▶️ প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা। আঃ হামিদ ফায়জি



🌹প্রেম-ভালবাসা🌹

অবাধ মিলামেশার কুফল স্বরূপ মনে মন মিলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক হল একজন আদর্শ মুসলিম যুবতীর এমন ইঁদুর-মারা কলে পা দেওয়া। প্রেমের তুফান দ্বারা অনভিজ্ঞ তরুণীর প্রগল্ভ মন-প্রাণ আন্দোলিত হওয়া আশ্চর্যজনক নয়, আশ্চর্যজনক হল সেই তুফানে একজন ঈমানদার তরুণীর পাহাড়ের মত মন-প্রাণ বিচলিত হওয়া।




এক ঝলক হাসিতে, একটি উপহার দানে, দু'টো মিঠা মিঠা কথায়, এমনকি টেলিফোন-মোবাইলে রস কথায় অনেকের মন মজে যায়!

'এখনো তারে চোখে দেখিনি শুধু বাঁশি শুনেছি, 
মন প্রাণ যাহা ছিল দিয়ে ফেলেছি।'

নিশ্চয়ই! যার বাঁশির সুর এত সুন্দর, তার চেহারা ও চরিত্র কি সুন্দর না হয়ে যায়? যার হাসি ও কথা এত মিষ্টি, তার সাথে জীবন কি মিষ্টি না হয়?

'মেয়েমানুষ,
হৃদয়তাপের ভাপে ভরা ফানুস। 
জীবন একটা কঠিন সাধন,
নেই সে ওদের জানা।'

চঞ্চলা তরুণীকে দূর থেকে সরষে-বাড়ি ঘন লাগে।

'দূরে থেকে শুনি রেশম-চরকির বাজনা, 
কাছে গিয়ে দেখি শুধু লাঠি আর লাদনা।'

বাদশা হারুন রশীদ আসমায়ীকে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রেমের স্বরূপ কি? বললেন, 'তা এমন জিনিস যে, প্রেমিকার গুণ বর্ণনায় হৃদয় আবেগাপ্লুত রাখে এবং তার দোষ দর্শনে অন্ধ থাকে। সুতরাং প্রেমিকার পিয়াজের গন্ধও কস্তুরী লাগে।' 
বিয়েলী পুরুষ অপেক্ষা প্রেমের নাগর নিয়ে জীবন অধিক মধুময়। কারণ, প্রেমে দায়িত্ব থাকে না, তাই শাসনও থাকে না। বিয়ের পরে দায়িত্ব থাকে, তাই শাসনও থাকে। ইয়ে ক'রে বিয়ের পর নতুন নতুন প্রেম মিঠে থাকে, বাসি হলেই টকে যায়।

 'নূতন প্রেমে নূতন বন্ধু, 
আগাগোড়া কেবল মধু। 
পুরাতনে অম্লমধুর
 একটু ঝাঁঝালো।'

প্রেমের বিয়ের প্রথম বছরে স্বামী শোনে, দ্বিতীয় বছরে স্ত্রী শোনে। আর তৃতীয় বছরে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই শোনে!

প্রেম হল চুলকানির মত, চুলকাতে বড় আরাম লাগে, কিন্তু পরে জ্বালা শুরু হয়। প্রেম-সাগরে সন্তরণরতা বোনটি আমার! জেনে রেখোঃ-

'ভালবাসা যা দেয়, তার চেয়ে কেড়ে নেয় বেশী।' 'প্রেম মানুষকে শান্তি দেয়, কিন্তু স্বস্তি দেয় না।' 'প্রেম হল জ্বলন্ত ধূপের মত, যার শুরু হল আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি ছাই দিয়ে। তারই মাঝে সুবাস হল প্রেম-জীবনের মাঝে মাঝে কিছু আনন্দ।'

 'আপনি পুড়ে পোড়ায় এ প্রাণ, 
তারই যে নাম পীরিতি,
ধরা দিয়ে দেয় না ধরা
 হায়রে এ তার কি রীতি?
 মালায় বেঁধে যদি ভাবি 
দেব না আর পালাতে, 
কাছে পেয়ে মরি যে তার 
ছলনারই জ্বালাতে। 
না ফুটে যায় শুকিয়ে 
ফাগুনের হায় ফুল কুঁড়ি, 
একটু জ্বলে যায় যে নিভে 
সোহাগের সে ফুলঝুরি।'


লায়লা সম বোনটি আমার! প্রেমের ফাঁদে পা দিলে একদিন বলতে বাধ্য হবে,

'প্রেম করে পর সনে পাইতেছি এ যাতনা, 
প্রাণসম ভাবি পরে পর আপন হল না।

না বুঝে মজিলাম পরে না ভাবি কি হবে পরে, 
এখন না জানি পরে কতই হবে লাঞ্ছনা।।'

যখন তোমাকে সে ধোকা দেবে, যখন তোমাকে প্রবঞ্চিতা ও বঞ্চিতা ক'রে পলায়ন করবে, তখন ঘরের কোণে বসে বসে গুনগুন্ সুরে গান গাইবে,


'গলায় যে গো পরিয়ে গেলে 
বিষ-মাখানো কাঁটার মালা,
 ঘুমের ঘোরে ছিলাম যবে, 
রাখলে তাতে স্মৃতির জ্বালা। 
ভাবছি বসে ঘরেই কেন 
জ্বেলেছিলাম প্রেমের আলো, 
আজকে সে যে আগুন হয়ে 
পুড়িয়ে মোরে করছে কালো।

ওগো আমার পায়ে চলার সাথী - 
আমায় ফেলে গোপন পথে 
অচিন দেশে জ্বালাও বাতি। 
তোমার সাথে বহু দিনের 
অনেক কথা রয় যে বাকি, 
ভালবাসার এই কি রীতি! 
এমন ক'রে দিলে ফাঁকি? 
তড়িৎ সুরে আভাষ দিয়ে 
লুকিয়ে র'লে অজানা দেশে, 
কেমন ক'রে বেড়াও সেথা 
ওগো আমার সর্বনেশে।

ওগো মোর সব হারানোর মূল - 
জগৎটাকে চিনতে নারি 
সবটা যেন ভুল।' 


কষ্ট পাবে, যাতনায় কাতর হবে, কেঁদে কেঁদে চোখের কোণে ঘা হবে। 'শশ্মানের চিতা যদিও নিবেছে হৃদয়ের চিতা তবুও জ্বলে, কোন মতে আর হল না শীতল অবিরত এই আঁখির জলে।' কখনো বা কাঁদারো সুযোগ পাবে না, কাউকে কিছু বলতেও পাবে না, ফল্গু নদীর মত শোকের স্রোতধারা বয়ে যাবে বুকের ভিতরে সংগোপনে, 

'মরমে লুকানো কত দুখ 
ঢাকিয়া রয়েছি ম্লানমুখ, 
কাঁদিবার নাই অবসর 
কথা নাই শুধু ফাটে বুক।'
 
তখন আফসোস করবে, ভুল বুঝতে পারবে, নিরাশার অন্ধকারে বলতে বাধ্য হবে,

 'আমি বৃথায় স্বপন করেছি বপন আকাশে, 
তাই আকাশ-কুসুম করেছি চয়ন হতাশে।' 

যখন তোমার মান যাবে, ইজ্জত যাবে, লজ্জায় মনে হবে, তুমি যেন সবার মাঝে একজন উলঙ্গ নারী! তোমার দেহে কোন কাপড় নেই, অথচ সকলে তোমার দিকে তাকিয়ে দেখছে! তখন তোমার মন গাইবে,

'কেন তবে কেড়ে নিলে লাজ-আবরণ! 
হৃদয়ের দ্বার হেনে 
বাহিরে আনিলে টেনে,
শেষে কি পথের মাঝে করিবে বর্জন? 
ভালবাসা তাও যদি
 ফিরে নেবে শেষে
 কেন লজ্জা কেড়ে নিলে, 
একাকিনী ছেড়ে দিলে
 বিশাল ভবের মাঝে বিবস্ত্র বেশে।।'


নারী যখন ভালবাসার পিয়াসিনী হয়, তখন প্রথমেই যে তার হৃদয়-দ্বারে করাঘাত করে, তার জন্যই দরজা খুলে দেয়। ভাবে, তার মত মজনু আর দ্বিতীয়টি নেই। পুরুষকে সে মোটেই চেনে না, অথচ সে পুরুষ নির্বাচন করে। পরন্তু নির্বাচন করার সময়ও সে পায় না। বরং প্রথম যেই তাকে ইশারা করে, তাকেই সে প্রেমের মাল্যদান করে। এমনকি অমুসলিম যুবক হলেও অনেক ধর্মনিরপেক্ষ হতভাগিনী তাতেও কোন

পরোয়া করে না! বলে, 'পিরীতে মজিল মন, কিবা হাড়ি কিবা ডোম!' এইজন্য তার বিবাহে পুরুষ অভিভাবক জরুরী। অভিভাবক ছাড়া বিবাহ বাতিল। কিন্তু লজ্জাহীনা যুবতী জন্মদাতা, পালনকর্তা অভিভাবকের তোয়াক্কা করে না। যে মা-বাপ কত কষ্ট ক'রে মানুষ করে, নিজে না ঘুমিয়ে তাকে ঘুম পাড়ায়, নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়ায়, নিজে খারাপ খেয়ে-পরে ভালটা তাকে খেতে-পরতে দেয়, আদর, যত্ন ও

স্নেহের সাথে কোলে-পিঠে নিয়ে সোহাগ করে, কত কষ্ট স্বীকার করে, যাতে তার দেহে একটি কাঁটার আঁচড়ও না লাগে, তার চেহারা সুন্দর করার জন্য, তার চরিত্র উত্তম করার জন্য কত ব্যবস্থা নেয়, সেই মা-বাপকে নিমেষে ভুলে গিয়ে, তাদের গালে চপেটাঘাত ক'রে রসিক নাগরের পশ্চাতে দৌড় দেয়। যাকে সুখ দেওয়ার চেষ্টা করে, সেই দুখ দিয়ে যায়। যাকে তীর শিখায়, সেই তীরের আঘাত হানে, দুধ দিয়ে যাকে মানুষ করা হয়, সেই কাল সাপ হয়ে দংশন করে। তাদের কথা মানে না, তাদের নুন ভুলে গিয়ে তাদের বেহেশু থেকে বের হয়ে গিয়ে স্বরচিত কল্পিত দাজ্জালী বেহেশ্বের আশায় ছুটে যায়।

মা-বাপ চায় না তার নিকট থেকে কিছু পেতে। তারা তার উপার্জন খেতে চায় না। কোন অর্থ, কোন স্বার্থ লাভের আশা তাদের থাকে না। তাদের চাওয়া কেবল, আমাদের মেয়ে আমাদের কথা মত চলুক। আমরাই তার সুখের ঘর বেঁধে দেব।



কিন্তু মেয়ে যেন বলে, তোমরা বোকা মা-বাপ! তোমরা আমার উপযুক্ত পুরুষ চেনো না। তোমাদের থেকে আমার অভিজ্ঞতা বেশী। আমি নিজে নির্বাচন করেছি আমার উপযুক্ত বর। চোর হলেও সে আমার মনোচোর। মাতাল হলেও সে আমার প্রেমের মাতাল। হাড়ি হলেও সে আমার ভাতের হাঁড়ি! আমি কি আর তার পিছন ছাড়ি? মেয়ের স্নেহে অগাধ বিশ্বাসী হয়ে মা-বাপ মানতেই চায় না, তার ১৮ বছরের মেয়ে এত বড় কাজ করতে পারে। ১৮ বছর মা-বাপের স্নেহবাগে প্রতিপালিতা হওয়ার পর ক'দিনের পরিচয়ে যখন টা-টা দিয়ে একজন যুবকের হাত ধরে চলে যায়, তখন মা- বাপ তা বিশ্বাসই করতে পারে না। তাই মা-বাপ মেয়েকে নাবালিকা প্রমাণ করতে চায় এবং ঐ যুবকের নামে থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে। অনেক সময় ধরা পড়লে দারোগা মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন, 'তুমি অপহৃতা। তোমার মা-বাপ তোমাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছে।'

মেয়ে বলে, 'আমি নিজে ওর সাথে এসেছি। আমিই ওকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। আমি মা-বাপ চাই না! আমি যার সাথে এসেছি, তাকেই চাই!'

তাগূতী আইনে মা-বাপ অপমানিত হয়ে বাড়ি ফেরে, তবুও প্রেমের মহাশক্তিতে বিশ্বাস হয় না, তাই কখনো বলে, 'আমার মেয়ে ভাল। এর পশ্চাতে কোন চক্রান্ত কাজ করছে।' কেউ বলে, 'আমার মেয়েকে যাদু করা হয়েছে।' অথচ এ কথা জানে না যে, প্রেম হল মহাযাদু। অথবা জেনেও সমাজের কাছে নিজের দোষ কাটাবার জন্য তা বলে থাকে।

অন্য দিকে আর এক লজ্জাহীনা তার প্রেমে মুগ্ধ স্বামীকে পরোয়া করে না, পরোয়া করে না তার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে, পরোয়া করে না যে, সে কারো কুলবধূ! 'কোলের ছেলে জলে ফেলে যৌবন সাজায়' এমন নিষ্ঠুর রাক্ষসী মা।

বেহায়া বোনটি আমার! এত কিছু ঘটানোর পরেও তোমার লজ্জা হয় না! সমাজের লোক যখন চারিদিকে ছিঃ ছিঃ করে। তোমাকে যেন বলে, 'হাঁ ঢেমন! তোর লাজ কেমন?' তখন তোমার অবস্থা যেন বলে, 'লাজ থাকলে আবার হই ঢেমন?' তোমার মন গায়,

'কুল ভাঙ্গে তো ভেঙ্গে যাক, 
হোক কলঙ্ক যদি হয়,
কূল ভাঙ্গে না যে নদীর, 
সে নদী তো নদী নয়!'



তোমার তখন বুকের পাটা কত? মনেই হয় না তুমি কোন সাধারণ মেয়ে। তখন মনে হয়, তুমি যেন ছায়াছবির একজন অভিনেত্রী। থানা-পুলিশ, কোর্ট-কাছারি, রাত- অন্ধকার, নদী-জঙ্গল, মান-অপমান এমনকি আঘাত-প্রহার এ সব কিছুই ভয় কর না!

তোমার পলায়নরত আকার যেন বলে, 'পিয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া?' তুমি তখন সমাজের মানুষদের প্রতি অবজ্ঞা ও আফসোসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বল, 'দুনিয়া পিয়ার কী দুশমন হ্যায়। (দুনিয়াটাই ভালবাসার শত্রু)' কিন্তু যখন তুমি বাদুড়-চোষা তাল হয়ে যাবে, মিষ্টিহীন চুইংগাম হবে, যখন তোমাকে

ছুঁড়ে ফেলা হবে, তখন আবার করাঘাত হানবে সেই মা-মাপের দুয়ারে, যাদেরকে টা-টা দিয়ে, যাদের বুকে লাথি মেরে, যাদের মাথা নেড়া ক'রে ঘোল ঢেলে মুখে চুন-কালি দিয়ে চলে গিয়েছিলে। গত্যন্তরহীন মা-বাপ স্নেহপরবশ হয়ে আবার তোমাকে ঘরে ঠাঁই দেয়। তোমার নতুন সংসার গড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন তুমি দাগী, সেকেন্ডহ্যান্ড, পতিতা। আর 'মানুষ সেই পুরুষকে ভালবাসে, যার ভবিষ্যৎ আছে এবং সেই নারীকে ভালবাসে, যার অতীত আছে।' তোমার অতীত তুমি নষ্ট ক'রে ফেলেছ, এখন তোমাকে 'কানা বেগুনের, ডোগলা খদ্দের' ছাড়া কে উদ্ধার করবে?

পক্ষান্তরে সেই যুবতী, যে প্রেমে সফল হয়ে তার প্রেমিককে লাভ করতে পারেনি, সে যখন অন্যের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-সংসার করতে আসবে, তখন তার পরিপূর্ণ মন কি আর স্বামীর জন্য উজাড় করতে পারবে? তখন মনে পড়বে প্রেমিক নাগরের কথা।

'তার পরে কি আমার মত
দেখলে কাকেও বাসবে ভালো,
মুখখানি যার তোমার বুকে
আমার সুখের জ্বালবে আলো?'

নিশ্চয় না। সুতরাং দেহ থাকবে স্বামীর কাছে, আর মন থাকবে প্রেমিকের মণিকোঠায়। টিয়া থাকবে সিংহাসনে, কিন্তু মন থাকবে কেয়া বনে।

তুমি হয়তো বলবে, এতক্ষণ আপনি যে 'রামায়ণ' আর মহাভারতের গল্প আমায় শুনালেন, আমার তা হবে না। আমার প্রেম সফল প্রেম হবে। আমাদের প্রেম অনির্বাণ হবে।

কিন্তু চপলা বোনটি আমার! এর গ্যারান্টি তোমাকে কে দিয়েছে? প্রেমের উপন্যাস পড়ে অথবা ফিল্ম দেখে ধারণা করেছ তুমিও ঐ নায়িকার মত সফল হবে। বাজে ধারণা। কল্পনা ও বাস্তব এক নয়। স্বপ্ন ও জাগরণ এক নয়। উপন্যাসে লেখক এবং ফিল্মে ডাইরেক্টর কায়দা ক'রে হিরো-হিরোইনকে শত বাধার মাঝে সফল ক'রে নেয়। কিন্তু তোমাদেরকে সফল করবে কে?

বলবে, 'ইউরোপের লোকেরা বেশ সুখে আছে, অথচ তাদের প্রায় সবারই প্রেম- ভালবাসায় ইয়ে ক'রে বিয়ে।' এটিও তোমার অনভিজ্ঞ ধারণাপ্রসূত কথা। তাদের প্রেম-ঘটিত খুন, আত্মহত্যা ও তালাকের খবর নাও, তারপর তাদের সুখের কথা ভেবো। তারকা দূর থেকেই আকাশে উজ্জ্বল লাগে। কিন্তু তার পশ্চাতে আছে ঘনঘটা অন্ধকার।

অতএব কি দরকার বোনটি! এমন ইঁদুর মারা কল থেকে দূরে থাকা ভাল নয় কি? পক্ষান্তরে যদি তুমি কারো ফাঁদে পড়েই থাক, তাহলে জ্ঞানীদের নিম্নের উপদেশ গ্রহণ করঃ-

১। যেহেতু তা অবৈধ প্রণয়। সেহেতু তুমি সবার উপর আল্লাহকে ভয় কর। অতঃপর ভয় কর মুসলিম সমাজকে। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ সহজ করে দেন। সংকটে বাঁচার উপায় বের করে দেন।
২। লজ্জাশীলতা বজায় রাখ। লজ্জার মাথা খেয়ো না।
৩। ধৈর্য ধারণ কর। সবুরে মেওয়া ফলে।

৪। শয়তানের অনুসরণ করো না। কারণ, শয়তান অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় এবং সৎ কাজে বাধা সৃষ্টি করে।


৫। দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে মনের মানসপটে কোন 'হ্যান্ডসাম' যুবকের ছবি অঙ্কিত হয়ে গেলে তার মন্দ দিকটা মনে করো। ভেবো, সে হয়তো আচমকা সুন্দর, আসলে সুন্দর নয়। নতুবা ওর হয়তো কোন অসুখ আছে। নতুবা ওর হয়তো বংশ ভালো নয়। নতুবা ওর হয়তো ঘর-বাড়ি ভালো নয়। নতুবা ওর হয়তো কোন উপার্জন নেই। নতুবা হয়তো ওর সাথে বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। নতুবা ও হয়তো তোমাকে পছন্দ করবে না। নতুবা ওর অতীত হয়তো কলঙ্কিত ইত্যাদি। আঙ্গুর ফল নাগালের মধ্যে না পেলে টক মনে করলে মনে সবুর হয়।

৬। জীবনের প্রথম চাওয়াতে ভালো বলে যাকে তুমি ভালবেসে মনের কাছে পেয়েছ, সেই তোমাকে ভালবাসবে এবং সে ছাড়া তোমাকে আর কেউ ভালবাসবে না বা আর কেউ তোমার কদর করবে না এমন ধারণা ভুল।
 'ভালো কে? 
যার মনে লাগে যে।'

তোমার ঐ মজনুর চেয়ে আরো ভালো মজনু পেতে পার। সুতরাং বিবাহের মাধ্যমেও প্রেমময় ও গুণবান সঙ্গী পাবে। তবে অবৈধভাবে ওর পেছনে কেন?

৭। প্রেম-পাগলিনী লায়লা! আজ যাকে তুমি ভালবাসছ, যে তোমাকে তার চোখের ইশারায় প্রেমের জালে আবদ্ধ করেছে, আজ যাকে তুমি তোমার জানের জান মনে করছ, কাল হয়তো সে তোমার কোন অসুখ দেখে, কোন ব্যবহার দেখে অথবা তোমার চাইতে ভালো আর কোন নায়িকার ইশারা দেখে, তোমাকে 'টা-টা' দিতে পারে। যে তোমার ইশারায় তার নিজের মা-বাপ, বংশ, মান-সম্ভ্রম প্রভৃতি অমান্য ও পদদলিত করে তোমার কাছে এসে যেতে পারে, সে যে তোমার ও তোমার মা-বাপের মান রাখবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? আর এ কথাও জেনে

রেখো যে, হয়তো তোমার মিষ্টতা চুসে নিয়ে চুইংগামের মত তোমাকে ফেলে দিতে পারে। সুতরাং এমন প্রেমের পুতুলের জন্য এত কুরবানী কিসের?

৮। কোন যুবকের রূপ দেখেই ধোকা খেয়ো না বোনটি! প্রেমিকার চোখে প্রেমিকই হল একমাত্র বিশ্বসুন্দর। কিন্তু সে তো আবেগের খেয়াল, বাস্তব নয়। তাছাড়া দ্বীন ও চরিত্র না দেখে কেবল রূপে মজে গেলে সংসার যে সুখের হবে, তা ভেবো না। কারণ, চক্চক্ করলেই সোনা হয় না। কাঁচ না কাঞ্চন তা যাচাই-বাছাই করা জ্ঞানী মানুষের কাজ। পরন্ত ফুলের সৌরভ ও রূপের গৌরব ক'দিনের জন্য? তাই অন্তরের সৌন্দর্য দেখা উচিত। আর সত্যিকারের সে সৌন্দর্য কপালের দু'টি চোখ দিয়ে নয়, বরং মন ও জ্ঞানের গভীর দৃষ্টি দিয়েই দেখা সম্ভব। অতএব সেই মন যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পার, তাহলে তুমি 'ইন্না লিল্লাহ--' পড়। আর জেনে রেখো যে, এমন সৌন্দর্য ও দ্বীন ও গুণের অধিকারী যুবক কোন দিন লুকোচুরি করে তোমার সাথে প্রেম করতে আসবে না।
 ৯। তুমি যাকে ভালবেসে ফেলেছ, সে ধনীর ছেলে নয় তো? অর্থাৎ, কোন প্রকারে সে তোমার জীবনে এসে গেলে, তুমি তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার চাহিদা পূর্ণ ক'রে চলতে পারবে তো? যদি তা না হয়, তাহলে শোন, 

'বড় গাছের তলায় বাস,
 ডাল ভাঙলেই সর্বনাশ।' 
'বড়র পিরীত বালির বাঁধ, 
ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণে চাঁদ।' 

সুতরাং প্রেমের নামে নিজের জীবনে বঞ্চনা ও অভিশাপ ডেকে এনো না। আবার কাউকে শুধু ভালো লাগলেই হয় না। তুমি তার বা তাদের পরিবেশ ও বাড়ির উপযুক্ত কি না, তাও ভেবে দেখ। নচেৎ 'বাওনের চাঁদ চাওয়া'র মত ব্যাপার হলে শুধু শুধু মনে কষ্ট এনে লাভ কি? তাছাড়া তুমি যদি তোমার রূপ, শিক্ষা, চরিত্র, ব্যবহার ও সাংসারিক যোগ্যতায় তাদেরকে মুগ্ধ করতে পার, তাহলে গরীব হলেও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে। আর তুমিই হবে তাদের যোগ্য বউ। পক্ষান্তরে লুকোচুরিতে চরিত্র নষ্ট করে থাকলে, তুমি তাদের চোখে খারাপ হয়ে যাবে। শেষে আর বউও হতে পারবে না।

১০। অবৈধ প্রণয় থেকে বাঁচতে নির্জনতা ত্যাগ কর। কারণ, নির্জনতায় ঐ শ্রেণীর কুবাসনা মনে স্থান পায় বেশী। অতএব সকল অসৎ-চরিত্রের সখী ও আত্মীয় মহিলা থেকে দূরে থেকে সৎ-চরিত্রের সখী গ্রহণ করে বিভিন্ন সৎ আলোচনায় প্রবৃত্ত হও। আল্লাহর যিকরে মনোযোগ দাও। বিভিন্ন ফলপ্রসূ বই-পুস্তক পাঠ কর। সম্ভব হলে সে জায়গা একেবারে বর্জন কর, যে জায়গায় পা রাখলে তার সাথে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যে তোমার মন চুরি করে রেখেছে। টেলিফোন এলে তার কথার উত্তর দিও না।

পত্র এলে জবাব দিও না। তোমার প্রণয়ের ব্যাপারে তাকে আশকারা দিও না। এমন ব্যবহার তাকে প্রদর্শন করো না, যার ফলে সে তোমার প্রতি আশা ও ভরসা ক'রে ফেলতে পারে। বরং পারলে তাকে নসীহত করো এবং এমন অসৎ উপায় বর্জন করতে উপদেশ দিও। তাতে ফল না হলে পরিশেষে ধমক দিয়েও তাকে বিদায় দিও।

একা না ঘুমিয়ে কোন আত্মীয় মহিলা বা হিতাকাঙ্কিনী পুণ্যময়ী সখীর কাছে ঘুমাবার চেষ্টা কর। রাত্রে ঘুম না এলে যত কুরআন ও শয়নকালের দুআ মুখস্থ আছে শুয়ে শুয়ে সব পড়ে শেষ করার চেষ্টা কর। 'সুবহানাল্লাহ' ৩৩ বার, 'আল্লহামদু লিল্লাহ' ৩৩ বার এবং 'আল্লাহু আকবার' ৩৪ বার পাঠ কর। তার পরেও ঘুম না এলে, ঘুম না হলে তোমার কোন ক্ষতি হবে-এমন ভেবো না। অথবা রাত পার হয়ে যাচ্ছে বলে মনে মনে আক্ষেপ করো না। এমন ভাবলে ও করলে আরো ঘুম আসতে চাইবে না। অতঃপর একান্ত ঘুম যদি নাই আসে, তাহলে বিছানা ছেড়ে উঠে ওযু করে নামায পড়তে শুরু কর। এর মাঝে ঘুমের আবেশ পেলে শুয়ে পড়। ঘুম না এলে বিছানায় উল্টাপাল্টা করলে অন্যান্য দুআ পড়ার পর এই দুআ পড়,

'লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ওয়া-হিদুল কাহহার, রাব্বুস্ সামা-ওয়াতি অআরযি অমা বাইনাহুমাল আযীযুল গাফফার।'

আর হ্যাঁ। ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করে ঘুমাবার চেষ্টা করো না। কারণ, ঘুমের পর শরীরে যে তরোতাজা ভাব ও মনে স্ফূর্তি আসে, সে ঘুমের পর তা আসে না। বরং ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর ফলে শরীরে এক ধরনের ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূত হতে থাকে।

১১। গান-বাজনা শোনা থেকে দূরে থাক। কারণ, গানে যুব-মন প্রশান্তি পায় না; বরং মনের আগুনকে দ্বিগুণ করে জ্বালিয়ে তোলে। গানের নাগিন বাঁশীতে প্রেমের সাপ নেচে ওঠে। গানের ধুনার গন্ধে প্রেমের মনসা জেগে ওঠে। সুতরাং প্রেমময় মনের দুর্বলতা দূর করতে অধিকাধিক মরণকে স্মরণ কর। উলামাদের ওয়ায-মাহফিলে উপস্থিত হও, তাদের বক্তৃতার ক্যাসেট শোন। কুরআন তেলাঅত কর।

১২। অভিনয় দেখা পরিহার কর। কারণ, ফিল্ম-যাত্রা-নাটক-থিয়েটার ইত্যাদি তো প্রেমের আগুনে পেট্রোল ঢালে। আর এ সব এমন জিনিস যে, তাতে থাকে অতিরঞ্জিত প্রেম। অবাস্তব কাল্পনিক প্রেম-কাহিনী ও রোমান্টিক ঘটনাবলী। অতএব সে অভিনয় দেখে তুমি ভাবতে পার যে, তুমিও ঐ হিরোইনের মত প্রেমিকা হতে পারবে, অথবা ঐ হিরোর মত তুমিও একজন প্রেমিক পাবে, অথবা ঐ অভিনীত প্রেম তোমার বাস্তব-জীবনেও ঘটবে। অথচ সে ধারণা তোমার ভুল।

আগেও বলেছি, প্রেম-জীবনের ঝুঁকি ও যুদ্ধে ফিল্মের ডিরেক্টর (পরিচালক) তো হিরো-হিরোইনকে বড় আসানীর সাথে বাঁচিয়ে নেয়। কিন্তু তোমাদেরকে বাঁচাবে কে? পক্ষান্তরে ঐ সকল প্রেক্ষাগৃহ বা রঙ্গমঞ্চের ধারে-পাশে উপস্থিত হয়ে চিত্তবিনোদন করার মত গুণ আল্লাহর বান্দাদের নয়; বরং প্রবৃত্তির গোলামদের।

১৪। যাকে ভালবেসে ফেলেছ, তাকে কখনো একা নির্জনে কাছে পাওয়ার আশা ও চেষ্টা করো না। ব্যভিচার থেকে দূরে থাকলেও দর্শন ও আলাপনকে ক্ষতিকর নয় বলে অবজ্ঞা করো না। জেনে রেখো বোনটি! যারা মহা অগ্নিকান্ডকে ভয় করে তাদের উচিত, আগুনের ছোট্ট অঙ্গার টুকরাকেও ভয় করা। উচিত নয় ছোট্ট এমন কিছুকে অবজ্ঞা করা, যা হল বড় কিছু ঘটে যাওয়ার ভূমিকা। ক্ষুদ্র বটের বীজ পাখীর বিষ্ঠার সাথে বের হয়েও কত বিশাল বটবৃক্ষ সৃষ্টি করে। ছোট্ট মশা নমরুদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে; ম্যালারিয়া এনে জীবননাশ করতে পারে। ছোট ছোট পাখীদল হস্তিবাহিনী সহ আবরাহাকে ধ্বংস করেছে। একটি ছোট্ট ছিদ্র একটি বিশাল পানি-জাহাজকে সমুদ্র- তলে ডুবিয়ে দিতে পারে। বিছার কামড়ে সাপ মারা যেতে পারে। সামান্য বিষে মানুষ মারা যায়। ক্ষুদ্র হুদহুদ পাখী বিলকীস রাণীর রাজত্ব ধ্বংস করেছে। একটি ছোট্ট ইঁদুর কত শত শহর ভাসিয়ে দিতে পারে বন্যা এনে। আর এ কথাও শুনে থাকবে যে, হাতির কানে নগণ্য পিঁপড়া প্রবেশ করলে অনেক সময় হাতি তার কারণেই মারা যায়!

'প্রত্যেক সামান্য ত্রুটি, ক্ষুদ্র অপরাধ,
ক্রমে টানে পাপ পথে, ঘটায় প্রমাদ।'

১৫। প্রেমিকা বোনটি আমার! প্রেমে পড়ে মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। চোখ, কান, জিভ, হাত, পা এবং অনেক ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের ব্যভিচার সংঘটিত করে অবৈধ পিরীত। প্রেমিকের দিকে হেঁটে যাওয়া হল পায়ের ব্যভিচার। অতএব প্রেমিকের প্রতি যে পথে ও পায়ে তুমি চলতে কুণ্ঠিতা ও লজ্জিতা নও, সেই পথের উপর তোমার পায়ের নিশানা ও দাগকে কোন দিন ভয় করেছ কি? ভেবেছ কি যে, তোমার ছেড়ে যাওয়া প্রত্যেক নিশানা সযত্নে হিফাযত করে রাখা হচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেন, "আমিই মৃতকে জীবিত করি এবং লিখে রাখি যা ওরা অগ্রে পাঠায় ও পশ্চাতে রেখে যায়। আমি প্রত্যেক জিনিসই স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।” (সূরা ইয়াসীন ১২ আয়াত)

অবৈধ প্রিয়তমের সাথে খোশালাপ হল জিভের ব্যভিচার। গোপন প্রিয়ের সাথে প্রেম-জীবনের সুমিষ্ট কথার রসালাপ তথা মিলনের স্বাদ বড় তৃপ্তিকর। কিন্তু বোনটি আমার! এমন সুখ তো ক্ষণিকের জন্য। তাছাড়া এমন সুখ ও স্বাদের কি
মূল্য থাকতে পারে, যার পরবর্তীকালে অপেক্ষা করছে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি ও দুঃখ। যে জিভ নিয়ে তুমি তোমার প্রণয়ীর সাথে কথা বল, সে জিভের সকল কথা রেকর্ড ক'রে রাখা হচ্ছে, তা তুমি ভেবে দেখেছ কি? মহান সৃষ্টিকর্তা বলেন, “মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তাদের নিকটই আছে।” (সূরা ক্বাফ ৫০ আয়াত) হয়তো বা তোমার ঐ প্রেমিকও রেকর্ড ক'রে রাখছে, তোমাকে সময়ে ফাঁসানোর জন্য।

প্রেম-পাগলী বোনটি আমার! প্রেমে পড়ে তুমি প্রেমিকের সাথে মিলে যে পাপ করছ, সে পাপ কি ছোট ভেবেছ? ভেবে দেখ, হয়তো তোমাদের মাঝে এমন পাপও ঘটে যেতে পারে, যার পার্থিব শাস্তি হল একশত কশাঘাত, নচেৎ প্রস্তরাঘাতে মৃত্যু। কিন্তু দুনিয়াতে এ শাস্তি থেকে কোন রকমে বেঁচে গেলেও আখেরাতে আছে জ্বলন্ত আগুনের চুল্লী। অতএব 'যে পুকুরের পানি খাব না, সে পুকুরের পাড় দিয়েও যাব না' -এটাই আদর্শ যুবতীর দৃঢ়সংকল্প হওয়া উচিত নয় কি?

ভেবেছ কি যে, তুমি তোমার ভালবাসার সাথে যে অবৈধ প্রেমকেলি, প্রমোদ-বিহার করছ, তা ভিডিও-রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। প্রীতির স্মৃতি রাখতে গিয়ে অনেক সময় যে ছবি তোমরা অবৈধ ও অশ্লীলভাবে তুলে রাখছ, তা একদিন ফাঁস হয়ে যাবে। এ সব কিছুই মানুষের চোখে ফাঁকি দিয়ে করলেও কাল কিয়ামতে তুমি স্বচক্ষে দেখতে পাবে। "যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে তা-ও দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৭-৮ আয়াত) এবং

তার যথার্থ প্রতিদানও পাবে। প্রেম-সুখিনী বোনটি আমার! যে মাটির উপর তুমি ঐ অশ্লীলতা প্রেমের নামে করছ, সেই মাটি তোমার গোপন ভেদ গ্রামোফোন রেকর্ডের মত রেকর্ড করে রাখছে। কাল কিয়ামতে সে তা প্রকাশ করে দেবে। পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। (ঐ ৪ আয়াত)

পিরীত নেশাগ্রস্ত বোনটি আমার! তুমি হয়তো তোমার ঐ প্রেমকেলিতে মানুষকে ভয় করছ, মা-বাপকে লজ্জা করছ। কিন্তু সদাজাগ্রত সেই সর্বস্রষ্টাকে লজ্জা ও ভয় করছ কি? যে স্রষ্টা তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহ তোমার দেহ সৃষ্টি৭ করেছেন এবং তাঁর তৈরী দেহকে তাঁরই অবাধ্যাচরণে ব্যবহার করছ।


গোপন-প্রেমের বোনটি আমার! ভালবাসার নামে গোপনে পিত্রালয় থেকে বের হয়ে গিয়ে কোন জায়গায় কোন মুন্সীকে ৫০/১০০ টাকা দিয়ে তোমার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে পড়িয়ে নিয়ে প্রেমিকের ঘরের বউ হয়ে গেলে, সে যে তোমার জন্য হালাল হবে না, তা তুমি জান কি? মহানবী বলেন, "যে নারী তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই নিজে নিজে বিবাহ করে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল।” (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, মিশকাত ৩ ১৩১ নং) অর্থাৎ, ঐ চোর স্বামী নিয়ে সংসার করলে চির জীবন তোমাদের ব্যভিচার করা হবে। ১৬। মন উতলা বোনটি আমার! মানুষের মন হল ফাঁকা ময়দানে পড়ে থাকা এক টুকরা হাল্কা পালকের মত। বাতাসের সামান্য দোলায় সে মন দুলতে থাকে, হিলতে থাকে, ছুটতে থাকে। মন হল পরিবর্তনশীল। যে মন কখনো শ্যাম চায়, কখনো কুল চায়। সে মন থাকে আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝে। তিনি মানুষের মন ঘুরিয়ে ও ফিরিয়ে থাকেন। অতএব এ বলেও দুআ করো তাঁর কাছে,

‎‫يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.‬‎

অর্থাৎ, হে মনের গতি পরিবর্তনকারী! আমার মনকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ। পরিশেষে বলি, ভালবাসা কর স্বামীর সাথে। ভালবাসার ডালি খালি ক'রে দাও তার কাছে। আর জেনে রেখো, 'প্রকৃতিগত ভালবাসাই একমাত্র ভালবাসা, যা মানসিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতারিত করে না।'




Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp