Header Ads Widget

▶️ পীরতন্ত্রের আজব লীলা। পর্ব -২


১১১১১১

ভণ্ড পীরদের কীর্তি কান্ড

এক শ্রেণীর ভণ্ড পীর বা ফকীর আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। তাদের দাবী হল, কুরআন ত্রিশ পারা নয়- চল্লিশ পারা। তারা বলে দশ পারা আমাদের কাছে আছে। হকিকত ও মারফতীর আসল তত্ত্ব ঐ দশ পারার মধ্যেই আছে। মৌলবীরা ত্রিশ পারা কুরআন নিয়ে কচুরীপানার মত কেবল ভেসেই বেড়াচ্ছে, আর আসল ভেদ আমরাই পেয়েছি। এদের মতে, আবু বকর, উমার, উসমান, আয়িশা (রহ.), ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম (রহ.) প্রমুখ শত শত সাহাবায়ে কেরাম, মহামতি ইমাম ও উলামায়ে দীনের কেউই আসল তত্ত্ব পাননি। একমাত্র তত্ত্ব পেয়েছে এই ফকীরের দল। এদের আরও বক্তব্য হল, ঐ দশ পারা লেখাজোখা নেই। ওগুলো খুব গোপন ব্যাপার, এদের সিনায় সিনায় ওগুলো সব চলে আসছে।

এই পীরদের কল্পিত দশ পারার গুপ্তভেদ এত ঘৃণিত, ন্যাক্কারজনক ও সাম স্যহীন যে, তা বর্ণনা করতে আমি নিজেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও দু'চারটি কথা না বলে থাকতে পারছি না। এদের প্রথম কথা হল, ত্রিশ পারা কুরআনে যে 'বিসমিল্লাহ' লেখা আছে, তা হল 'বীজমে আল্লাহ' অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে আল্লাহ। সেজন্য এরা বীর্য বা ধাতুকে নষ্ট করা মহাপাপ বলে মনে করে এবং নিজেদের বীর্য নিজেরা খেয়ে ফেলে। নদীয়ায় বিখ্যাত পুঁথি সাহিত্যিক মুনশী ফসিহুদ্দীন তাঁর কিতাবে এদের 'প্রেমভাজা' খাওয়ার কথা লিখেছেন। আটার মধ্যে বীর্যপাত করে সেই আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে পীর-মুরীদ সকলেই খুশী মনে খায়, তাকেই বলে 'প্রেমভাজা'। এই সব পীরের আখড়ায় কোন আগন্তুক গেলে তাকে একটা কিছু খেতেই হবে। খেতে না চাইলে পীর বাবাজী শত অনুরোধ করে হালুয়া হোক, রুটি হোক বা অন্য কিছু হোক, একটু তাকে খাওয়াবেই খাওয়াবে এবং উক্ত খাবারে পীর বাবাজীর একটু বীজ থাকবেই থাকবে। কেননা গোপন দশ পারায় আছে 'বীজমে আল্লাহ'।

নদীয়ার আরেক প্রখ্যাত পুঁথি সাহিত্যিক তাঁর কিতাবে 'লাল সাধন' বলে আর একটা জিনিসের কথা উল্লেখ করেছেন, সেটাও নাকি পীরদের গোপন দশপারায় লেখা আছে। মেয়েদের মাসিক রক্তস্রাব হলে সে রক্ত ফেলে দেয়া চলবে না, নাক চোখ বন্ধ করে খেতে হবে- একে বলে লাল সাধন। তাছাড়া অমাবস্যার রাত্রিতে যদি কোন মেয়ের প্রথম মাসিক ঋতুস্রাব হয়, তাহলে ঐ রক্তমাখা ন্যাক্কা একটু করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিয়ে, পানিতে ভিজিয়ে রেখে, উক্ত পানি বা পানির শরবত আগন্তুকদের খাইয়ে থাকে। শুনা যায়, এতে নাকি আগন্তুকের চিত্ত-বিভ্রম ঘটে যায় এবং ঐ ব্যক্তি তার অজ্ঞাতেই নাকি পীরের অন্ধভক্ত হয়ে যায়।

উক্ত পীর সাহেবদের গোপন দশ পারার আর একটা ভেদের কথা হচ্ছে, মেয়েদের যৌনাঙ্গ একটা বয়ে যাওয়া নদীর ন্যায়। একটা মরা পচা দুর্গন্ধময় কুকুর নিয়ে যেয়ে, কেউ যদি ঐ নদীর পানিতে ফেলে দেয়, তাতে ঐ নদীর পানি যেমন নাপাক হতে পারে না, ঠিক সেরূপ কোন মুরীদ তার স্ত্রীর যৌনাঙ্গে বীর্যপাত করলে, উক্ত যৌনাঙ্গ পীর বাবাজীর জন্য হারাম হতে পারে না। পীর-মুরীদ সবাই মিলে উক্ত যৌনাঙ্গ ব্যবহার করতে পারবে- কারণ ওটা নদীর ন্যায়।

পীরদের কল্পিত দশ পারার আরও গোপন কথা হচ্ছে, শরীরের কোন জায়গায় নখ চুল কাটা যাবে না। চুল দাড়ির জন্য চিরুনী ব্যবহার করতে হবে না। তাতে মাথার চুলে জটা হয় হোক, দাড়িতে জটা হয় হোক, তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং জটার অধিকারী হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। এরা আরও বলে- রসূল যখন মিরাজে গিয়েছিলেন, তখন কি তিনি ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনী, নাপিত সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন? গা- কি তিনি ধুয়েছিলেন? তাহলে গোসল টোসলের কি দরকার? নখ চুল কাটার বা চিরুনী দিয়ে চুল দাড়ি আঁচড়াবার কি দরকার?

এসব পীরেরা তাদের ভক্তদেরকে বলে, বাবারা মৌলবীর দল আসল ভেদ পাবে কোথায়; আসল তত্ত্ব আমাদের কাছে। ঐ যে, 'আলিফ' অক্ষর দেখছ না? ঐ 'আলিফ' মানে আল্লাহ। আলিফের মাথা যেমন ফাটা, ঠিক তেমনি পুরুষের লিঙ্গের মাথাটাও ফাটা। অতএব বাবারা শুনো, ভেদ আছে- ভেদ আছে। ঐ লিঙ্গের মধ্যেই মারফতীর আসল তত্ত্ব নিহিত আছে।

এদের যুক্তি হল 'বীজমে আল্লাহ'। আর ঐ বীজ থেকেই যখন মানুষ, তখন মানুষকে মানুষের সাথে মিশে 'ফানাফিল্লাহ' হয়ে যেতে হবে। তাই শত শত ভক্তের দল পীরের কাছে যায় ফানা হতে। শত শত মেয়েরা যায় দেহ মন উজাড় করে দিতে। পীর সাহেবও তার মাথা ফাটানো আলিফের আশ্চর্য্য কেরামতি দেখিয়ে সকলকে ফানাফিল্লায় পাঠিয়ে দেয়। আর মনের আনন্দে বলতে থাকে-

মন পাগলরে গুরু ভজনা

গুরু বিনে শান্তি পাবি না।

গুরু নামে আছে সুধা

যিনি গুরু তিনিই খোদা

মন পাগলরে গুরু ভজনা।

গুরু বা পীর ছাড়া এরা আর কিছুই বোঝে না। চলতে ফিরতে, খেতে শুতে, উঠতে বসতে, সব সময় পীরের ধ্যান করা, পীরের ছবি মানসপটে অঙ্কিত করে রাখাই হচ্ছে এদের একমাত্র ধর্ম। তেল মাখতে যেয়ে হাতে একটু তেল নিয়ে চোখ দু'টো বন্ধ করে, ধ্যানযোগে পীরকে আগে মাখিয়ে দিয়ে তারপর নিজে তেল মাখে। ভাত খেতে বসে এক মুঠো ভাত ও একটু তরকারী হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে, ধ্যানযোগে আগে পীরকে খাইয়ে দিয়ে, সেই ভাত তরকারী থালার সব ভাতের উপর ছড়িয়ে দিয়ে তারপর খেতে আরম্ভ করে। এরা সরাসরি মসজিদে বা জামাআতে শরীক না হয়ে হুজরার মধ্যে ধ্যানযোগে পীরকে সিজদা করে। আর পীর যদি সামনেই থাকে তাহলে সরাসরি পীরকে সিজদা করে এবং উবুড় হয়ে পীরের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল চুষতে থাকে; কেউবা পায়ের তলা চাটতে থাকে। এসব হল গোপন দশ পারার আসল ব্যাপার।

পাঠক হয়ত এসব কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন এদের সংখ্যা বাংলাদেশে নেহায়েত কম না। অবিভক্ত বাংলার শ্রী চৈতণ্যের লীলাক্ষেত্র নদীয়া থেকে বৈষ্ণবদের অনুকরণে এই দলের আবির্ভাব ঘটেছিল। শ্রী চৈতন্য একজন দার্শনিক ছিলেন। শ্রী চৈতন্যের দর্শনকে খণ্ডন করার জন্য ইমাম গাজ্জালীর মত, জামালুদ্দীন আফগানীর মত, মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীর মত ব্যক্তিদের দরকার ছিল। কিন্তু তা না হয়ে নদীয়ার শান্তিপুরের নিকট বুড়ল গ্রামের মুনশী আব্দুল্লাহ গেল চৈতন্যের সাথে বাহাস করতে। শেষে মুনশী আব্দুল্লাহ পরাজিত হয়ে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে চৈতন্যের শিষ্য হয়ে গেল। চৈতন্য তার নাম রেখে দিলেন 'যবন হরিদাস'। আশুতোষ দেব তার বাংলা অভিধানে যবন হরিদাসের পরিচয়ে লিখেছেন- 'ইনি জনৈক হরিভক্ত মুসলমান'। স্বধর্ম ত্যাগ করে হরিনাম জপে রত হলে এই নামে খ্যাত হন।

বলাবাহুল্য, এই যবন হরিদাসই হল দশ পারা গোপন কুরআন ও ষাট হাজার গোপন কথার আবিষ্কারক। বাউলিয়া, শাহজিয়া, কীর্তনিয়া, বুদ্ধ-শায়েরিয়া, মাইজ-ভাণ্ডারিয়া প্রভৃতি যত পীর ফকিরের দল আছে, এদের গুরু ঠাকুর হল যবন হরিদাস। এরা যবন হরিদাসের চেলা। রসূল মুহাম্মাদ-এর এরা উম্মত কখনই নয়। বর্তমানে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার এলাকায় এদের সংখ্যা অনেক এবং এদের একটি দল সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। যশোর, খুলনা, রাজশাহী, মোমেনশাহী, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, পাবনা প্রভৃতি জেলায় এদেরকে দেখা যায়। অন্যান্য জেলায় চেষ্টা চলছে। পশ্চিম বাংলা থেকেও মাঝে মধ্যে দু'চারটা অচেনা মুখ এসে টোপ গিলাবার চেষ্টা করে থাকে। এই ধরনের পীররা বাউলিয়া, কীর্তনিয়া, ন্যাডা, শাহজিয়া, বুদ্ধ-শায়েরিয়া, ভাণ্ডারিয়া, নাগদিয়া, সোহাগীয়া, সন্দ্রোশিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন নামে বিভিন্ন জায়গায় অভিহিত হয়ে থাকে। অনেকে আবার বড় বড় আল্লাহর ওলী ও বুজুর্গানে দীনের নাম ভাঙ্গিয়ে তাঁদের আশেক সেজে, ঝাড় বুঝে কোপ মেরে অতি কৌশলে এই সব ইসলাম বিরোধী কীর্তিকাণ্ড চালু করে থাকে।

আমি প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়ে বলছি, আপনারা এই ধরনের পীর-ফকিরদের কাছে যাবেন না। কেননা এরা ভণ্ড; এরা কাফির। আমি নই, মহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) তাঁর ফতহুল গায়েব কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় কি লিখেছেন, শুনুন। তিনি লিখেছেন-

'কুলুৃ হাকিকাতিল্ লা ইয়াশহাদু লাহাশ্ শারও ফাহুয়া যিন্দীকাহ্।'

 'শরীয়ত যে মা'রেফাত বা হাকিকাতের সাক্ষ্য দেয় না- সে মা'রেফাত কুফর।' আমরা দেখছি, উক্ত ভণ্ড পীরদের কোন কথা বা কোন আচরণকে শরীয়ত সমর্থন করে না। শরীয়তের কোন জায়গায় লেখা নেই যে, দশ পারা কুরআন গুপ্তভাবে আছে। ভণ্ড পীরদের দশ পারা কুরআন ও তাদের বক্তব্যগুলো উদ্ভট কল্পনা প্রসূত। অবশ্য প্রতিটি দৃশ্যমান বস্তু যে স্রষ্টার অংশ বিশেষ, মানুষ যে নররূপী নারায়ণ- একথা শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য বলে গেছেন। অতএব যারা 'বীজমে আল্লাহ' বলে থাকে,

যারা গুরু নামে আছে সুধা, যিনি গুরু তিনিই খোদা- বলে থাকে, তারা যে আসলে শঙ্করাচার্য্যের শিষ্য- এতে কোন সন্দেহ নেই। তাদেরকে মুসলমান বলে অভিহিত করা কবীরা গুনাহ।

আল্লাহর নবীর যখন মিরাজ হল। তিনি ঘুরে এসে সাহাবাদের কাছে তা ব্যক্ত করলেন, তখন ক্ষুর কাচি নরুণের অভাবে তার নখ চুল বড় হয়ে গিয়েছিল; চিরনী ব্যবহার না করায় তাঁর চুলে বা দাড়িতে জটা বেঁধে গিয়েছিল, একথা তো তাঁর সাহাবারা কেউ কোনদিন বলেননি; আল্লাহর নবী যত কথা বলেছেন, যত কাজ করেছেন, যে সব ব্যাপারে মৌন-সম্মতি দিয়েছেন, কোনটাই তো তাঁর সাহাবারা গোপন রাখেননি; আর এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল, চুল বড় বড় হয়ে গেল, লম্বা লম্বা জটা ঝুলতে লাগল, নখগুলো সব বাদুরের নখের মত হয়ে গেল, অথচ নিকটে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ দেখতে পেলেন না আর এই ফকিরগুলো সব দেখে ফেলল কিভাবে বুঝলাম না। আল্লাহর রসূল গেলেন, তাঁর মিরাজ হলো, তিনি ফিরে এলেন, এসে দেখছেন বিছানা তখনো গরম, ওজুর পানি তখনো বয়ে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় ঐ সফরে ক্ষুর কাঁচির কি দরকার ছিল তাও বুঝলাম না। আমরা জানি আল্লাহর রসূল ঐ সময় খাবার টাবার কিছু নিয়ে যাননি। খাবার যখন তিনি নিয়ে যাননি তখন এই সব ফকিরদের খাওয়া দাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেয়া দরকার। কিন্তু খাবার বেলায় ফকির সাহেবরা তালে ঠিক আছে।

রসূলুল্লাহ মাথায় যদি লম্বা চুল থাকত, চুল দাড়িতে যদি জটা ঝুলত, নখগুলো যদি বাদুরের নখের মত হতো, তাহলে তাঁর সাহাবাগণ নিশ্চয়ই এ সুন্নাত পালন করতেন, কিন্তু তা তাঁরা করেননি কেন? মহামতি ইমামদের মাথায় বা দাড়িতে এতবড় সুন্নাত ঝুলেনি কেন? খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি, আব্দুল কাদের জিলানী প্রমুখ আল্লাহওয়ালাদের মাথায় এ ধরনের জটা কোনদিন শোভা বর্ধন করেনি কেন? অবশ্য হিন্দু যোগী সন্ন্যাসীদের মাথায় লম্বা চুল ও জটা আমরা দেখে থাকি। তাদের মহাদেবের মাথাতে জটা আছে। অনেক যোগী সন্ন্যাসীকে বছরের পর বছর গোসল করতে দেখা যায় না। ছোট বেলায় জটাধারী এক ন্যাংটা সন্ন্যাসীকে গঙ্গার ঘাটে নিজের প্রস্রাব নিজেকেই ধরে খেতে দেখেছিলাম। এই ভক্ত পীররা যদি হিন্দু যোগী সন্ন্যাসীদের অনুকরণ করে করুক, প্রেম ভাজা খায় খাক, গাঁজার কলকেয় বা হুক্কা সিগারেটে টান মারে মারুক, যা মন চায় তাই করুক- তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু সব সময় বিশ্বাস রাখতে হবে, ইসলামের সঙ্গে ওদের কোনই সম্পর্ক নেই।

যদি কোন মুসলমানের বাচ্চা ওদের পা চুমতে যায়, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। অতিসত্বর তার তওবা-ইস্তিগফার করা ওয়াজিব।

মা-বোনদের যৌনাঙ্গকে নদীর সাথে তুলনা করে যা ব্যভিচারের কৃমি-কীটে পরিণত হয়, তারা পীর নয়, ইসলাম বলে তারা শিয়াল কুকুরেরও অধম। এই অধমগুলো শুধু যে লালসাধন ও প্রেমভাজা খাইয়ে মানুষকে বশ করে তাই নয়, ঘাড় গুঁজে চক্ষু বুজে কিছু কারামতিও জাহির করে থাকে। কারামতের কথা এক্ষুনি শুনবেন। এখানে শুধু এতটুকু বলে রাখছি যে, এসব ভণ্ড পীরের ফাঁদে কেউ যেন পা বাড়াবেন না।

৫৫৫৫৫৫৫

ভন্ড পীরের কারামতি

ভণ্ড পীররা অনেক সময় অনেক কথা বলে বা অনেক দেখিয়ে মানুষকে অবাক করে দেয়। যেমন, আপনার গাইটা হারিয়ে গেছে- খুঁজে পাচ্ছেন না। পীরের কাছে যেতেই বলে দিল, তুই যে জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছিস বুঝতে পারছি, যা- তোর বাড়ী দক্ষিণ দিকে যে জঙ্গল আছে, সেখানে পাবি। আপনি এসে দেখলে ঠিকই জঙ্গলের মাঝে গাই রয়েছে।

আপনি গরুর গোস্ত দিয়ে ভাত খেয়েছেন, আপনার বাড়ী উত্তরে একটা নিম গাছ আছে, আপনার বাবা তিন বছর আগে কলেরায় মারা গেছেন। পীর কিন্তু এসব দেখেনি। আপনি যেই পীরের কাছে গেলেন অমনি এসব কথা সে বলে দিল। লন্ডনের আদালতে এক বাঙ্গালীর 'কেস' চলছে। সদ্য তার রায় হয়ে গেছে সুদূর বাংলার মাটিতে বসে আমরা তার কোনই খবর রাখি না পীর বাবাজী ভক্তদের কাছ থেকে উঠে যেয়ে হুজরার মাঝে চোখ বন্ধ করে খানিকক্ষণ বসে থেকে উঠে বললো, বাবারা একটু দেরী হয়ে গেল কেন জানো? আমি লন্ডন গিয়েছিলাম একটা কেসের তদবীর করতে, তাই এত দেরী হয়ে গেল। আসামীকে আমি খালাস করে দিয়ে এলাম। দু'চারদিন পর সত্যি সত্যিই পেপারে দেখা গেল, লন্ডনের আদালতে এক মোকদ্দমায় এক বাঙ্গালী ডিগ্রী পেয়েছে।

আপনার বাড়ীতে দুষ্ট জ্বীনের উপদ্রব আছে। কিন্তু চেষ্টা তদবীর করলেন, তেমন ফল হলো না। মনে মনে ভাবলেন একবার ঐ পীরের কাছে গেলে হতো। পীরের কাছে যেই গেলেন, অমনি বলে দিল, যার জন্য এসেছিস বুঝতে পারছি- যা আর তোকে কষ্ট দিবে না। সত্যি সত্যিই দেখা গেল, তারপর থেকে আর উৎপাত নেই।

তব্বি মিঞা জাতীয় পরিষদের ইলেকশানে প্রচুর ভোটে জিতেছেন। পীর সাহেব তব্বি মিঞাকে বলল, ঐ তোরে বেটা তোর কপালে লেখা রয়েছে তুই মন্ত্রী হবি। বাস্তবিকই দেখা গেল কয়েকদিন পর খবরের কাগজে বড় বড় অক্ষরে বের হয়েছে, তব্বি মিঞা মন্ত্রী হয়ে গেছেন।

একদল লোক বসে আছে পীরের কাছে। হঠা পীর সাহেব হুকুম করল চোখ বন্ধ করতো বাবারা, তখন সবাই চোখ বন্ধ করল। এবার পীর সাহেব বলল, এই পুকুরের দিকে তাকাওতো বাবারা, সবাই তাকিয়ে দেখে অবাক- একি। এক কাতরা পানি নেই কেন? পীর বললো আবার চোখ বন্ধ করো, সবাই তখন বন্ধ করল চোখ। পীর বলল, এবার তাকাও পুকুরের দিকে সবাই তাকিয়ে হতভম্ব একি! এ যে পুকুর ভর্তি পানি। অবাক কাণ্ড।

পীর এবার মাথা হিলিয়ে বললো- হুঁ হুঁ বাবারা ভেদ আছে, ভেদ আছে। এসব মারফতি তত্ত্ব মৌলবীরা পাবে কোথায়?

মোটকথা এ ধরনের বহু কীর্তিকাণ্ড এইসব পীর ফকিররা দেখিয়ে থাকে। আর এসব দেখেশুনে এক শ্রেণীর কমজোর ঈমানের লোক অন্ধভক্ত হয়ে পীরের পায়ে উবুড় হয়ে পড়ে যায়।

কিন্তু জেনে রাখবেন, অনেক হিন্দু যোগী সন্ন্যাসীরাও ঐরূপ কীর্তিকাণ্ড বা ওর চেয়ে অনেক উচ্চ ধরনের কার্যকলাপ দেখাতে পারে। অনেক মঠে, মন্দিরে, বিহারে, তপোবনে, নদীর তীরে, গঙ্গার ঘাটে, গয়া কাশী, বৃন্দাবন, নবদ্বীপ ও তারকেশ্বরে গেলে এমন সব ছাই মাথা নেংটা সন্ন্যাসী দেখা যায়, যারা 'বোম ভোলানাথ' বলে গাঁজায় কলকেয় টান মেরে এমন সব অলৌকিক কারামতি দেখায়, যা দেখে মনে হয়, এসব পীর ফকিরগুলো ওদের কাছে বালক মাত্র।

এখন পীর ফকির ও যোগী সন্ন্যাসীদের পক্ষে এসব অদ্ভুত কাণ্ড কারখানা দেখানো কেমন করে সম্ভব হয়, সে সম্পর্কে দু'চারটি কথা শুনুন। আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, কাবা ঘরে তিনশ' ষাটটা প্রতিমা ছিল। একদিন আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার (রাযি.)-কে বললেনঃ হে উমার! তুমি ঐ প্রতিমাগুলোকে ভেঙ্গে দিয়ে এসো। উমার (রাযি.) ভেঙ্গে দিয়ে এসে বললেন: রসূল ভাঙ্গা হয়েছে। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কিছু কি তুমি দেখতে পেয়েছো? উমার বললেন, না। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে ভাঙ্গা হয়নি, যাও ভাল করে ভেঙ্গে এসো। এবার উমার যেয়ে দেখলেন, সত্যি সত্যিই সবচেয়ে বড় প্রতিমাটাকে ভাল করে ভাঙ্গা হয়নি। তখন তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ওটাকে ভাঙ্গতে শুরু করলেন। প্রতিমাটি টুকরো হতেই উমার দেখলেন একটি কদাকার কুশ্রী চেহারার নারীমূর্তি এলোকেশে বিকট এক চীৎকার করে ঘর থেকে বিদ্যুৎবেগে বের হয়ে গেল। এবার উমার এসে বললেন, ইয়া রসূল ভাঙ্গা হয়েছে। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছু কি দেখতে পেলে? উমার বললেন, একটা কুশ্রী চেহারার মেয়েকে বিকট এক চিৎকার করে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। রসূল বললেন: এবার ভাঙ্গা হয়েছে। উমার বললেন, ইয়া রসূল এরূপ দেখলাম কেন? আল্লাহর রসূল বললেন: যেখানে শির্কের আড্ডা, সেখানে দুষ্ট জ্বীন থাকে। ওখানে শির্ক হতো, তাই ঐ মূর্তির মধ্যে জ্বীন আসর হয়ে বসেছিল।

এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, শরীয়ত বিরোধী কাজ যেখানে হয়, মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র যেখানে করা হয়, মানবরূপী শয়তান যেখানে মানুষকে বিভ্রান্ত করার ফাঁদ পাতে, সেখানে খবীস জ্বীনের তৎপরতা চলে। ঐ খবীস জ্বীন সমস্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করে নিয়ে এসে ঐ পীর ফকীর বা যোগী সন্ন্যাসীরূপী শয়তানের মুখ দিয়ে প্রকাশ করে দেয়।

আইন পরিষদের গোপন মিটিং-এ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পরামর্শ করলেন যে, তবিব মিঞাকে মন্ত্রী করতেই হবে। ব্যাস আর যায় কোথা; দুষ্ট জ্বীন এ রিপোর্ট নিয়ে এসে ফকিরের মুখ দিয়ে প্রকাশ করে দিল। লন্ডনের আদালতে একজন বাঙ্গালী মামলায় ডিগ্রী পেল, আর অমনি খবীস জ্বীন তার রিপোর্ট নিয়ে এসে পীরের মুখ দিয়ে 'রিলে' করে দিল।

আপনার গাই জঙ্গলে আছে, আপনি গুরুর গোস্ত দিয়ে ভাত খেয়েছেন, আপনার বাড়ীর উত্তর পাশে নিমগাছ আছে, আপনার বাবা তিন বছর আগে কলেরায় মারা গেছেন, এসব রিপোর্ট কে দিল- ঐ খবীস জ্বীন। আপনার বাড়িতে জ্বীনের উৎপাত। আপনি পীরের কাছে গেলেন। আপনার বলার আগেই পীর বললো, চিন্তা করিস না বেটা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর থেকে দেখা গেল আর উৎপাত নেই, একেবারে বন্ধ। এখানে আপনার ঈমান লুট করার জন্য খবীস জ্বীন কত বড় যে কুটনৈতিক চাল চাললো, একথা আপনার মগজে আর ঢুকল না।

কোন কোন অন্ধভক্ত বলে থাকে, আমার পীর একই সময়ে একাধিক স্থানে দেখা দিয়ে থাকে। আমি বলি, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ শয়তানকে এ শক্তি আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন। কিতাবে পাওয়া যায়-

 "জিস্ট্রী চাহে শেকেল বান সাক্তা হ্যায় শায়তান লায়ীন হো নেহী সাক্তা কভি উহ্ সুরতে খায়রুল ওরা।"

অর্থাৎ আল্লাহর রসূল মোহাম্মদ মোস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরত কেবল শয়তান ধরতে পারে না। বাকী যে কোন সৃষ্টির আকৃতি সে ধারণ করতে পারে। এখন পীর বা যোগী সন্ন্যাসীর একাধিক সুরত ধরে শয়তান যদি একাধিক স্থানে একই সময়ে দেখা দেয়, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? শুনুন কিতাবের কথা-

উড়তে আগার হুয়ে হাওয়া পর ফকীর জী ঘুসতে হো আগমে তো না জালতা হো উনভী। দরিয়া কো পায়েরতে তো পা তর না হো কভী সুন্নাত কে হ্যায় খেলাপ তো সমঝো উনহে গাবী।

কোন ফকীর যদি হাওয়ায় উড়তে পারে, কিংবা আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে অথচ তার একটা পশমও না পোড়ে, দরিয়ার উপর দিয়ে যদি হেটে চলে যায় আর পা যদি তার না ভিজে। এহেন আশ্চর্য কাণ্ড ফকীরজী যদি দেখাতে পারে, আর সে যদি রসূল মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শের খেলাফ কাজ করে, তাহলে জেনে রাখুন, সে আল্লাহর নবীর উম্মত নয়- সে ইবলিশ শয়তানের আসল চেলা।

সুবিখ্যাত বাজীকর পি. সি. সরকারকে আমরা অনেক আশ্চর্য ধরনের কাণ্ড ঘটাতে দেখেছি। তাঁর ছেলেও বর্তমানে পিতার মতই লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে অবাক কাণ্ড দেখিয়ে থাকেন। এখন পি. সি. সরকারের ছেলে যদি পীরগিরির দু'একখানা কিতাব পড়ে, দু' চারটা গৎ মুখস্থ করে, গেরুয়া বসন পরিধান করে, চুলে লম্বা জটা রেখে, কাঞ্চন ঘাটে এসে বসে যান আর অতি কৌশলে তাঁর ইন্দ্রজালের আশ্চর্য ভেল্কী দেখাতে শুরু করে দেন, তাহলে আমরা কি আমাদের জ্ঞান, গরিমা, বিদ্যা, বুদ্ধি, ঈমান-ধর্ম সব কিছু তার পায়ের তলে লুটিয়ে দিব? কখনই না। 

আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর মতে কুরআন হাদীসের কষ্টি পাথরে তাকে পরীক্ষা করে দেখব। আর সব পরীক্ষার আগে তার কাপড় খুলে দেখব, খাৎনা হয়েছে কি না।

পাঠক হয়তো মনে মনে ভাবছেন, তাহলে আল্লাহর যাঁরা ওলী, তাঁদের কি কিছু কারামতি নেই? তাঁরা কি আল্লাহর তরফ থেকে ইলহাম পান না? হ্যাঁ, এবার সে কথাই বলব- শুনুন।

৬৬৬৬৬৬৬

আল্লাহর ওলীদের কারামতি

নিশ্চয়ই আল্লাহর যাঁরা ওলী, তাঁদের মধ্যে কারামত বা বুজুর্গী আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা ইলহাম পান। পাবেন না কেন। আল্লাহর তরফ থেকে মনের মধ্যে যে ভাল কথার উদয় হয়, সৎ চিন্তা জেগে উঠে, তাকেই বলে ইলহাম। সামনে একটা কাজ, কাজটা করা ভাল হবে না মন্দ হবে বুঝা যাচ্ছে না। সত্যিকারভাবে কাজটার মধ্যে যদি ভালায়ী থাকে, আর আপনি যদি আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহর প্রিয় হতে পারেন, তাহলে আল্লাহর তরফ হতে ঐ কাজটা করার প্রেরণা আপনার অন্তরে জেগে উঠবেই উঠবে। আর যদি কাজটার মধ্যে অকল্যাণ থাকে, তাহলে ঐ কাজটার প্রতি অন্তরে ঘৃণা জাগবেই জাগবে। আল্লাহর ওলী হওয়ার সৌভাগ্য যাঁর হয়েছে, তার অন্তরে আল্লাহর তরফ থেকে ইলহাম বা নেক খেয়াল ও ভাল কথার উদয় হবেই হবে। জাগ্রত বা নিদ্রিত যে কোন অবস্থায় এ ইঙ্গিত তিনি নিশ্চয়ই পাবেন। আর সেই ভাবটুকু ব্যক্ত করার নামই হচ্ছে কারামত বা বুজুর্গী।

কিন্তু ঐ যে বক-তপস্বী লাখ লাখ মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে অর্থের পাহাড় জমাবার ফাঁদ পেতে বসে আছে। ঐ যে লালসা সর্বস্ব বক ধার্মিক একদল দালালের মারফত নিজেকে হাদীয়ে-জামান, পীরে কামেল, আওলিয়াকুল শিরোভূষণ বলে জনগণের মাঝে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। ঐ যে কুরআন হাদীস না জানা বে-ইলম মূর্খ পীর, দালালদেরকে 'টুপাইস' বাগাবার সুযোগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে নিজেকে লাখ লাখ মানুষের পথ প্রদর্শক বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছে- সে কম বখতরা কখনই ইলহাম বা বুজুর্গী পেতে পারে না। তারা পায় শয়তানী অসওয়াসা বা ইবলিসী বুদ্ধি। তা জানার প্রয়োজন। 

*الَّا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ * الَّذِينَ آمَنُوا‎

‎‫وَكَانُوا يَتَّقُونَ *‬‎

"দেখ, যারা আল্লাহর অলী তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই আর তারা কখনো চিন্তিত হবে না। তারা সেই সকল লোক যারা মুমিন হয়েছে আর সর্বদাই মুত্তাকী হয়ে চলে।" (সূরা ইউনুস ৬২-৬৩)

তাহলে এখানে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, মুমিন ও মুত্তাকী যিনি, তিনিই আল্লাহর ওলী, আর যে মুমিন ও মুত্তাকী নয়, সে আল্লাহর ওলী নয়। এখন মুমিন ও মুত্তাকী কে? একথা লিখতে গেলে স্বতন্ত্র এক কিতাব লিখতে হয়। তবে সংক্ষেপ কথা এই যে, আল্লাহর প্রতি, তাঁর সত্বা ও গুণাবলীর প্রতি, তাঁর একত্ব ও আনুগত্যের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আসস্মানী কিতাবসমূহের প্রতি, আল্লাহর রসূলগণের প্রতি, মধ্য লোকের প্রতি, কিয়ামতের প্রতি, বেহেশত ও দোজখের প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহর নির্ধারিত শরীয়তকে ঠিকমত যে ব্যক্তি মেনে চলতে পারে, সেই হয় মুমিন, মুত্তাকী সেই হয় আল্লাহর ওলী।

শরীয়তের বিধানে রয়েছে, তুমি যাবতীয় শির্ক ও কুফর থেকে, ভ্রান্ত আকিদা থেকে, কুসংস্কার থেকে, হিংসা-বিদ্বেষ ও কপটতা থেকে, আত্মশ্লাঘা থেকে, পরশ্রী-কাতরতা থেকে, কৃপণতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, মিথ্যা-প্রবঞ্চণা থেকে মনকে মুক্ত রেখে ঠিকমত আমল কর, অন্যায় থেকে তাওবা কর, আল্লাহর গজবের ভয় ও তাঁর রহমতের আশা পোষণ কর, আল্লাহর নিয়ামতের শুকরগুজারী কর, বিশ্বস্ত হও, বিপদে আপদে ধৈর্যধারণ কর, আল্লাহর সেই সঙ্গে বড়দেরকে সম্মান কর, ছোটদেরকে স্নেহ কর, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' মন্ত্র উচ্চারণ কর, মহাগ্রন্থ কুরআন মাজীদ পাঠ কর, অপরকে কুরআন শিক্ষা দাও, দু'আ ও আল্লাহর নাম স্মরণ কর, নাপাকী বর্জন কর, বিবস্ত্রতা দূর কর, ফরজ ও নফল রোযা রাখ, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি থাকলে হাজ্জব্রত পালন কর, পরের উপকার কর, ছেলে-মেয়েদেরকে লালন পালন কর, মা বাপের সেবা কর, আত্মীয়দের প্রতি সদ্ব্যবহার কর, ন্যায়ের জন্য আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ কর, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ কর, ধার করজ দিও, অপরের পাওনা মিটিয়ে দিও, প্রতিবেশীর সম্মান রক্ষা কর, লেনদেন ও অন্যান্য ব্যবহারে সাধুতা বজায় রাখ, হালাল উপায়ে উপার্জন কর, কাউকে দুঃখ দিওনা- এসব শরীয়তের আদেশ নিষেধগুলি ঠিকমত যদি তুমি মেনে চলতে পার, তাহলে মুমিন ও মুত্তাকী তুমি হতে পারবে, আধ্যাত্মিক উন্নতি তোমার হবেই হবে। 

অন্তর ও বাহিরের মনুষ্যত্ব ও মহত্বের বিকাশ তোমার ঘটবেই ঘটবে। হকিকত ও মারেফতের দরজায় তুমি নিশ্চয়ই পৌঁছতে পারবে। পীরের আড্ডায় যেয়ে, পীরের পায়ে আর চুমা দিতে হবে না। উরুসের মেলায় চাল-ডাল কুমড়ো-খাসাঁ নিয়ে যেয়ে খিচড়ী পাকিয়ে খেয়েদেয়ে হেউ হেউ করে ঢেকুর তুললেই তোমার মারেফত হাসিল হবে না। জেনে রেখ-

কহতা হ্যায় জিসে লোক হকিকত ও তরিকত

রাকখা হ্যায় জিস্কা নাম মাশায়েখ নে মারেফাত

ওয়ায় ডালিয়া হ্যায় বেখ্ হ্যায় উন্সী শরীয়ত 

হো জর না পায়েদর তো জায়ে শাজার উলাট।

লোকে যাতে তরিকত, হকিকত, মারেফত বলে, ওসব হচ্ছে ডালপালা। মূল হচ্ছে শরীয়ত। মূল যদি মজবুত না হয়, তাহলে ডালপালার অস্তিত্বই থাকবে না।

মোটকথা শরীয়ত ছাড়া হকিকত, তরিকত, মারেফতের অস্তিত্বই নেই। যারা শরীয়তের বাইরে মুক্তির পথ খুঁজে বেড়ায়, তারা বিভ্রান্ত-তারা কাফির। আর যারা শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলে, তারাই মুমিন মুত্তাকী-তারাই আল্লাহর ওলী। আল্লাহ তাঁদের অন্তরে ইলহাম অর্থাৎ নেক খেয়াল দিয়ে কারামত অর্থাৎ বুরুগী দান করেন।

666666666

Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp