*২য় পর্ব শুরু*
মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মারেফাতের ময়দানেই বিচরণ করেন। হযরত জালাল গোরখী নকশেবন্দী (রহঃ) তাকে খেলাফত প্রদান করে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন।
তিনি বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মসজিদ-মাদ্রাসা ও খাল্কা প্রতিষ্ঠা করেন। তার অলৌকিক বহু ঘটনাবলী এখনো লোকমুখে শোনা যায়। অনেক দেশ সফর করে তিনি জামবুলে আসেন। এখানে তিনি ইসলাম প্রচার করেন। অনেকেই তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন। এখনো জামবুলের মানুষ ধর্মানুরাগী। জামবুলের শিক্ষা-দীক্ষা, কৃষ্টি- কালচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিবেচনা করে বাগদাদ থেকে হিজরত করে জামবুলে আসেন। জামবুলকেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করার উপযুক্ত স্থান মনে করেন।
এখানে তিনি কারুকার্যখচিত একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করেন। তারই পাশে প্রতিষ্ঠা করেন বাগদাদের প্রসিদ্ধ মাদ্রাসায়ে নেজামিয়ার অনুকরণে বিশাল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মসজিদটির সামান্য দক্ষিণে খনন করেন বিশাল এক দীঘি। এই দীঘিকে কেন্দ্র করেই খাকা, হেফজখানা ও মেহমানখানা তৈরী করেন। তারই অদূরে চার ফুট উঁচু দেয়ালবেষ্টিত বিরাট এলাকা নিয়ে স্থাপন করেন মানুষের আখেরী বাসস্থান। দাদা আমীরজান নকশেবন্দী এখন ওই গোরস্তানেই শায়িত। তিনি রেখে গেছেন অনেক শাগরেদ, মুরীদ, ভক্ত ও গুণগ্রাহী।
আমার পিতা ইউসুফ জামবুলী শহীদ (রহঃ) মাধ্যমিক শিক্ষা দাদাজানের কাছে শেষ করে উচ্চ ডিগ্রীর জন্য বাগদাদ, সমরকন্দ ও বুখারার বড় বড় মাদ্রাসা থেকে একেক বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। আধ্যাত্মিক বিষয়াদী দাদাজানের সান্নিধ্যে থেকেই চর্চা করেন। তারপর দাদাজানের পরামর্শক্রমে কাজাকিস্তানের রাজধানী আলাআতা জামেউল উলুম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আমি আট বছর বয়সে আব্বাজানের নিকট পবিত্র কুরআন শিখেছি।
তারপর তিনি আমার কথা, দেশের কথা ও দ্বীনের চিন্তা করতে লাগলেন। এর মধ্যদিয়ে কেটে গেল রজনী। রাতের পাখীরা পালক ঝেড়ে উড়তে লাগল। মোরগ ডাকছে, বুলবুলিরা গান ধরেছে, পূর্বগগন ক্রমশই রাঙ্গা হয়ে উঠছে। মুয়াজ্জিন আগের মতো আজান দিচ্ছে না। আজানের শব্দ শুনলেই কমিউনিস্ট হায়েনারা মুয়াজ্জিনকে প্রহার করে। তাই প্রায় এক মাস যাবত কাজাকিস্তানের আকাশ-বাতাস আজানের মধুর ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে না। আমরা মা-বেটা অজু-এস্তেঞ্জা সেরে নামায আদায় করলাম। নিজ গৃহে বন্দী অবস্থায় কেটে গেল অনেকদিন।
আব্বাজানের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য আমি অনুমতি চাইলে আম্মু রাজি হলেন। আগামীকাল খুব ভোরে আলমাআতা যাওয়ার চূড়ান্ত ফয়সালা হল। আমি আম্মুকে বললাম, কাল ভোরে আব্বাজানের নিকট আলমাআতা তো অবশ্যই যাব। আজ দেশের হালচাল জানার জন্য জামবুল শহর থেকে একটু ঘুরে আসি। আমার কথায় আম্মু রাজি হলেন। নাস্তা-পানি খেয়ে টাঙ্গা চড়ে জামবুলে গেলাম। শহরের অলি-গলি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। গাড়ী-ঘোড়ার ভীড় নেই, নেই কোন কোলাহাল। হাটবাজার, রাস্তাঘাট ফাঁকা।
বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪
🌹 ধন্যবাদ 🌹
মনে হল, এ যেন এক ভূতুড়ে নগরী। এ দৃশ্য আমার হৃদয়ে প্রচন্ড আঘাত হানল। বেশী সময় শহরে কাটান সমীচীন মনে করলাম না। তাই বাড়ী ফিরছি বুকভরা ব্যথা নিয়ে। সামান্য পথ অতিক্রম করতেই খারকানী চাচার সাথে দেখা। তিনি আমাদের পাশের মহল্লার একজন গাঁধা ব্যবসায়ী। তিনি এক শহর থেকে গাঁধা খরীদ করে অন্য শহরে বিক্রি করতে যান। গাঁধার পাল নিয়ে প্রায়ই আলমাআতা যেতেন। তাই তার কাছ থেকে আব্বাজানের কথা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, "বাবা! সেখানে খুব গরম অবস্থা। কমিউনিস্টরা বহু আলেম-ওলামাকে ধরে নিয়ে গেছে।
কাউকে গরম তেলে, কাউকে আগুনে জ্বালিয়ে, কাউকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে, আবার কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, কাউকে রাস্তার পাশে বড় গাছে পেরেক মেরে শহীদ করে দিচ্ছে। বেশকিছু দ্বীনদার-পরহেজগার মানুষকে ধরে নিয়ে গেছে সাইবেরিয়ায়। জ্বালিয়ে দিয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ী। লুটে নিয়েছে মুসলমানদের দোকানপাট। যে সমস্ত মুসলমান লেনিনের আদর্শ গ্রহণ করেছে, তারা সবাই বহাল তবিয়তে আছে। শুনেছি, তারা হায়েনার মত মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করছে।”
চাচার কথা শুনে আম্মুর স্বপ্নের কথা মনে হল। আমার শরীর কাঁপছে, শক্তি-সাহস লোপ পাওয়ার উপক্রম। চাচার কথায় আমার একিন হয়ে গেল যে, আব্বাজানকে ওরা নিশ্চয় শহীদ করে দিয়েছে। কারণ, কাজাকিস্তানের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ জামেউল উলুম একটি মার্কাজে দ্বীন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিচালক আল্লামা ইউসুফ জামবুলীকে ছেড়ে দেবে, তা হতে পারে না। নিশ্চয়ই ওরা তাকে শহীদ করে দিয়েছে। বাড়ী গিয়ে এ সংবাদ আম্মুকে শুনালে হয়ত আমাকে আব্বুর খোঁজে যেতে দেবেন না। তাই বাড়ীতে গিয়ে এসব কিছুই শুনাইনি। বরং বলেছি, আলমাআতা যেতে পারব। কোন অসুবিধা হবে না। খবর মোটামুটি ভাল।
[চার]
১৯২৯ সাল। ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখ। ভোরবেলা আম্মুর সাথে নাস্তা খেয়ে আব্বুর খোঁজে আলমাআতার উদ্দেশ্যে জামবুল ত্যাগ করব। আম্মু বারবার আমার দিকে অশ্রুসজল নয়নে তাকিয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বলছিলেন, "বাবা! তোমার আব্বুকে হয়ত বা পাবে না। আমি তোমাকেও হারাতে বসলাম কিনা কে জানে!" আম্মুর বয়স ষাটের কোঠায়। স্বাস্থ্য তেমন ভাল নয়। শরীর খুবই দুর্বল। বৃদ্ধা জননীর হৃদয়বিদারক কথাগুলো আমার হৃদয়ে খুব আঘাত হানল। আমার আঁখি যুগলের কোণ বেয়ে প্রবাহিত হচ্ছে অশ্রুধারা।
আমরা উভয়ে কান্না সামলিয়ে নিলাম। আম্মু পথ খরচের জন্য আমার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে বললেন, "বাবা! এগুলো প্রয়োজনে খরচ করো। ইসলামের ভাগ্যাকাশে কাল মেঘ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ঘনঘটা ও অমানিশা কখন ঘুচবে, তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। বাবা! দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য, মুসলমানদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচানোর জন্য, বঞ্চিতদের অধিকার ছিনিয়ে আনার জন্য তোমাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তোমাকেই হতে হবে ইসলামের নির্ভীক সিপাহসালার। অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়ার চেয়ে কাফের, বেঈমান, নাস্তিক ও মুর্তাদদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে, ওদেরকে খতম করে শাতাদাতবরণ করা অধিক
শ্রেয়। বাবা! তোমার মা শুধু আমি একজন নই। আমার বয়সী সকল মুসলমান মহিলাই তোমার মায়ের সমান। তাদের ইজ্জত রক্ষা করা তোমার উপর ফরয। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ এত সস্তায় জীবন বিকাবে, তা হতে পারে না। তোমাকে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। তুমি তোমার আব্বার খবর নিয়ে জলদী ফিরে এসো। শুনেছি, তুর্কমেনিস্তানে আনোয়ার পাশা যুবকদেরকে জিহাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেছেন। কিছু কিছু যুদ্ধও নাকি করছেন। তিনি নাকি. জিহাদ করা বর্তমান সময়ে ফরযে আইন ফতোয়া দিয়েছেন। তার বাহিনী নাকি তাসখন্দ, সমরকন্দ ও বোখারায় জিহাদ করছে। তোমাকেও আমি আনোয়ার পাশার নিকট পাঠাব। তুমি তার দলে ভর্তি হয়ে জিহাদ কর। মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-ওলামা ও মা- বোনদের ইজ্জত রক্ষা কর।"
আমি কান পেতে আম্মুর কথাগুলো শুনছিলাম। চোখে-মুখে তার প্রতিশোধের আগুন। বুকে দ্বীনের ভালবাসা। মুখে বীরাঙ্গনা খানছা (রাঃ)-এর বাণী। আমার মনে হচ্ছিল, এ যেন বর্তমান জামানার খাওলা, ছুমাইয়া, উম্মে জিয়াদ, উম্মে আম্মারা ও আম্মা আয়েশা ছিদ্দীকা (রাঃ)। তার তেজোদীপ্ত ভাষণ আমার নিকট অমৃত সুধার মত লাগছিল।
আমি আম্মুকে বললাম, এই তো সেদিন ওলামায়ে কেরাম আনোয়ার পাশার বিরুদ্ধে ফতোয়া লিখে বোখারার অলিতে-গলিতে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তাকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাকে কোন ধরনের সাহায্য- সহযোগিতা না করা, আশ্রয় না দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আম্মু আমার কথা শুনে স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি ভ্রু-কুঞ্চিত করে বললেন, "মাখলুকের ফতোয়ার দরকার নেই। আল্লাহ নিজেই মুফতী হয়ে ফতোয়া প্রদান করেছেন জিহাদ করার জন্য।" আম্মার কথাগুলো আমাকে দিয়েছে নতুন দিগন্তের সন্ধান।
আমি আম্মুর আঁচল আঁকড়িয়ে ধরে শপথ নিয়েছি, প্রতিজ্ঞা করেছি, বেঈমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাব। আম্মু আমাকে বিদায় দিয়ে গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। আমিও সালাম জানিয়ে আলমাআতার দিকে পা বাড়ালাম। আম্মু আবার পেছন দিক থেকে ডেকে বললেন, "বাবা! যথাসম্ভব বড় বড় সড়কে না গিয়ে সাধারণ রাস্তায় যেও।
গ্রাম্যপথ অনেকটা নিরাপদ। এটাই তোমার জন্য আমার আখেরী নসীহত।" আমি জামবুল শহরে গিয়ে দেখি, ট্রেন চলাচল বন্ধ। টাঙ্গা ছাড়া আর কোন বাহন নেই। অনেক দূরের পথ। একটানা যাওয়া যাবে না। বদলিয়ে বদলিয়ে যেতে হবে। আমি আল্লাহর নাম নিয়ে টাঙ্গায় উঠে বসলাম। টাঙ্গা ঘন্টাধ্বনি বাজিয়ে ছুটল খট্ খট্ খট্ খট্।
দু'দিন, দু'রাত পার হল। পরদিন সকাল ৮টায় আলমাআতায় পৌছলাম। সেখান থেকে সামান্য দক্ষিণে গেলেই জামেউল উলুম বিশ্ববিদ্যালয়। শহরে লোক চলাচল তেমন নেই। নেই গাড়ী-ঘোড়ার কোলাহল। দু'একটি দোকানপাট খোলা থাকলেও কেনাকাটা তেমন নেই। মাঝে-মধ্যে পুলিশের গাড়ী টহল দিচ্ছে। দু'একটি খণ্ড খণ্ড মিছিল এলোপাতাড়িভাবে শহর প্রদক্ষিণ করছে। সকলের হাতে কাস্তে-হাতুড়িখচিত নিশান। তারা শ্লোগানে শ্লোগানে আসমান-জমিন কাঁপিয়ে তুলছে- দুনিয়ান মজদুর
: এক হও, এক হও।
কেউ খাবে আর কেউ খাবে না: তা হবে না, তা হবে না।
নারী-পুরুষ এক সমান
: সাম্যবাদীর শ্লোগান।
মৌলবাদ নিপাত যাক
: সমাজতন্ত্র দিচ্ছে ডাক।
ইসলামকে কবর দাও : কাস্তে-হাতুড়ি হাতে নাও। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের শ্লোগান দিচ্ছে। সবগুলো এখন মনেও নেই। আমার পরনেও নাসারাদের পোশাক। বুকে কাস্তে- হাতুড়ি মার্কা স্টিকার। হাতে লেনিনের ফটো অংকিত ডায়েরী। হঠাৎ কেউ দেখে মৌলবাদী বা রূহানী হিসেবে চিহ্নিত করতে মুশকিল হবে।
আমি আস্তে আস্তে জামেউল উলুমের দিকে যাচ্ছি। মাদ্রাসার প্রায় কাছাকাছি পৌছলে এক পথচারী আমার হাত ধরে বললেন, "বাবা! কোথেকে এসেছ?” লোকটাকে দেখে একটু চেনা চেনা মনে হল। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। আমি অচেনার ভান করে বললাম, আমার বাসা কারজল কলোনী।
পথচারী মুচকি হেসে আমার জামা-কাপড়ের দিকে বারবার তাকিয়ে কি যেন আবিষ্কার করছেন। তারপর একটু জোর করেই তার বাসায় নিয়ে গেলেন। হাম্মামখানার দরজা খুলে কাপড়, সাবান ও গামছা দিয়ে বললেন, "বাবা! বহু দূর থেকে এসেছ, গোসল করে খানা খেয়ে বিশ্রাম নাও, আলাপ পরে হবে।"
লোকটির ব্যবহারে আমার বুঝতে একটুও বাকি রইল না যে, তিনি আমাকে চেনেন। আমি মাদ্রাসায় যেতে চাইলে তিনি নিষেধ করে বললেন, "বিকেলে তোমাকে নিয়ে যাব। এখন বিশ্রাম কর।" আমি নিরুপায় হয়ে গোসল করে খানাপিনা সেরে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লাম।
অল্পক্ষণের মধ্যে নিদ্রা এসে কাবু করে আমাকে অচেতন বানিয়ে দিল। একটানা দু'তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে জেগে দেখি দু'টো বেজে গেছে। ঝটপট অজু করে যোহরের নামায আদায় করে দুপুরের খানা খেয়ে নিলাম।
ঘরওয়ালা খুব শান্ত মেজাজের। মুচকি হাসি তার চিরাচরিত অভ্যাস। আলাপে খুব রসাল। মাদ্রাসার কথা জানতে চাইলে তিনি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "বাবা! মাদ্রাসায় গিয়ে কোন লাভ নেই। গত এক সপ্তাহ হল কম্যুনিষ্টরা রাজধানী আলমাআতায় বসবাসরত আলেম- ওলামাদেরকে মসজিদ-মাদ্রাসা, খাল্কা, ঘরবাড়ী ও রাস্তাঘাট থেকে ধরে সাইবেরীয়ার বরফাঞ্চলে নিয়ে গেছে। নিয়ে গেছে বহুসংখ্যক মা- বোনদের। গতকাল সন্ধ্যায় জামেউল উলুমের বেশ ক'জন ছাত্র-শিক্ষক ও আরো কিছু নারী-পুরুষকে নিয়ে গেছে পূর্বদিকের গ্রামের পরিত্যক্ত এক জমিদার বাড়ীতে। সেখানে দিনে-দুপুরে কোন লোক যেতে ভয় পায়। প্রাচীন আমলের জমিদার বাড়ী এখন বনবনানীতে ভরে গেছে। সাপ, বিচ্ছু আর হিংস্র হায়েনাদের আবাসভূমি। ওদেরকে নেয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে অনেকগুলো গুলীর শব্দ শুনেছি। মনে হয় ব্রাশফায়ারে সবাইকে শহীদ করে দিয়েছে। ওদের সাথে আমার আদরের দুলাল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র তমিজ দুয়ায়েভকেও নিয়ে গেছে। ওদের হালত দেখার মত সাহস হারিয়ে ফেলেছি।” এই বলে লোকটি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোন ভাষা আমার অন্তরে সঞ্চিত ছিল না। লোকটির কথায় আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, আব্বুকেও ওরা রেখে যায়নি। নিশ্চয়ই হায়েনারা আমার আব্বুকে শহীদ করে ফেলেছে।
আম্মুর স্বপ্নের ব্যাখ্যা যথাযথই প্রতিফলিত হয়েছে। আমি তার কাছ থেকে জানতে চাইলাম, এখন কি মাদ্রাসা বন্ধ? নাকি কেউ আছে? তিনি বললেন, "না, মাদ্রাসায় এমন কেউ নেই, আছে লাল ফৌজের সদস্যরা। কাউকে ওদিকে যেতে দেয় না।"
কথাগুলো শোনামাত্র আমার ধমনিতে খালিদ ইবনে ওলিদের শোণিতধারা প্রবাহিত হতে লাগল। প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠল। এক অসহনীয় বেদনায় কূলহীন পারাবারে সাঁতার কাটছি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম প্রতিশোধ নেয়ার।
আমি জামেউল উলুমের হেফজ বিভাগে দু'তিন বছর পড়েছি। আশপাশের বাসাবাড়ী, বাড়ীঘর, দালানকোঠা, পথঘাট, অলিগলি সবই আমার পরিচিত। পার্শ্ববর্তী এলাকার গ্রাম্য পথঘাটও অচেনা নয়। চোখ বন্ধ করেও ঘুরে আসতে পারব কয়েক গাঁ। অনেক বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে আলমাআতা এসে পৌঁছেছি। যেভাবেই হোক আব্বুর সঠিক সংবাদ নিতে হবে। তার লাশ খুঁজে বের করতে হবে। মনের সংকল্প মজবুত থেকে মজবুত হতে লাগল। হতভাগিনী আম্মু সংবাদের অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে আছেন। আব্বুর সংবাদ আম্মুকে পৌঁছিয়ে বোখারার দিকে পা বাড়াব। আনোয়ার পাশার মুজাহিদ বাহিনীতে যোগ দিয়ে খোদাদ্রোহীদের চিরতরে নিপাত করতে হবে
এসব চিন্তার মধ্যদিয়ে এক সময় দিনমণি আঁধারে লুকিয়ে গেল। সারাটি দিবস পার হয়ে গেল, অথচ কোথাও থেকে কোন আযানের ধ্বনি কানে এলো না। একসময় আলমাআতার মিনারে মিনারে আযান প্রতিধ্বনিত হতো। আজ নীরব-নিস্তব্ধ। আমি মাগরিবের নামায ঘরে পড়ে নিলাম। তারপর কুরআন তিলাওয়াত করে দেশ-জাতি ও বৃদ্ধা আম্মুর জন্য দোয়া করলাম। দোয়া শেষ করলে গৃহকর্তা ফিরে এলেন এবং আমার অবস্থা জানলেন। অতপর শহরের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করলেন।
আমি বললাম, চাচা! কিছুক্ষণ পর আমি আমার আব্বুর খোঁজে ঐ গ্রামে জমিদার বাড়ী যাব। সেখানে আব্বুকে তালাশ করে দেখব, তিনি শহীদ হয়েছেন, না বেঁচে আছেন। যদি শহীদ হয়ে থাকেন, তবে দাফনের ব্যবস্থা করব।
আমার কথা শুনে তিনি তার চোখ দু'টি কপালে তুলে বললেন, "বেটা! এত দুঃসাহস করা ঠিক হবে না। ওখানে দেও-দানবের আস্তানা। অনেক কাঠুরিয়া সেখানে ভয়ে প্রাণ হারিয়েছে। দিনে-দুপুরেও এর আশপাশে মানুষ যায় না। পার্শ্বেই রয়েছে পুরনো শশ্মান। তাছাড়া রাতটা
ঘুটঘুটে অন্ধকার। একা একা ওখানে যাওয়া আমি ঠিক মনে করি না।"
চাচার কথাগুলো আমার কাছে তিক্ত মনে হচ্ছিল। আমি তাকে সাহস দিয়ে বললাম, দুনিয়া থেকে একদিন না একদিন বিদায় নিতেই হবে। মউত থেকে পাশ কেটে থাকা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আপনার দোয়া ও অনুমতি কামনা করি।
এসব আলাপ-আলোচনার মধ্যে এশার সময় হয়ে গেল। দু'জনে নামায পড়ে নিলাম। নামায শেষে তিনি অন্দর বাড়ীতে চলে গেলেন। একটু পরেই খানাসহ আমার কামরায় এসে বললেন, চল বেটা খানা খেয়ে নেই। এক সাথে দু'জনে খানা খেলাম। তিনি নিজ হাতে খানা পরিবেশন করলেন। আহার সেরে নাছারাদের পোশাক পরিধান করলাম। চাচাকে ডেকে বললাম, আমার জন্য খাছ করে দোআ করবেন। অনেক তকলিফ দিয়েছি, ক্ষমা করবেন। চাচা চোখের পানি মুছে বললেন, "বাবা! যেখানেই যাও, যা কিছু কর, সংবাদ দিও। আবার ফিরে এস, এটা তোমার বাড়ী, কোন সংকোচ মনে করো না। তুমি আমার বন্ধুর ছেলে। তোমার আব্বার সাথে ছিল আমার অকৃত্রিম ভালবাসা। তুমি হয়ত চেন না। তুমি আমার ছেলেতুল্য।"
এসব উপদেশ দিয়ে তিনি আমাকে দোআ করে বিদায় দিলেন। আমি আঁধারে মিলিয়ে গেলাম।
[পাঁচ]
রাত আনুমানিক দশটা। লোক চলাচল ক্রমশই কমে আসছে। চলছি একা অজানার সন্ধানে। শহরের প্রধান সড়ক ছেড়ে দক্ষিণের কাঁচা পথ ধরে চলছি। প্রায় এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাঁ-দিকে চলে গেছে পায়ে চলা মেঠো পথ। এ পথেই পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ী যাওয়া সহজ। মাঝে-মধ্যে দু'চারটি বাড়ী থাকলেও লোকজন ঘুমের ঘোরে অচেতন। হঠাৎ হঠাৎ খেকশিয়ারের হুক্কা হুয়া আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। আবার কোথাও কোথাও কুকুরের কর্কশ বকুনী রাতের নীরবতা ভঙ্গ করছে। দূর আকাশে দু'একটি তারা মিটিমিটি জ্বলছে। মনে হচ্ছিল, কালো চাদরে রাত্রিটা যেন আবৃত। দু'হাত দূরে কোন কিছু দেখার সাধ্য নেই। আমি বিড়ালের মত পা ফেলে সামনে এগিয়ে চললাম। হরিণের মত সাবধানতা সিংহের মত বাহাদুরী নিয়ে চলছি।
আমার একমাত্র সফরসঙ্গী আল্লাহ। কখনো কখনো কলাবাদুরের ডানার পত্ পত্ শব্দে ছাতি দুরু দুরু কাঁপছে। পা সামনে এগুতে চায় না। আবার দূর থেকে ভুতুম! ভুতুম! এক ভয়ানক আওয়াজ ভেসে আসছে। শিশুকালে এ আওয়াজ শুনে মায়ের আঁচলে লুকাতাম। আহ! কি ভয়ংকর আওয়াজ! এসব ভয়-ভীতির পাহাড় ডিঙ্গিয়ে অনেকদূর অতিক্রম করেছি। পল্লী এলাকা প্রায় শেষ। আর অল্প কিছু পথ সামনে এগুলেই সেই অরণ্যভূমি, যেখানে প্রাচীন আমলের জালিম রাজার রাজপ্রাসাদ। আশপাশে বাড়ী-ঘর নেই, নেই কোন জনপদ। আল্লাহর গজবে অত্যাচারী রাজা বংশধরসহ ধ্বংস হয়ে গেছে শত বছর আগে। এখন আছে শুধু লাল ইটের দালান-কোঠায় ধ্বংসাবশেষ।
যুগ যুগ ধরে সে স্মৃতি বহন করে চলেছে এলাকাটি। বিশাল বিশাল কক্ষ, তার ভেতর যেন অমানিশার অন্ধকার। সে সমস্ত দালান-কোঠার অভ্যন্তরে রয়েছে নানা প্রজাতির কাঁটাযুক্ত গাছ-গাছালি। আবার ছাদে ছাদে রয়েছে অসংখ্য বট ও পাকুড় গাছ। দূর থেকে তাকালে মনে হয় এ যেন ঘন জঙ্গল। হাঁটতে হাঁটতে একেবারে নিকটে চলে আসলাম। তারপর খুব সতর্কতার সাথে আব্বুর মরদেহ তালাশ করতে লাগলাম।
হঠাৎ ভেসে আসল মানুষের কণ্ঠস্বর। হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল। পা থেমে গেল। এদিকে-ওদিক তাকাতে লাগলাম, কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। সত্যিই কি তা মানুষের আওয়াজ? নাকি ভূত-পিচাশের আওয়াজ! কিছুই ঠাহর করতে পারছি না। হঠাৎ অস্পষ্ট সুরে 'আল্লাহ, আল্লাহ, বাঁচাও, বাঁচাও, রক্ষা কর' এসব আওয়াজ শুনতে পেলাম। এতক্ষণে আমার হৃদয়ে দৃঢ়বিশ্বাস জন্মেছে যে, নিশ্চয়ই এটা মানুষের কন্ঠস্বর। হয়ত কোন বন্দী বা বন্দিনীর কণ্ঠ থেকে তা ভেসে আসছে।
আমি আস্তে আস্তে সেদিকে এগিয়ে চললাম। ঘন অন্ধকারে বৃক্ষের সাথে রজ্জুতে বাঁধা এক হতভাগা। আমি তার নিকটে গেলে সে করুণ সুরে আরজ করল, স্যার! আমাকে ব্রাশফায়ারে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিন। এ কষ্ট আর সইতে পারছি না। খুব ছোট আওয়াজ, নরম সুর। শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি শুনে লোকটি আমাকে সৈন্য মনে করেছে। তাই বন্ধনের কষ্ট সইতে পারছে না বিধায় ফায়ার করে হত্যা করে দিতে অনুরোধ করছে।
আমার একমাত্র সফরসঙ্গী আল্লাহ। কখনো কখনো কলাবাদুরের ডানার পত্ পত্ শব্দে ছাতি দুরু দুরু কাঁপছে। পা সামনে এগুতে চায় না। আবার দূর থেকে ভুতুম! ভুতুম! এক ভয়ানক আওয়াজ ভেসে আসছে। শিশুকালে এ আওয়াজ শুনে মায়ের আঁচলে লুকাতাম। আহ! কি ভয়ংকর আওয়াজ! এসব ভয়-ভীতির পাহাড় ডিঙ্গিয়ে অনেকদূর অতিক্রম করেছি। পল্লী এলাকা প্রায় শেষ। আর অল্প কিছু পথ সামনে এগুলেই সেই অরণ্যভূমি, যেখানে প্রাচীন আমলের জালিম রাজার রাজপ্রাসাদ। আশপাশে বাড়ী-ঘর নেই, নেই কোন জনপদ। আল্লাহর গজবে অত্যাচারী রাজা বংশধরসহ ধ্বংস হয়ে গেছে শত বছর আগে। এখন আছে শুধু লাল ইটের দালান-কোঠায় ধ্বংসাবশেষ।
যুগ যুগ ধরে সে স্মৃতি বহন করে চলেছে এলাকাটি। বিশাল বিশাল কক্ষ, তার ভেতর যেন অমানিশার অন্ধকার। সে সমস্ত দালান-কোঠার অভ্যন্তরে রয়েছে নানা প্রজাতির কাঁটাযুক্ত গাছ-গাছালি। আবার ছাদে ছাদে রয়েছে অসংখ্য বট ও পাকুড় গাছ। দূর থেকে তাকালে মনে হয় এ যেন ঘন জঙ্গল। হাঁটতে হাঁটতে একেবারে নিকটে চলে আসলাম। তারপর খুব সতর্কতার সাথে আব্বুর মরদেহ তালাশ করতে লাগলাম।
হঠাৎ ভেসে আসল মানুষের কণ্ঠস্বর। হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল। পা থেমে গেল। এদিকে-ওদিক তাকাতে লাগলাম, কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। সত্যিই কি তা মানুষের আওয়াজ? নাকি ভূত-পিচাশের আওয়াজ! কিছুই ঠাহর করতে পারছি না। হঠাৎ অস্পষ্ট সুরে 'আল্লাহ, আল্লাহ, বাঁচাও, বাঁচাও, রক্ষা কর' এসব আওয়াজ শুনতে পেলাম। এতক্ষণে আমার হৃদয়ে দৃঢ়বিশ্বাস জন্মেছে যে, নিশ্চয়ই এটা মানুষের কন্ঠস্বর। হয়ত কোন বন্দী বা বন্দিনীর কণ্ঠ থেকে তা ভেসে আসছে।
আমি আস্তে আস্তে সেদিকে এগিয়ে চললাম। ঘন অন্ধকারে বৃক্ষের সাথে রজ্জুতে বাঁধা এক হতভাগা। আমি তার নিকটে গেলে সে করুণ সুরে আরজ করল, স্যার! আমাকে ব্রাশফায়ারে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিন। এ কষ্ট আর সইতে পারছি না। খুব ছোট আওয়াজ, নরম সুর। শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি শুনে লোকটি আমাকে সৈন্য মনে করেছে। তাই বন্ধনের কষ্ট সইতে পারছে না বিধায় ফায়ার করে হত্যা করে দিতে অনুরোধ করছে।
অপ্রতিরোধ্য প্লাবনের ন্যায় প্রবাহিত হচ্ছে অশ্রুধারা এ অবস্থায় অতিবাহিত হল তিমিরাচ্ছন্ন রজনীর এক-দেড় ঘন্টা। আমার মোহতারাম উস্তাদ রসূল খান বুলন্দী নিজেও সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তবু অনেক খোঁজাখুঁজির পরে পবিত্র কালাম থেকে ধার করে নিয়ে এলেন সান্ত্বনার বাণী- 'ছবরকারীদের সাথে আল্লাহ থাকেন'।
হুজুরের মুখে এতটুকু শুনে আমি নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। তারপর হুজুরকে পুরো ঘটনা বলার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বললেন, "বাবা! আমাদেরকে মেষপালের ন্যায় হাঁকিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও বেশকিছু সাধারণ নারী-পুরুষ ছিল। আমি মুক্তির পথ খুঁজছিলাম। এক পর্যায়ে রাস্তার পাশে বসে পড়ি। সবাই আগে আগে চলছে। আমার পেছনে যে সৈন্য আছে, তা জানতাম না। সে সৈন্যদের নজর এড়ান সম্ভব হয়নি। সৈন্যরা আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে। তারপর গাছের সাথে মজবুত রশিতে বেঁধে ফায়ার করে। ভাগ্যক্রমে আমার শরীরে ফায়ার লাগেনি। আল্লাহ হেফাজত করেছেন। কিছুক্ষণ পর একসাথে গর্জে উঠল থ্রি-নট-থ্রি, স্টেনগান, এসএলআর ও ক্লাশিনকভ। ব্রাশফায়ারের প্রলয়ংকরী আওয়াজ জমিন কাঁপিয়ে তুলেছে। মনে হল, অরণ্যের কোন প্রাণী এ এলাকাতে নেই। ধারণা হল, কেউ আর বেঁচে নেই। নরপশুরা ওদেরকে হত্যা করে কিছু লাশ বিবস্ত্র করে, কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলল। এ অন্ধকারে বড় হুজুরের লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মনে হয়।"
আমি হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি একা বাসায় যেতে পারবেন কি?
তিনি বললেন, "হ্যাঁ পারব।”
আমি বললাম, হুজুর! রাত প্রায় শেষ, জলদী এ স্থান ত্যাগ করা দরকার। কে জানে আবার কোন্ বিপদ এসে হাজির হয়।
তিনি বললেন, "তুমি একা এখানে থেকে কি করবে? তুমিও সাথে চল।"
আমি বললাম, হুজুর! উভয়ে এক পথে না গিয়ে ভিন্ন পথে যাব। হুজুর চলে গেলেন।
0 Comments