▶️ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তায়েফ সফরের কষ্ট এবং ক্ষমার গল্প 🌹

 


হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তায়েফ সফরের কষ্ট এবং ক্ষমার গল্প

পবিত্র কুরআনের নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী, যিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করার জন্য মক্কায় দাওয়াত প্রচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা তাকে এবং তার অনুসারীদের চরম অত্যাচার করতে শুরু করে। এর ফলে তিনি ইসলামের বাণী প্রচারের জন্য মক্কা ছাড়িয়ে অন্যান্য এলাকায়ও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে তায়েফ একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল, যেখানে তিনি আশা করেছিলেন যে মানুষ তার দাওয়াত গ্রহণ করবে এবং ইসলামকে স্বাগত জানাবে।

**তায়েফ সফর এবং কষ্ট**

৬২০ খ্রিস্টাব্দে, মহানবী (সাঃ) তার দাস হজরত জায়েদ (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে তায়েফ সফরে যান। সেখানে তিনি শহরের প্রধান তিন নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের কাছে ইসলাম ধর্মের বাণী প্রচার করেন। কিন্তু তারা তার কথা শুনতে অস্বীকৃতি জানায়। শুধু তাই নয়, তারা শহরের অন্যান্য লোকদেরকে নবী (সাঃ)-এর উপর অত্যাচার করতে প্ররোচিত করে। শহরের লোকেরা নবী (সাঃ) এবং জায়েদ (রাঃ)-কে পাথর ছুঁড়ে আঘাত করতে থাকে।



পাথরের আঘাতে নবী (সাঃ)-এর শরীর থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করে। তারা এমনভাবে অত্যাচার করে যে, নবী (সাঃ)-এর পা রক্তে ভিজে যায় এবং তার জুতা রক্তে লেগে যায়। তবুও তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। অবশেষে, শহরের বাইরে একটি বাগানে আশ্রয় নেন, যেখানে একটি ডুমুর গাছের নিচে বসে তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।

**আল্লাহর রহমত এবং ফেরেশতার আগমন**

হজরত জিব্রাইল (আঃ) সেই মুহূর্তে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়ে নবী (সাঃ)-কে বলেন যে, যদি তিনি চান, তাহলে তায়েফের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসবে এবং সেই শহর ধ্বংস হয়ে যাবে। জিব্রাইল (আঃ) আরও বলেন যে, আল্লাহ তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছেন, যেন তায়েফের মানুষদের ধ্বংস করা হয় তাদের অন্যায়ের জন্য।

কিন্তু মহানবী (সাঃ) অত্যন্ত দয়াশীল ছিলেন। তিনি কষ্ট সহ্য করলেও তাদের জন্য শাস্তি চাননি। বরং তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, "হে আল্লাহ! তাদেরকে হেদায়েত দান করুন, কারণ তারা জানে না আমি কে এবং তারা কোন ভুল করছে। হয়তো তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ইসলাম গ্রহণ করবে।" 

এই দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হলো, এবং মহানবী (সাঃ) তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি কখনোই প্রতিশোধ নিতে চাননি, বরং সবসময় দোয়া এবং ক্ষমার মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন।


**গল্পের শিক্ষা**

হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর তায়েফ সফরের ঘটনা আমাদের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা শিখি ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা, এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখার গুরুত্ব। কষ্ট ও অপমানের মধ্যেও তিনি সবসময় মানুষের জন্য দোয়া করেছেন এবং তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।

এই ঘটনা থেকে আমরা আরও শিখি যে, কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং প্রতিশোধের বদলে ক্ষমার মনোভাব পোষণ করা উচিত। মহানবী (সাঃ)-এর জীবনে প্রতিটি ঘটনার মতো এই ঘটনাও আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ক্ষমাশীলতাই মানবতার সত্যিকারের রূপ।



Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp