে দৌড়িয়ে আমীর সাহেবের নিকট আসলেন। কিসের আওয়াজ এ ব্যাপারে উভয়ে মতবিনিময় করছিলেন। চার-পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হতে না হতেই রাশিয়ান মিগ-৫৬ গুপ্ত

বোমারু বিমান গাছপালার উপর দিয়ে চক্কর দিতে লাগল। হঠাৎ সামান্য দূরে আরো একটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ হল। মনে হল, যেন প্রথম আসমানটি প্রচণ্ড আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে জমিনে পতিত হয়েছে।

আমীর সাহেবের বুঝতে বাকি রইল না যে, আমাদের অবস্থান দুশমনরা জেনে ফেলেছে। তাই গুপ্ত বিমান পাঠিয়েছে। ওরা আমাদের ধ্বংস সাধন করতে চাচ্ছে। আমীর সাহেব জাফর ভাইকে হুকুম দিলেন, এন্ট্রি এয়ারক্রাফট গানটি বড় বৃক্ষটির নীচে স্থাপন করতে। হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে জাফর ভাই বিমান বিধ্বংসী গানটি ফিট করলেন সুন্দরভাবে।

আমীর সাহেব খুব কষ্ট করে নৌকা থেকে নেমে বৃক্ষের নীচে গিয়ে গানটি চেক করলেন। বেরেলটি দক্ষিণের দিকে দিয়ে গোলাভর্তি করে শিকারের অপেক্ষায় বসে রইলেন। একটু পরে জাফর ভাই আমীর সাহেবকে বললেন, চোরা বিমানটি খুব আস্তে আস্তে এদিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হল। বিমানটির শব্দ নেই বললেই চলে। হঠাৎ আলো প্রকাশ পেল। আমীর সাহেব ট্রিগারে শাহাদাত আঙ্গুলি রেখে অপেক্ষা করছেন। আনুমানিক রেঞ্জের ভেতরে আসার সাথে সাথে তিনি উচ্চারণ করলেন, ওমা রামাইতা ইয রামাইতা অলাকিন্নাল্লাহা রামা। সাথে সাথে ট্রিগার টেনে ফায়ার করে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে একঝাঁক গুলী ছিদ্রপথে বেরিয়ে গেল। বিকট আওয়াজে বন-বাদার প্রকম্পিত হল। আগুন লেগে গেল পুরো বিমানটিতে। দু'জন পাইলটসহ হুমড়ি খেয়ে গাছপালার ডালপালা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে জমিতে পতিত হল।

জাফর ভাই আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে ছুটে গেলেন বিধ্বস্ত বিমানের দিকে। আগুনের প্রচণ্ড গরমে নিকটে যেতে ব্যর্থ হন। আগুনের তাপে সংরক্ষিত বোমাগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটে যায়। বিরাট এলাকার গাছপালা পুড়ে ছারখার হয়ে গেল এক মুহূর্তে। বিকট আওয়াজে বন্যপশুরা প্রাণপণ ছুটে পালাচ্ছে দিদ্বিদিক। পুরো এলাকা দিনের মতো আলোকিত হয়ে গেল। আমীর সাহেব ও জাফর ভাই অপেক্ষাকৃত দূরে ও বৃক্ষের আড়ালে থাকার কারণে আল্লাহ তাদের হেফাজত করেছেন। তা না হলে এখানেই তাদের জীবনের অবসান ঘটত।

আমীর সাহেব জাফর ভাইকে ডেকে বললেন, ছামানাপত্র জলদী নৌকায় তোল। এখানে এক মুহূর্তও দেরী করা ঠিক হবে না। পালাও, জলদি পালাও। আমীর সাহেবের কথামত জাফর ভাই খুব তাড়াতাড়ি ছামানাপত্র নৌকায় তুলে দাঁড় টানতে আরম্ভ করলেন। একা একা দাঁড় টানা খুবই কষ্টকর, তবুও টানতে হয়। আমীর সাহেব কোন মতে কাণ্ডারীর দায়িত্ব পালন করে চলছেন।


রাত প্রায় একটা। এতক্ষণে নৌকা অনেক ভিতরে নিয়ে এলেন। এখানে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। আমীর সাহেব নৌকা তটে ভিড়িয়ে নোঙর ফেললেন। পেটে ক্ষুধার অনল দাউ দাউ করে জ্বলছে। সন্ধ্যার পর থেকে এ পর্যন্ত কিছু খাওয়া হয়নি। তাই উভয়ে একসাথে খেয়ে কোমরটা একটু সোজা করলেন। তারপর সকলেই আল্লাহর উপর ভরসা করে ঘুমিয়ে পড়লেন।

সুবহে সাদেক ঘনিয়ে এল। বন মোরগের ডাক শেষ রজনীর নীরবতা ভঙ্গ করছে। আমীর সাহেব ও জাফর ভাই ঘুম থেকে জেগে ফজরের নামায আদায় করলেন। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দু'হাত প্রসারণ করলেন আকাশের দিকে। প্রার্থনা করলেন- 'হে আমাদের পরওয়ারদেগার! হে গাফফার! আমাদের ক্ষমা কর। তুমি আমাদেরকে পদে পদে নুসরত করেছ, সামনেও করবে বলে আশা রাখি। হে আল্লাহ! আমরা ইসলামকে বিজিত হিসেবে দেখতে চাই। অতএব তুমি ইসলামের বিজয় দান কর। হে আল্লাহ আমাদের জান- মাল ও সময় তোমার রাস্তায় খরচ করার তাওফীক দাও। হে আল্লাহ! অসহায় হাফেজ খোবায়েব জামবুলী ও হাফেজা ছায়েমা মালাকানীকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। আমীন, আমীন, আমীন।"

দোয়া শেষে জাফর ভাই নাস্তা তৈরী করে দু'জনে খেলেন। আমীর সাহেব জাফর ভাইকে পাহারাদারীর নির্দেশ দেন। জাফর ভাই ক্লাশিনকভ হাতে নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন আর আমীর সাহেব শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।


🔷🔷🔷🔷

পর্ব-৭ এখানে.......

🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

সমাজে সততা ও ইমানের গুরুত্ব  লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ
Chat with us on WhatsApp