▶️ হজরত মুসা (আঃ) এবং ফিরআউনের গল্প।🌹

 


🌹 হজরত মুসা (আঃ) এবং ফিরআউনের গল্প 🌹

হজরত মুসা (আঃ)-এর জীবন ইসলামের অন্যতম প্রভাবশালী কাহিনী। এই গল্পের মধ্যে আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস, অত্যাচার থেকে মুক্তি এবং ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। 


**ফিরআউনের অত্যাচার**

মুসা (আঃ)-এর সময় মিসরের রাজা ছিলেন ফিরআউন, যিনি ছিলেন এক স্বেচ্ছাচারী ও অত্যাচারী শাসক। তিনি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করতেন এবং তার প্রজাদের উপর চরম জুলুম করতেন, বিশেষত বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের লোকদের। বনি ইসরাইলের ওপর কঠিন শ্রম চাপিয়ে দেওয়া হতো এবং তাদের সাথে দাসের মতো আচরণ করা হতো। 

ফিরআউন শুনেছিলেন যে, বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের একজন ছেলে শিশু তার রাজত্ব ধ্বংস করবে। তাই তিনি আদেশ দেন যে, বনি ইসরাইলের নবজাতক ছেলে শিশুদের হত্যা করা হবে। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা অন্যরকম ছিল। মুসা (আঃ)-এর জন্ম হলে তার মা আল্লাহর আদেশ অনুসারে তাকে একটি ঝুড়িতে রেখে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ফিরআউনের স্ত্রী সেই ঝুড়িটি পান এবং মুসা (আঃ)-কে নিয়ে নিজ সন্তানের মতো বড় করে তোলেন। 


**আল্লাহর নির্দেশে নবুওয়াত এবং মিশর থেকে মুক্তি**


যখন মুসা (আঃ) বড় হলেন, তখন আল্লাহ তাকে নবুওয়াত দান করেন এবং তাকে আদেশ করেন যে, তিনি যেন ফিরআউনকে আল্লাহর প্রতি ইমান আনতে এবং তার অত্যাচার বন্ধ করতে বলেন। মুসা (আঃ) আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য ফিরআউনের কাছে গিয়ে তাকে দাওয়াত দিলেন এবং তাকে সতর্ক করলেন যে, যদি তিনি আল্লাহর পথে না আসেন, তবে তার জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে। 


ফিরআউন তা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল এবং মুসা (আঃ)-কে অস্বীকার করল। তিনি তার জাদুকরদের ডেকে নিয়ে আসেন মুসা (আঃ)-এর দেখানো আল্লাহর নিদর্শনগুলোর বিরুদ্ধে মায়াবী প্রতিযোগিতা করার জন্য। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে মুসা (আঃ)-এর লাঠি এক বিশাল সাপ হয়ে সব জাদুকরদের মায়াকে গ্রাস করল। এ দেখে ফিরআউনের জাদুকররাও ইমান আনতে বাধ্য হল এবং তারা মুসা (আঃ)-এর সত্যতা গ্রহণ করল। কিন্তু ফিরআউন তার অবস্থান থেকে একটুও নড়ল না এবং অত্যাচার অব্যাহত রাখল।


আল্লাহ মুসা (আঃ)-কে আদেশ করলেন, যেন তিনি বনি ইসরাইলদের নিয়ে মিশর ত্যাগ করেন। মুসা (আঃ) তার অনুসারীদের নিয়ে মিশর ত্যাগ করলেন। কিন্তু ফিরআউন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদের ধাওয়া করল। মুসা (আঃ) এবং তার অনুসারীরা যখন লোহিত সাগরের তীরে পৌঁছাল, তখন আল্লাহর কুদরতে সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়, এবং তারা নিরাপদে সমুদ্র পার হয়ে যায়। কিন্তু ফিরআউন তার বাহিনী নিয়ে সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করলে আল্লাহ সমুদ্রকে আবার একত্রিত করে দেন, ফলে ফিরআউন এবং তার বাহিনী ডুবে যায়।


**গল্পের শিক্ষা**

হজরত মুসা (আঃ)-এর জীবনের এই গল্প আমাদের অনেক কিছু শিখায়। প্রথমত, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা রাখার শিক্ষা পাই। মুসা (আঃ) অত্যাচারের মুখেও কখনো আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস হারাননি। দ্বিতীয়ত, এই গল্পে আল্লাহর কুদরত এবং অত্যাচারীদের জন্য শাস্তির উদাহরণ রয়েছে। ফিরআউন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আল্লাহর শক্তি তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। 


এছাড়া এই গল্প আমাদের ধৈর্য এবং দৃঢ়তার শিক্ষাও দেয়। মুসা (আঃ) আল্লাহর আদেশ পালনে কখনো ভয় পাননি এবং সব সময় ধৈর্য ধরে কাজ করেছেন, যার ফলে আল্লাহ তাকে এবং তার অনুসারীদের মুক্তি দিয়েছেন। 


**উপসংহার**

এই গল্প আমাদের জন্য একটি অনন্য শিক্ষা বহন করে যে, কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য ধৈর্য ও সাহসের প্রয়োজন। আল্লাহর পথেই প্রকৃত মুক্তি এবং কল্যাণ রয়েছে।





Post a Comment

0 Comments

শিয়া সুন্নিদের হাদিস কতগুলো

A touching story of an oppressed woman
Chat with us on WhatsApp