শিয়াগণ আবু হুরায়রার হাদিস কেন বর্জন করেছে? পর্ব -১

 

মাম বুখারী ৬ লক্ষের মত হাদিস সংগ্রহ করেছিলেন। তার মধ্যে তিনি ৯৯ শতাংশ হাদিস বর্জন করেন। তার নিজস্ব “ব্যক্তি গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি”তে হাদিস সাব বর্ণনাকারীগণ বাদ পড়াতে তাদের বর্ণিত হাদিসগুলোও বর্জিত হয়। তবে মূল বর্ণনাকারী অথাৎ সাহাবীদের কাউকেও তিনি বর্জন করেননি, যদিও অনেক সাহাবী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য রসূলুল্লাহর সময়ও ছিল। এমনই একজন সাহাবা আবু হুরায়রা। তার বর্ণিত ৪৪৬টি হাদিস বুখারী শরীফে স্থান পেয়েছে।

আবু হুরায়রার বংশ-পরিচয় পরিস্কার নয়। তার জন্ম, জন্মস্থান ও বংশধারা সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা এই যে, তার জন্ম ইয়েমেনের লোহিত সাগরের উপকূলস্থ তিহামা অঞ্চলের বাহাতে, দাউস বংশের আযদ গোত্রের বনি সুলায়েম উপগোত্রে, ৬০৩ সনের দিকে। তার প্রকৃত নাম আবদ আল-রহমান ইবনে সখর আল-আযদি বলে ফিকহ ও হাদিসবেত্তা আল-নওয়াবী উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, হুরায়রার পিতা ছিলেন ওমায়ের বিন আমের এবং মাতা ওমায়মা বিনতে সুফেহ।

আরবীতে, হির্রা অর্থ বিড়াল এবং হুরায়রা অর্থ বিড়াল ছানা। ইবনে কুতায়বা, তার নাম কিভাবে আবু হুরায়রা হল, সে সম্পর্কে হুরায়রার নিজের এই উদ্ধৃতি দিয়েছেন: “আমার এমন নামকরণের কারণ, ছোট একটা বিল্লির সঙ্গে আমি সবসময় খেলা করতাম।” 

অবশ্য ইবনে সা’দ, হুরায়রার ভিন্ন এক উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেমন- “আমি ভেড়া চরানোর কাজ করতাম, আর আমার ছিল একটা ছোট বিল্লি। রাতের বেলা আমি তাকে গাছে তুলে দিতাম, আর সকালে তাকে নামিয়ে নিয়ে তার সাথে খেলা করতাম। আর তাই লোকেরা আমাকে আবু হুরায়রা বলে ডাকত।”

আবার কোথাও কোথাও আবু হুরায়রা নামের শানে নযুল এমনও দেয়া হয়েছে- “ইসলাম গ্রহণের পর আবু হুরায়রা মসজিদে নব্বীতে এবং নবীজীর কাছে কাছে থাকতেন। আর খাওয়া-দাওয়া শেষে বিড়ালের জন্যে নিয়মিত থালায় কিছু অবশিষ্ট রাখা তার অভ্যাস ছিল। এভাবে মসজিদের আশেপাশে বিড়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আর হুরায়রাও তাদের সাথে খেলা করতে পছন্দ করতেন। এতে তিনি আবু হুরায়রা উপাধি পান।

ফিরোজ আবাদি তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন- “হুরায়রার তার বিড়াল প্রীতি এবং তার সাথে খেলা করার অভ্যাস, ইসলাম গ্রহণের পরও বজায় রেখেছিল, যে পর্যন্ত না নবীজী তার বিড়ালকে তার জামার অস্তিনে লুকিয়ে রাখতে দেখতে পান।”

হুরায়রার বাল্যকাল কিভাবে কেটেছে সে সম্পর্কে শেখ আহমেদ তার কিতাবে হুরায়রার এমন উদ্ধৃতি দিয়েছেন- “আমি এতিম হয়ে বড় হয়েছি। তারপর সম্বলহীন অবস্থায় আমি ভাগ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। অত:পর বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় আহার ও পরিধেয় বস্ত্রের বিনিময়ে আমি বুশরা বিনতে গাজওয়ানের নোকর হিসেবে নিয়োগ পাই....আমার কাজ ছিল যখন তারা অশ্বপৃষ্ঠে সওয়ার হয়ে আসতেন বা কোথাও যেতেন, তখন বাদ্য ও সঙ্গীতের সাথে তাদেরকে অভ্যর্থনা করা বা বিদায় জানানো।”

আজদ গোত্র।
ইবনে সা’দ এর তাবাকাত থেকে জানা যায়, হিজরী ৭ম সনে, ৩০ বৎসর বয়সের সময় হুরায়রা কপর্দকহীন অবস্থায় একবস্ত্রে নগ্নপদে দাউস গোত্রের কিছুলোকের সাথে মদিনায় আগমন করেন। এসময় রসূলুল্লাহ খায়বর যুদ্ধে ব্যাপৃত ছিলেন। মদিনায় ফিরে নবীজী তার সঙ্গীদেরকে লব্ধ "গনিমতের মাল" থেকে একটা অংশ হুরায়রাকে দিতে বলেন এবং তারা সেইমতই করেন। 

ইবনে হজর আসকালানী তার ফতেহ আল-বারীতে উল্লেখ করেছেন- আর হুরায়রা "মসজিদে নব্বী"তে থাকতে লাগলেন যেভাবে "আসহাবে সুফ্ফা"গণ থাকতেন। কেননা, তিনি ছিলেন সহায় সম্বলহীন, উপরন্তু তার পরিবার বা নিকট আত্মীয়ের অপর কেউ মদিনাতে ছিল না। তাছাড়া তিনি জানতে পেরেছিলেন আসহাবে সুফ্ফাদেরকে নবীজী আপ্যায়ন করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীদের দ্বারাও আপ্যায়ন করাতেন। 

সুফ্ফাদের প্রতি আরও একজন অতি সদয় ছিলেন, তিনি হলেন আলীর ভ্রাতা জাফর ইবনে আবু তালিব। এ কারণে তাকে “দরিদ্রের পিতা” বলেও সম্বোধন করা হত। আর তাই হুরায়রার নিকট জাফর এর পরিচয় ছিল নবীজীর পরে সর্বাধিক দয়ালু ব্যক্তি হিসেবে।


Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp